মালঞ্চ জামে মসজিদ: ইসলামিক স্থাপত্যের এক অপূর্ব নিদর্শন

  • সাকিব আল হাসান নাহিদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, জামালপুর
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবিঃ বার্তা২৪

ছবিঃ বার্তা২৪

ইসলাম শান্তি, শৃঙ্খলা ও সৌন্দর্যের ধর্ম। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের প্রত্যাশায় যুগে যুগে মুসলমানরা গড়ে তুলেছে অসংখ্য মসজিদ—যা শুধু ইবাদতের স্থান নয়, অনেক মসজিদ ইতিহাস, ঐতিহ্য আর অনন্য স্থাপত্যশৈলীর নিদর্শন হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তেমনই এক মনোমুগ্ধকর স্থাপত্য হলো জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার মালঞ্চ জামে মসজিদ।

বিজ্ঞাপন

জামালপুর শহর থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরে মালঞ্চ এলাকায় অবস্থিত এই মসজিদ এখন জেলার অন্যতম দর্শনীয় স্থান। দৃষ্টিনন্দন ডিজাইন, সুউচ্চ মিনার আর আধ্যাত্মিক পরিবেশ ঘেরা মসজিদটি স্থানীয়দের গর্ব এবং ভ্রমণপিপাসুদের জন্য আকর্ষণীয় গন্তব্য হয়ে উঠেছে।

ইতিহাসের পাতায় মালঞ্চ মসজিদ:

বিজ্ঞাপন

প্রায় ৮৫ বছর আগে, ১৯৪০ সালে আব্দুল গফুর মন্ডল নিজের উদ্যোগে গড়ে তোলেন এই মসজিদের প্রথম কাঠামো। শুরুতে তিন গম্বুজ বিশিষ্ট ছোট্ট একটি মসজিদ ছিল এটি। পরে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মসজিদের আকার-আকৃতি ও সৌন্দর্য বাড়ানো হয়। ১৯৮৭ সালে তাঁর নাতি, খ্যাতিমান শিল্পপতি হাসান মাহমুদ রাজা পারিবারিক ঐতিহ্য ধরে রাখতে মসজিদটিকে আরও উন্নত ও নান্দনিকভাবে সম্প্রসারণ করেন। সেই সময় তিন গম্বুজের মসজিদটিকে বর্ধিত করে সাত গম্বুজে রূপান্তর করা হয়।

মসজিদের স্থাপত্যে মোগল ও পারসিক ধারার প্রভাব স্পষ্ট

নকশা ও স্থাপত্যশৈলী:

মালঞ্চ জামে মসজিদের স্থাপত্যে মোগল ও পারসিক ধারার প্রভাব স্পষ্ট। মসজিদ ভবনটি সাত তলা এবং এর সঙ্গে চার তলা সুউচ্চ মিনার দৃষ্টিনন্দন পরিবেশ তৈরি করেছে। বাইরের দেয়ালে মূল্যবান টাইলসের অসাধারণ কারুকাজ এবং ভেতরের দৃষ্টিনন্দন ডিজাইন মন কেড়ে নেয় দর্শনার্থীদের।

চারপাশে সবুজে ঘেরা পরিবেশে দাঁড়িয়ে থাকা এই মসজিদ দেখতে প্রতিদিন ভিড় করেন অসংখ্য মানুষ। কেউ দেখতে, কেউবা নামাজ আদায়ের উদ্দেশ্যে আসছেন। মসজিদের ইমাম নুর ইসলাম বলেন, ‘একসঙ্গে প্রায় ১২০০ থেকে ১৪০০ মুসল্লি নামাজ পড়তে পারেন। শুক্রবারের জুমা, দুই ঈদের জামাত এবং রমজানে এখানে মানুষের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো।’মসজিদের খাদেম জয়নাল আবেদীন জানান, ‘আমি দীর্ঘ আট বছর ধরে এখানে দায়িত্ব পালন করছি। প্রতিদিন বিভিন্ন জেলা থেকে মানুষ আসে এই মসজিদ দেখতে। এই মসজিদ শুধু আমাদের এলাকার নয়, সবার গর্ব।’

ইসলামী শিক্ষা ও সমাজসেবার কেন্দ্র:

মালঞ্চ জামে মসজিদ এখন কেবল ইবাদতের জায়গা নয়, বরং এটি একটি পূর্ণাঙ্গ ইসলামী শিক্ষাকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। মসজিদকে কেন্দ্র করে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে এতিমখানা, নূরানী ও হাফেজিয়া মাদ্রাসা। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতিবছর কোরআনের হাফেজ তৈরি হচ্ছে। রয়েছে মালঞ্চ কামিল মাদ্রাসা, যেখানে শতাধিক শিক্ষার্থী ইসলামী উচ্চশিক্ষা নিচ্ছে। তাদের জন্য রয়েছে আবাসিক ভবন ও আধুনিক সুযোগ-সুবিধা।

এছাড়াও মসজিদ সংলগ্ন দাতব্য চিকিৎসালয় রয়েছে, যেখানে গরিব-অসহায় মানুষ বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা পাচ্ছে। এতে মসজিদটি এলাকার ধর্মীয়, শিক্ষাগত এবং মানবিক উন্নয়নে ব্যাপক অবদান রাখছে।

গর্বিত মালঞ্চবাসী:

স্থানীয় শিক্ষার্থী মো. সিফাত জানায়, ‘ছোটবেলা থেকেই এই মসজিদে নামাজ পড়ি। এখানে এলেই মনটা শান্ত হয়ে যায়। দূরদূরান্ত থেকে মানুষ আসে, মুগ্ধ হয়ে যায়।’

স্থানীয়রা বলছেন, মালঞ্চ জামে মসজিদ শুধু নামাজের জায়গা নয়, এটি আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য আর বিশ্বাসের প্রতীক। এই দৃষ্টিনন্দন মসজিদ এলাকার সৌন্দর্য এবং গৌরব অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে।

দিন দিন মসজিদটির খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। ধর্মপ্রাণ মুসল্লি, শিক্ষার্থী এবং পর্যটক—সবাই একত্রিত হচ্ছেন এই মসজিদে। মালঞ্চ জামে মসজিদ এখন শুধু জামালপুর নয়, ময়মনসিংহ বিভাগের অন্যতম ইসলামিক স্থাপনায় পরিণত হয়েছে। ইসলাম, শান্তি আর মানবতার শিক্ষা ছড়িয়ে দিচ্ছে এই স্থাপনাটি—ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এটি এক অনন্য গৌরবের প্রতীক হয়ে থাকবে।