উদাসীন গ্রামের মানুষ, বিকেল হলেই গণজমায়েত-আড্ডা
বাংলাদেশে করোনাভাইরাসবাংলাদেশে করোনায় আক্রান্তদের মিছিল দিন দিন বাড়ছে। পাশাপাশি মৃত্যুর হারও বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। করোনার সংক্রমণ রোধে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ ঘরে রাখতে কঠোর ভূমিকাও নিচ্ছে প্রশাসন। মাইকিং করে হাত ধোয়া, মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাভস পরা, ঘরের বাইরে না যাওয়াসহ বিভিন্ন নির্দেশনা মানার পরামর্শও দেওয়া হচ্ছে। শহরের গণ্ডিতে অনেকে এ নির্দেশনা মানলেও একেবারেই উল্টো চিত্র গ্রামগুলোতে। এসব ব্যাপারে পুরোপুরি উদাসীন গ্রামের মানুষেরা।
ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার কয়েকটি এলাকা কয়েকদিন পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মানুষ ঘরমুখী কিংবা নিজস্ব কাজে ব্যস্ত থাকলেও বিকেল হলে আর ঘরে বসে থাকছেন না। প্রতিদিন বিকেল হলেই বাজারগুলোতে হচ্ছে গণজমায়েত। দোকানপাটের সামনে, রাস্তার মোড়ে কিংবা মাঠে দলবেঁধে আড্ডায় মেতে থাকে অনেক যুবক। ঈদের ছুটির মতো একে অপরের সঙ্গে মেলামেশা, হাত মেলানো, গল্পগুজব চলে আগের মতোই। যারা ঢাকাফেরত, তারাও দোকানপাটে এসে আড্ডা আর গল্প করে সময় কাটান।
চা-স্টল বন্ধের নির্দেশনা থাকলেও শাটার লাগিয়ে দোকানের ভেতর চলে চা আড্ডা। অন্যান্য দোকানপাট খোলা রাখার সময় নির্ধারণ করা হলেও সেই নিয়ম মানার কোনো নামগন্ধই নেই। পুলিশ আসার খবর পেয়ে কিছু সময় দোকান বন্ধ করে ভেতরে বসে থাকেন দোকানিরা। মনে হয় এ যেন চোর-পুলিশ খেলা।
রোববার (৫ এপ্রিল) বিকেলে উপজেলার ভবানীপুর ইউনিয়নের কান্দানিয়া বাজারে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন স্থানে জটলা পাকিয়ে গাদাগাদি করে কেনাকাটায় ব্যস্ত রয়েছে শতশত মানুষ। সড়কে ভ্যান, সিএনজি কিংবা অটোরিকশায় গাদাগাদি করে যাত্রী নিয়ে যাতায়াত করা হচ্ছে। কিছু সংখ্যক মানুষের মুখে মাস্ক থাকলেও অধিকাংশের মুখেই তা নেই। আর যারা মাস্ক পড়েছেন তারা নাকি বাধ্য হয়ে পড়েছেন।
আইনুজ্জামান নামে এক ব্যক্তিকে মাস্ক পরার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, মাইক মাইরা কইছে মুখে মাস্ক পড়তে হইবো, তাইলে করোনা অইতনা, তাছাড়া পুলিশের ভয়ে বাজারে আসার সময় এইটা পইরা আহি।
হাট-বাজার বসা নিষিদ্ধ থাকলেও সেটিও মানছেন না কেউই। হাটে সবজি বিক্রি করতে আসা সুলতান মিয়া নামের এক কৃষক বলেন, ‘আমাদের ক্ষেতে সবজির আবাদ করেছি সেগুলোই হাটের দিন শুধু নিয়ে আসি।’ এসময় করোনার বিষয়ে জিজ্ঞেস করতেই মুচকি হাসি দিয়ে তার কাছে আসা ক্রেতাদের কাছে বিকিকিনি চালিয়ে নেওয়া শুরু করলেন।
এরই মধ্যে দেখা গেল বাজারে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে মাইক হাতে সচেতনতার বার্তা শুনাতে। বলতে লাগলেন, ‘আপনাদের বারবার বলা হলেও আপনারা নিয়ম মানছেন না, প্রশাসন যদি কোন ব্যবস্থা নেয় তাহলে আমার কিছু করার থাকবে না।’ কে শুনে কার কথা। তিনি তার মত বাজারের এ মাথা থেকে ও মাথা মাইকিং করে গেলেন আর ওদিকে বাজার যেমন চলছিল তেমনই চলতে লাগলো।
গ্রামে সার্বিক পরিস্থিতি ও মানুষের সচেতনতার বিষয়ে প্রশ্ন করা হয় ভবানীপুর ইউপি চেয়ারম্যান শাহীনূর মল্লিক জীবনকে। তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘আমরা সার্বক্ষণিক মানুষকে বোঝাচ্ছি। সামাজিক দূরত্ব ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কথা বলছি। গ্রামের মানুষের এসব বিষয়ে গুরুত্বই নাই। মানুষকে ঘরে থাকতে মাইকিংও করা হয়েছে, যা ৫ শতাংশ মানুষও মানেন না। আসলে তারা করোনাও বুঝে না, লকডাউনও বুঝে না এবং নিজের নিরাপত্তাও বুঝে না। তাদের কথা একটাই আল্লাহ-ই রক্ষা করবো।’ তবে উদাসীন গ্রামবাসীকে ঘরে রাখতে প্রশাসনের বাড়তি নজরদারি এবং পুলিশ-সেনাবাহিনীর নিয়মিত টহল প্রয়োজন বলে মনে করেন এ জনপ্রতিনিধি।
সমাজ সচেতনরা বলছেন, গ্রামীণ জনপদে নিয়মিত এমন জনসমাগম এখনই নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে এর ফলাফল হবে ভয়ঙ্কর। তাই প্রশাসনকে তৃণমূল পর্যায়ে করোনা সংক্রমণ রোধে আরও সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে এবং প্রয়োজনে কঠোরও হতে হবে৷
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. মিজানুর রহমান বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘আমরা প্রতিটি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান ও মসজিদ কমিটির মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করার জন্য প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি। পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরাও নিয়মিত এলাকাগুলোতে যাচ্ছে। আমরা সব মাধ্যমেই চেষ্টা চালাচ্ছি। তবে প্রশাসনের দ্বারা সব কিছু সম্ভব না, এজন্য সবাইকে নিজ নিজ জায়গা থেকে কাজ করতে হবে।’