আমদানি সত্ত্বেও কেন বাড়ছে চালের দাম?
-
-
|

ছবি: সংগৃহীত
রমজানে চালের চাহিদা হ্রাস, সরকারিভাবে আমদানি কিংবা বেসরকারি খাতকে উৎসাহিত করার পরেও চালের দাম না কমে উল্টো লাফিয়ে বাড়ছে। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে মিনিকেট চালের দাম কেজিতে ৫ টাকার মতো বেড়েছে। মিনিকেটের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে আরেক জনপ্রিয় চাল নাজিরশাইলেও। চালের এই মূল্যবৃদ্ধিতে বিপাকে পড়েছে সাধারণ মানুষ।
মজুত শেষ হওয়া কিংবা ধানের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাবেই চালের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে বলে মিল মালিক বা আড়তদাররা দাবি করছেন। তবে বোরো ধান উঠার আগে চালের দাম আপাতত কমছে না বলেই জানাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।
রাজধানীর মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট, টাউন হল মার্কেট, আগারগাঁওয়ের তালতলা বাজার ও কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা যায়, খুচরা দোকানে রশিদ, ডায়মন্ড, সাগর ইত্যাদি ব্র্যান্ডের প্রতি কেজি মিনিকেট চালের দাম ৮৫ টাকা বা তার কিছুটা বেশি। সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হয় মোজাম্মেল ব্র্যান্ডের মিনিকেট চাল, কেজি ৯৮-১০০ টাকা।
অন্যদিকে, ভালো মানের নাজিরশাইল চাল পাওয়া যাচ্ছে ৮৪-৮৫ টাকা কেজিতে। সাধারণ মানের নাজিরশাইল চাল ৭২–৭৫ টাকা এবং মাঝারি মানের নাজিরশাইল ৮০–৮২ টাকা কেজিতে বিক্রি করতে দেখা যায়। ছোট বাজারে ও খুচরা পর্যায়ে এই দাম আরও বেশি।
সাধারণত নাজিরশাইল চালের দাম মিনিকেট চালের বেশি হয়। এবার দেখা যাচ্ছে, মিনিকেট নাজিরশাইলকে ছাড়িয়ে গেছে। মধ্যবিত্তের জনপ্রিয় দুটি চালের দাম চড়া থাকায় বিপাকে রয়েছে অনেক পরিবার।
বাজারে ভালোমানের মোটা চালের কেজি এখন ৫৫-৫৬ টাকা। মাঝারি চাল কেনা যাচ্ছে ৫৮ থেকে ৬৫ টাকায়। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে, এক বছর আগের তুলনায় মাঝারি চালের দাম এখন কেজিতে ১৪ শতাংশ ও মোটা চালের দাম ১৫ শতাংশ বেশি।
দাম বেড়েছে দেশে চালের অন্যতম বড় মোকাম নওগাঁ ও কুষ্টিয়ায়। কুষ্টিয়ায় গত ১৫ দিনে কেজিতে মিনিকেট চালের দাম বেড়েছে ৭ টাকা। মিলগেটে প্রতি কেজি মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৮৪ টাকা। অন্যদিকে নওগাঁয় এক সপ্তাহে মিনিকেট চালের দাম কেজিতে বেড়েছে তিন–চার টাকা।
বাংলাদেশ অটোর মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিলমালিক সমিতির কুষ্টিয়া শাখার সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদিন বলেন, বোরো ধান বাজারে না আসা পর্যন্ত এ সংকট থাকবে। খাদ্য মন্ত্রণালয় গতকাল এক বিবৃতিতে বলেছে, শুধু মিনিকেট চালের মূল্যবৃদ্ধি সমগ্র চালের বাজারদর প্রতিফলিত করে না। সরকার খাদ্যের পর্যাপ্ত মজুত গড়ে তুলেছে; বিদেশ থেকে চাল আমদানিও অব্যাহত রেখেছে। দেশে চালের কোনো সংকট হবে না।
ব্যবসায়ীরা বলেছেন, বাজারে চাহিদার তুলনায় মিনিকেট চালের সরবরাহ কম। যে কারণে এই চালের দাম বাড়তি। এ প্রসঙ্গে বাজার সংশ্লিষ্ট-ব্যক্তিরা বলেছেন, মিনিকেট নামে ধানের কোনো জাত নেই। তাই মিনিকেট নামে কোনো চালও নেই। ব্রি ধান-২৮, ব্রি ধান-২৯, ব্রি হাইব্রিড ধান ও কাজল লতার মতো মোটা জাতের ধান থেকে উৎপাদিত চাল পলিশ করে মিনিকেট নামে ব্র্যান্ডিং করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, বাজারে এখন এসব ধানের সরবরাহ কম। আগামী এপ্রিলের শেষ নাগাদ বোরো মৌসুম শুরু হলে এসব জাতের ধানের সরবরাহ বাড়বে। তখন মিনিকেট নামের এই চালের দাম কমে আসবে।
চলতি মার্চ ও এপ্রিল মাসে সরকার খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি, ভিজিডি, ওএমএস ও টিসিবির মাধ্যমে প্রায় ৭ লাখ টন চাল বিতরণ করা হবে। খাদ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে সাড়ে ৮ মাসে মোট ৫ লাখ ৯৮ হাজার ৪০০ টন চাল আমদানি হয়েছে।