ডলফিনসহ সৈকতের জীব-বৈচিত্র্য রক্ষার উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার

  • মুহিববুল্লাহ মুহিব, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, কক্সবাজার
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ভেসে আসছে ডলফিনের মৃতদেহ, ছবি: বার্তা২৪.কম

ভেসে আসছে ডলফিনের মৃতদেহ, ছবি: বার্তা২৪.কম

চলমান করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে সারাদেশের মতো অঘোষিত লকডাউনে অন্যতম পর্যটন নগরী কক্সবাজার। সমুদ্র সৈকতের চারদিকে এখন শুধুই নীরবতা। এমন নীরবতা বিরাজ করছে দেশের একমাত্র মেরিনড্রাইভ সড়কেও।

এ সুযোগে প্রকৃতি যেমন তার রূপ ফিরে পেয়েছে, তেমনি সমুদ্র তীরে এসেছে ডলফিন, কাছিম ও লাল কাঁকড়াসহ নানান জলজ প্রাণী। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই নির্মমভাবে হত্যার শিকার হয়েছে স্বপ্নের ডলফিন, একইসঙ্গে ভেসে আসতে থাকে কাছিমের মৃতদেহও। যা ভাবিয়ে তুলে পরিবেশ বিজ্ঞানী ও পরিবেশবাদীদের।

বিজ্ঞাপন
সৈকতে পড়ে আছে মৃত কাছিমের খোল

এ বিষয়ে দেশের মাল্টি মিডিয়া নিউজ পোর্টাল বার্তা২৪.কমসহ কয়েকটি সংবাদ মাধ্যমে ধারাবাহিক প্রতিবেদনে টনক নড়েছে সরকারের উচ্চ মহলের। এবার সৈকতের লাল কাঁকড়া, কচ্ছপ, ডলফিন, সাগরলতাসহ জীব-বৈচিত্র্য রক্ষার উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বিশেষ নির্দেশনায় যা বাস্তবায়ন করবে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক)।

আরও পড়ুন: নির্জন সৈকতে কাছিম, কাঁকড়া ও শামুকের রাজত্ব

বিজ্ঞাপন

কউক সূত্রে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার (৭ এপ্রিল) সমুদ্র সৈকতের জীবন বৈচিত্র্য রক্ষায় জরুরি সমন্বয় সভা ডেকেছিলেন কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান লে. কর্নেল (অব.) ফোরকান আহমেদ। সে সভায় জীব বৈচিত্র্য রক্ষার জন্য সি বিচে ওয়াটার বাইক বন্ধ, লাল কাঁকড়া সংরক্ষণের জন্য কবিতা চত্বর থেকে ডায়াবেটিক পয়েন্ট পর্যন্ত বেড়া দেওয়া, মাদারবনিয়া, উত্তর সোনারপাড়া এবং দরিয়ানগর এলাকায় কচ্ছপ প্রজনন জোন, ইনানী ও শুঁটকি পল্লীতে লাল কাঁকড়া উৎপাদন করে বিচে ছেড়ে দেওয়ার প্রকল্প গ্রহণসহ নানা প্রস্তাবনা দেওয়া হয়।

এছাড়া ৭০ হেক্টর জমিতে ৬০ হাজার ঝাউগাছ লাগানোর পরিকল্পনা ও বিজিবি রেস্ট হাউস থেকে কলাতলী বিচ পর্যন্ত সাগরলতা রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের প্রস্তাব দেওয়া হয়।

সমুদ্র তীরে একে একে ১২টি মৃতদেহ ভেসে আসে

সভায় কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, জেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনী, কক্সবাজার পৌরসভা, পরিবেশ অধিদফতর, টুরিস্ট পুলিশ, বন বিভাগ, পর্যটন করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট দফতর/সংস্থার কর্মকর্তারা এ প্রস্তাবনা দেন।

আরও পড়ুন: সাগরে নেই বর্জ্য, স্বচ্ছ জলে ডলফিন শো

সাগরের প্রকৃতি ও জলজ প্রাণী নিয়ে পদক্ষেপের বিষয়ে জানতে চাইলে কউক চেয়ারম্যান লে. কর্নেল (অব.) ফোরকান আহমদ বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারের লাল কাঁকড়া, কচ্ছপ, ডলফিন, সাগরলতা রক্ষার জন্য প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় থেকে বিশেষ নির্দেশনা এসেছে। উক্ত নির্দেশনা বাস্তবায়ন এবং কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে আমরা সমন্বয় করে কাজ করব।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিজিবি রেস্ট হাউস থেকে কলাতলী বিচ পর্যন্ত সাগর লতা রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। এছাড়া জীব বৈচিত্র্য রক্ষার জন্য দরিয়ানগর ও পেঁচার দ্বীপ এলাকায় বৃহৎ আকারে আলাদা জোনের পরিকল্পনার কাজ শুরু করব শিগগিরই।’

আরও পড়ুন: সৈকতে মৃত ডলফিন, দায় নিচ্ছে না কেউ!

ডলফিন হত্যার তদন্ত চলছে জানিয়ে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বার্তা ২৪.কম-কে বলেন, ‘ডলফিন হত্যায় কারা জড়িত, সে বিষয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। কিছুদিনের মধ্যে এ রহস্য বেরিয়ে আসবে। এছাড়া কয়েকটি এলাকাকে বিশেষ জোন ঘোষণা করে সমুদ্র সৈকতের জীব-বৈচিত্র্য রক্ষার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।’

ক’দিন আগেও সমৃুদ্রে ডলিফন ভাসতে দেখা যায়

তবে, পরিবেশ বিষয়ক সংগঠন এনভায়রনমেন্ট পিপলের প্রধান নির্বাহী রাশেদুল মজিদ বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘উদ্যোগের কথা যদি কথাতেই রয়ে যায়, তাহলে বিষয়টি ভিন্নদিকে মোড় নেবে। সরকারের পক্ষ থেকে যে নির্দেশনা এসেছে তার সুষ্ঠু বাস্তবায়ন চাই। প্রাণ প্রকৃতির উপর এমন আঘাত মেনে নেওয়া যায় না।’

উল্লেখ্য, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে বিভিন্ন পয়েন্টে ২৩ মার্চ (সোমবার) সকাল থেকে এক দল ডলফিন খেলা করতে দেখা যায়। কয়েকদিন ধরে দেখা গেলেও হঠাৎ কক্সবাজার উপকূলে একে একে ভেসে আসে ১২টি ডলফিনের মৃতদেহ। এসব মৃত ডলফিনের শরীরে দায়ের কুপ ও লাঠির আঘাতের চিহ্ন রয়েছে বলেও জানা গেছে। একই সঙ্গে পাওয়া গেছে ৪ কাছিমের মৃতদেহও। এসব হত্যার দায় নিতে চায় না জেলে থেকে শুরু করে কেউ।