ঈদ যাত্রায় উত্তরবঙ্গগামী বাইপাইল-আবদুল্লাহপুর সড়কে ভোগান্তির আশঙ্কা

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা ২৪.কম, সাভার (ঢাকা)
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম


আসন্ন ঈদ যাত্রায় আশুলিয়ার ধউর থেকে বাইপাইল হয়ে ঢাকা ইপিজেড; এই ১৫ কিলোমিটার সড়কে যাত্রীদের ভোগান্তির আশঙ্কা করছেন পরিবহন সংশ্লিষ্টরা। ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ চলমান থাকায় সড়কটি এমনিতেই সংকীর্ণ। অপরদিকে বিভিন্ন স্থানে ভোগান্তি আরও বাড়াবে সড়কের খানাখন্দগুলো। স্বাভাবিক সময়ে এই সড়কে যানবাহন চলে ধীরগতিতে। আর তাই ঈদ যাত্রা ঘিরে বাড়তি পরিবহনের চাপ নিয়ে শঙ্কায় এই সড়ক ব্যবহারকারীরা।

বিজ্ঞাপন

আবদুল্লাহপুর-বাইপাইল এবং নবীনগর-চন্দ্রা সড়ক দুটি ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গে যাতায়াতের অন্যতম প্রধান সড়ক। প্রতিদিন এই সড়ক ব্যবহার করে দেশের উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের ২২ জেলার হাজার হাজার যানবাহন চলাচল করে। ঈদকে ঘিরে সড়কটিতে যানবাহনের সংখ্যা বেড়ে যায় কয়েকগুণ। বর্তমানে এই সড়কের ইপিজেড থেকে আশুলিয়া হয়ে রাজধানীর আবদুল্লাহপুর পর্যন্ত ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ চলমান রয়েছে। এতে সংকীর্ন হয়ে পড়েছে সড়কটি। স্বাভাবিক সময়েই এই সড়কে লেগে থাকে যানজট। আশঙ্কা রয়েছে ঈদ যাত্রায় এ পথটুকু পাড়ি দিতেই পেরিয়ে যাবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা।

উত্তরবঙ্গ থেকে ছেড়ে আসা নাদের পরিবহনের চালক মো. শফিক আহম্মেদ বলেন, ঈদের সময় তো বর্তমানের চেয়ে গাড়ি বেশি হবেই। তারপরেও আমরা যারা ড্রাইভার আছি আমাদের একটু সচেতন হতে হবে। যারা সড়কে যানজট নিরসনে দায়িত্বে থাকবে তাদের ও চালকদের সচেতন হতে হবে। অটোরিকশা নিয়ন্ত্রণ করলে, ট্রাফিক আইন মেনে চললে যানজট কমতে পারে।

বিজ্ঞাপন

উন্নয়ন কাজ ঘিরে সড়কের বিভিন্ন স্থানে সৃষ্টি হয়েছে খানাখন্দ। রয়েছে অটোরিক্সার দৌরাত্ম। ঈদ যাত্রার বাড়তি চাপে তাই ভোগান্তির সম্ভাবনা।

সড়কের বাইপাইল এলাকায় কথা হয় পণ্যবাহী পরিবহনের চালক নাজমুল হুদার সাথে। তিনি বলেন, নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের বাইপাইলের অবস্থা সেই খারাপ।যে খানা খন্দ, গাড়িই তো যাইতে পারে না। বড় বড় ট্রাক গুলি তো যাইতেই পারে না। এগুলো মেরামত যদি করতো যানজট একটু কমতো। এই বাইপেলেই যানজটে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকতে হয়। বর্তমানে ঈদের বাজার আসে নাই এখন ই এক ঘন্টা পার হয়ে যায় ,যখন পোশাক কারখানা ছুটি হবে লোকজনের চাপ বাড়বে তখন তো কত যানজট হইবো।

শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ায় ঈদের ছুটি শুরু হলে পোশাক শ্রমিকদের ঢল নামবে সড়কে। তাই সড়কে যাত্রীদের চাপ নিরসনে পোশাক কারখানাগুলো ধাপে ধাপে ছুটি দেওয়া এবং দুর্ঘটনা ও যানযট এড়াতে যাত্রী ও চালকদের আরও সচেতন হওয়ার আহবান সংশ্লিষ্টদের।

বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড সোয়েটার শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের আইন বিষয়ক সম্পাদক খাইরুল মামুন মিন্টু বলেন, আপনারা যানেন যে, প্রতিবছর আমরা দেখি যে গার্মেন্টস শিল্পগুলিতে একসাথে ছুটি হওয়ার কারণে অনেক ধরনের প্রতিবন্ধকতা, জ্যাম সৃষ্টি হয়। যার কারণে আমি গার্মেন্টস মালিকদের কে অনুরোধ জানাবো তারা যাতে পর্যায়ক্রমে গার্মেন্টস ছুটি দেয় যাতে, কোনো ধরনের হ-য-ব-র-ল পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয়। আর বিশেষ করে শ্রমিক ভাই-বোনদের কাছে অনুরোধ জানাবো তারা যে গ্রামে যাবেন, তারা যে ট্রাকে, বাসের ছাদে এসব এ না যান। নিরাপদে যাতে যেতে পারেন। আপনারা নিজেরাই এগুলো ঠিক করবেন।

তিনি আরও বলেন, চলাচলের সময়ে অপরিচিত লোকের কাছ থেকে খানা আপনারা যাতে না খান। আর পুলিশ ভাইদের অনুরোধ জানাবো যে, আপনারা জানেন যে ২৫ তারিখে ছুটি হবে গার্মেন্টস শিল্প কারখানায় তো সেই শিল্প অঞ্চল যাতে, নির্বিঘ্নে শ্রমিকরা যাতায়াত করতে পারে, সেজন্য আপনারা কঠোর উদ্যোগ নিবেন বলে আমি আশা করি

নিরাপদ সড়ক চাই ধামরাই থানা কমিটির সভাপতি নাহিদ মিয়া বলেন, ঈদকে কেন্দ্র করে একাধিক ট্রিপের আশায় চালকরা বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চালায়, এতে দূর্ঘটনার কবলে পরে। সড়ক উন্নয়নে যেহেতু ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ চলছে আমরা চাইবো যে এটাকে কিভাবে সুন্দর একটা সিস্টেমে আনা যায়। কারণ ঈদকে সামনে রেখে যানজট হয়, সেটাকে সুন্দর মনিটরিং এর মধ্যে আনতে হবে, যাতে যানযট মুক্ত ঈদ আমরা উপহার দিতে পারি।

পুলিশ বলছে সড়কে ঈদের বাড়তি চাপ সামাল দিতে নেয়া হচ্ছে বিশেষ প্রস্তুতি, ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে থাকবে সর্বোচ্চ তৎপরতা।

ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার মো.আনিসুজ্জামান বলেন, এই নির্মাণ কাজ তো এভোয়েড (এড়ানো) করা যাবে না, বন্ধ করা যাবে না। নির্মাণ কাজ তো আশুলিয়া বাসীর জন্য, ঢাকা বাসীর জন্য, শহরের মানুষের জন্য। মানুষ ঢাকায় আসে এবং ঢাকা থেকে মানুষ বাইরে যায়। নির্মাণ কাজ চলবে আমরা এই নির্মাণ কাজের মধ্যেই আমাদের ডেপ্লয়মেন্ট (মোতায়েন) দিয়ে মানুষের কষ্ট না হয়, আমরা গাড়ি গুলি ডাইভারশন বা সার্ভিস রোড দিয়ে গাড়ি গুলি পাড় করার জন্য, যারা নির্মাণ কাজে এনগেইজড তাদের কে অনুরোধ করেছি। মানুষজন যেতে পারবে নির্বিঘ্নে। অসুবিধা নাই আমাদের ম্যান পাওয়ার দিয়ে আমরা গাড়ি গুলি ইনকামিং এবং আউটগোয়িং টা দ্রুত পাড় করার ব্যবস্থা করছি। ঈদ পূর্ববর্তী ভালো ডেপ্লয়মেন্ট থাকবে আমাদের।

তিনি আরও বলেন, এসময় সড়কের অপরাধ নিয়ন্ত্রণের জন্য আমাদের প্রচুর ডেপ্লয়মেন্ট থাকবে, আমাদের পুলিশ কাজ করবে, আমাদের গোয়েন্দারা কাজ করবে এবং মানুষের নিরাপদ ঈদ যাত্রায় আমরা সর্বচ্চো চেষ্টা করবো।

শিল্পাঞ্চল সাভার-আশুলিয়ার বেশিরভাগ কারখানা আগামী ২৫ মার্চ ছুটি ঘোষনা করা হবে। ২৬ থেকেই ধাপে ধাপে ছুটি শুরু হবে কারখানাগুলো বলে জানিয়েছে একাধিক সূত্র। তখন থেকেই মূল চাপ শুরু হবে এ সড়কের। সকলের সম্মিলিত চেষ্টায় ঈদযাত্রা হবে ভোগান্তিহীন ও নিরাপদ, এমনটাই প্রত্যাশা ঈদে প্রাণের টানে বাড়িতে ছুটে যাওয়া মানুষগুলোর।