আমরা এই সরকারকে ব্যর্থ হতে দিতে চাই না: মির্জা ফখরুল

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা ২৪.কম, সাভার (ঢাকা)
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমরা সরকারের সব বিষয়ে সমর্থন করি না, তাকে আমরা ব্যর্থও হতে দিতে চাই না। আমরা চাই, এই সরকারই যেনো অবশ্যই এই নির্বাচনকে সম্পন্ন করতে পারে। তাকে আমরা ব্যর্থ হতে দিতে চাই না। সহযোগিতা করতে চাই।

সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে ধামরাইয়ের যাত্রাবাড়ী মাঠে ঢাকা জেলা বিএনপি আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দিয়ে বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি সহনীয় পর্যায়ে রাখা, অবনতিশীল আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি, দ্রুত গণতান্ত্রিক যাত্রাপথে উত্তরণের জন্য নির্বাচনী রোড ম্যাপ ঘোষণা এবং রাষ্ট্রের কথিত ফ্যাসিবাদের নানা চক্রান্তের অপচেষ্টা মোকাবেলাসহ জনদাবির পরিপ্রেক্ষিতে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশকে কেন্দ্র করে দুপুরের আগ থেকেই নেতাকর্মীদের ভিড়ে মুখরিত হয়ে ওঠে সমাবেশ স্থল।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আজকে যে কোনো বিষয়ে মানুষ রাস্তায় নামে, এটা দায়িত্বশীলতার কাজ নয়। ধৈর্য ধরেন, একটা ফ্যাসিস্টকে সরানো হয়েছে। সরকার আসছে, আমরা সরকারের সব বিষয়ে সমর্থন করি না, তাকে আমরা কিন্তু ব্যর্থ হতে দিতে চাই না। আমরা চাই, এই সরকারই, যেনো অবশ্যই এই নির্বাচনকে সম্পন্ন করতে পারে। তাকে আমরা ব্যর্থ হতে দিতে চাই না। সহযোগিতা করতে চাই। প্রথম থেকে বলেছি, সহযোগিতা করেছি।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘আজকে সংস্কারের যতগুলো প্রস্তাব এসেছে, আমরা দেখছি, সেগুলো নিয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। একইসঙ্গে সবাইকে মনে রাখতে হবে, আমাদের এই সুযোগ যে আমরা পেয়েছি, এটাকে যেন আমরা হেলায় না হারাই, আমাদের শত্রুরা বিভিন্ন টোপ ফেলছে, ট্র্যাপ করছে, যাতে আমরা উত্তেজিত হয়ে যাই। আইনশৃঙ্খলা নষ্ট করি, নিজে হাতে সব তুলে নেই। কিন্তু আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া যাবে না। সবাইকে সহযোগিতা করে দেশকে নির্বাচনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের প্রতিনিধি নির্বাচিত করতে পারি। সেদিকে যাতে সবাই এগিয়ে যেতে পারি।’

আওয়ামী লীগ সরকার ও শেখ হাসিনার সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘হাসিনা সরকার, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার অত্যন্ত সুপরিকল্পিত ভাবে এই দেশ থেকে রাজনীতিকে চিরতরে নির্বাসিত করার জন্য, শুধু তার দল থাকবে, আর কোনো দল থাকবে না। এইভাবে পরিকল্পিতভাবে সে এগিয়ে যাচ্ছিল। রাষ্ট্রের সব ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে, সব ইন্সটিটিউশন ধ্বংস করেছে, সবচেয়ে আগে ধ্বংস করেছে নির্বাচন ব্যবস্থা। ভোট দিতে যেতে পারবে না, ভোট কেন্দ্রেই যেতে দেবে না। ২০১৪ সালে ভোট হয নাই। ২০১৪ সালে ১৫৪ জনকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করে সরকার ঘোষণা করেছে। ভোট কেন্দ্রগুলোতে কুত্তা ঘুরাঘুরি করেছে। শফিউল আলম প্রধান তখন বলেছিলেন, কুত্তা মার্কা নির্বাচন।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘২০১৮ সালে আমাদের সঙ্গে হাসিনা নিজে কথা বললেন, ওয়াদা করলেন, নির্বাচনে আসেন, আমরা সব সুযোগ সুবিধা দেব। নিরপেক্ষতা দেবো। নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে। আমরা গণতন্ত্রের স্বার্থে সেই নির্বাচনে গেলাম। কি দেখেছি নির্বাচনে, আমাদের প্রার্থীদের আগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কাউকে ক্যাম্পেইন করতে দিত না, প্রচার করতে দিত না। আগের রাতে সব ভোট সিল মেরে নিয়ে যেতো। নিশি রাতের ভোট। তারপর আরেকটা নির্বাচন করলো ৫ তারিখে। সেটা ডামি নির্বাচন। আওয়ামী লীগ প্রার্থী হবে, আবার আওয়ামী লীগ নেতারাই প্রতিপক্ষ হবে। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হবে। ভোটের তামাশা, গণতন্ত্রের তামাশা আমাদের দেখিয়েছে শেখ হাসিনা।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘কিছু দিন আগে চোখে পড়লো, ফ্যাসিস্ট হাসিনা কান্না করতে করতে বলছে, আমার বাবার বাড়িটা ৩২ নম্বরে আমরা দিয়েছিলাম, জাদুঘর করেছিলাম, সেটাকে পর্যন্ত ধুলায় মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে। কেনো কি আমার অপরাধ। অপরাধ? আপনি এটাই তো আপনি বুঝতে পারছেন না হাসিনা। আপনার কি অপরাধ? আপনি একটা জাতিকে ধ্বংসের চক্রান্ত করেছেন। আপনি একটা জাতির অধিকারকে ধ্বংস করেছেন। আপনি দেশকে বিক্রি করে দিয়েছেন।’

তিনি বলেন, ‘আপনার কপাল ভালো, ভাগ্য ভালো যে আপনাকে যে বা যারাই হোক, হেলিকপ্টারে করে পাঁচার করে দিয়েছে। তা না হলে আপনাকে খুজে পাওয়া যেত না। সেদিন সামরিক বাহিনী খুব ভালো একটা ভূমিকা পালন করেছে, তারা পরিষ্কার করে হাসিনাকে বলে দিয়েছিল, আপনার কাছে দুইটা অপশন আছে, দুইটা বিকল্প আছে। একটা হলো, জান নিয়ে কেটে পড়েন, তা নাহলে এই গণভবনে পাবলিক আপনাকে কি করবে, তা আমরা বলতে পারবো না। সেদিন লাখো লাখো মানুষ যখন চতুর্দিক থেকে সেই গণভবনে ছুটে গিয়েছিল, তখন কিন্তু হাসিনা পালিয়ে তার জীবন রক্ষা করেছে। তার দলের দিকে তাকায় নাই, নেতাকর্মীদের দিকে তাকায় নাই, দেশের দিকে তাকায় নাই। এই নেতার ওপরে কি মানুষের আস্থা থাকতে পারে।’

সমাবেশে এ সময় ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু আশফাকের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক নিপুণ রায়ের সঞ্চালনায় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক বেনুজীর আহমেদ টিটু, নজরুল ইসলাম আজাদ, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক ডা. দেওয়ান সালাউদ্দিন বাবু ও ধামরাই উপজেলা বিএনপির সভাপতি তমিজ উদ্দিন বিএনপির অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা।