ঈদের কেনাকাটায় জমজমাট নিউমার্কেট

  • রুহুল আমিন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

কেনাকাটায় ব্যস্ত ক্রেতারা

কেনাকাটায় ব্যস্ত ক্রেতারা

ঈদ উল ফিতর মানেই খুশির আমেজ। আর এই খুশির আমেজের পূর্ণতা দেয় নতুন পোশাক। তাইতো ঈদের খুশিতে পূর্ণতা আনতে কেনাকাটায় ব্যস্ত সবাই। উপচে পড়া ভিড় রাজধানীর নিউমার্কেটে। একসঙ্গে অনেকগুলো শপিংমল আর সব ধরনের মানুষের সকলপ্রকার পণ্য পাওয়ার সুবিধা থাকায় ঢাকা ও আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে কেনাকাটার করতে আসেন এখানে। ফলে মানব জটলায় জমে উঠেছে কেনাকাটা।

সোমবার (১৭ মার্চ) বিকেলে সরেজমিনে সায়েন্সল্যাব, নিউমার্কেট, নীলক্ষেত, বাটা সিগন্যাল এলাকা ঘুরে এমন চিত্রই পাওয়া গেছে। এ সময় ঈদকে সামনে রেখে এসব স্থানের শপিংমলগুলোতে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় দেখা যায়।

বিজ্ঞাপন
নিজেদের পোশাক কেনায় ব্যস্ত ক্রেতারা
 

এদিন পুরো এলাকা ঘুরে দেখা যায়, শিশু থেকে বৃদ্ধ, বিভিন্ন বয়সী মানুষ কেনাকাটা করতে এসেছেন বিপণিবিতানগুলোতে। শীত পেরিয়ে গরম চলে আসায় হালকা, পাতলা গরমে আরামদায়ক পোশাকের দিকে বেশি ঝুঁকছেন ক্রেতারা। ফুটপাত থেকে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বিপণিবিতানে মানভেদে নতুন কাপড় পাওয়া যাচ্ছে একশো টাকা থেকে শুরু করে লক্ষাধিক টাকা পর্যন্ত।

বাহারি পোষাকের মেলা

বিজ্ঞাপন

এ বছর ফ্যাশন ট্রেন্ডে দেশীয় পোশাকের পাশাপাশি ক্রেতারা ঝুকছেন বেশি পাকিস্তানি পোশাকের দিকে। গরম চলে আসায় প্রধান্য পাচ্ছে হালকা রংয়ের পাতলা পোশাক। সেই কথা মাথায় রেখে হালকা রং ও ঢিলেঢালা নান্দনিক সব ডিজাইনের পোশাকের পসরা নিয়ে বসেছেন বিক্রেতারাও। নান্দনিকতা ও ঐতিহ্যের মিশেলে স্থানীয় ও বিদেশি মোটিফকে প্রাধান্য দিয়ে শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, পাঞ্জাবি ও কাফতানসহ প্রায় সব পোশাকে শৈল্পিকতার ছোঁয়া।

বাহারি পোশাকে সেজেছে দোকানগুলো

ঈদকে কেন্দ্র করে ঢাকা নিউ মার্কেটে পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন ধরনের পোশাক। বিশেষ করে, ঈদ উপলক্ষে নতুন ডিজাইনের দেশী বিদেশী নকশার পোশাকের কালেকশন নজর কাড়ছে ক্রেতাদের। শাড়ি, পাঞ্জাবি, সালোয়ার-কামিজ, বাচ্চাদের পোশাক, টি-শার্ট, জিন্স, শার্টসহ বিভিন্ন ধরনের পোশাক পাওয়া যাচ্ছে এখানে। এছাড়াও, বিভিন্ন ধরনের জুতা, স্যান্ডেল, কসমেটিকস, গহনাসহ নানা পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা।

ক্রেতাদের ভিড়

ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে, ক্রেতাদের ভিড়ও বাড়ছে ততই। ক্রেতা সমাগম দেখা যাচ্ছে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত। বিশেষ করে, সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় থাকে চোখে পড়ার মতো। এদিন ছুটির দিন না হলেও ঈদ ঘনিয়ে আসায় ক্রেতাদের উপস্থিতি ছিলো লক্ষণীয়। মূলত, ঈদের আগে ভিড় বাড়তে পারে এমন সম্ভাবনা থেকেও কেনাকাটা সেরে নিতে চাচ্ছেন আগে ভাগে।

যাত্রাবাড়ী থেকে কেনাকাটা করতে আসছেন মিনহা তাবাসসুম। সঙ্গে আছে নবম শ্রেণীতে পড়ুয়া মেয়ে জান্নাত। ঈদ কেনাকাটা আরও আগে সেরে ফেলার ইচ্ছে থাকলেও আর্থিক সমস্যায় করা হয়নি। মিনহা তাবাসসুম বার্তা২৪.কম কে বলেন, ঈদের কেনাকাটা যত আগে করা যায় ততই ভাল। দেরি হলে ভিড় বাড়ে, অনেক সময় পছন্দমত কাপড়ও পাওয়া যায় না। ইচ্ছে ছিলো আরও আগে আসার তবে নানা কাজে ব্যস্ত থকায় ও আর্থিক সমস্যা থাকায় দেরি হয়ে গেলো।

ক্রেতাদের ভিড়ে জমে েউঠেছে বিপণিবিতানগুলো

বিক্রেতারা জানাচ্ছেন, ঈদ যত এগিয়ে আসছে ক্রেতাদের ভিড়ও তত বাড়ছে। আজ ছুটির দিন না হওয়ায় ক্রেতাদের ভিড় কিছুটা কম হলেও সন্ধ্যা হলে আরও বাড়বে। গরম থাকায় দিনে বের হন না অনেক ক্রেতাই। ইফতার করে আসেন কেনাকাটা করতে।

পোষাকের সঙ্গে হিসেব মিলছে না পকেটের

নিউমার্কেট সকল মানুষের, সব রকম পোষাকের যোগান দিলেও অনেকেরই পোষাকের সঙ্গে পকেটের হিসেব মিলছে না। মূল্যস্ফীতি থেকে শুরু করে দেশের নানা অস্থিতিশীলতায় আয় না বাড়লেও বেড়েছে পোষাকের দাম। তাই অনেকেই বাজেটের সঙ্গে পোষাকের হিসাব মিলাতে হিমশিম খাচ্ছেন। কিছুটা কমে পাবার আশায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন এক দোকান থেকে অন্য দোকানে, এক বিপণি বিতান থেকে অন্য বিপণি বিতানে।

মার্কেটগুলোতে স্বস্তা, দামি সব ধরণের কাপড় পাওয়া গেলেও দাম বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়ছেন ক্রেতারা। বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, সাধারণ মানের একটি থ্রি-পিস ৭০০ টাকা থেকে শুরু করে ছয় হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। শাড়ি ১ হাজার টাকা থেকে শুরু করে দশ হাজার টাকায়ও বিক্রি হচ্ছে। তবে আছে আরও দামিও। এসব স্বল্প আয়ের ও মধ্যবিত্তদের পোষাক ছাড়াও আরও বেশি দামের পোশাকও বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। তবে চাহিদা বেশি মাঝারি দামের পোশাকের।

 বাড়তি দামের জন্য অনেকেই কিনতে পারেছেন না পছন্দের পোশাক

এছাড়া ছেলেদের টি-শার্ট একশো থেকে শুরু করে পাওয়া যাচ্ছে ৫০০ টাকায়। শার্ট পাওয়া যাচ্ছে ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকায়। জিন্স প্যান্ট ৫০০ টাকা থেকে তিন হাজার টাকায় বিক্রি করে দেখা যায়।

এবার ঈদে কাপড়ের দাম কেমন জানতে চাইলে রুবেল হোসেন নামের ঢাকা কলেজের এক শিক্ষার্থী বলেন, দাম ত বাড়ছেই, এর ওপর ঈদ উপলক্ষে আরও বাড়ায় দিছে। আগে যেখানে একটা জিন্স প্যান্ট কিনতাম ৫০৯ থেকে ৬০০ টাকায় সেখানে আজ ৬০০ বললেও বিক্রেতা দিচ্ছে না। একদাম ৭০০ বলে কাপড় রেখে দিছে। এখন আরও কিছু দোকান ঘুরে দেখি কমে পাওয়া যায় কি না। না পেলে পরে এই দামেই নিয়ে যাবো।

কানাডা ফ্যাশনের এক বিক্রেতা নাম প্রকাশ না করে বলেন, সব কিছুর দামই ত বাড়ে, তাহলে কাপড়ের দাম কেন বাড়বে না? আর অনেক কাপড়ের সঙ্গে ত ডলার, শিপিং খরচ বাড়ার একটা প্রভাবও আছে। সেই কারণে এইবার একটু দাম বাড়ছেই। আর দাম না বাড়াইলে আমরা খামু কি? তাই দাম ত একটু কাপড়েরও বাড়বে, সেটাই বাড়ছে।

সাশ্রয়ী দামে পছন্দের পোষাক কিনতে ভিড় ফুটপাতেও

মার্কেটের বাইরে ফুটপাতেও কেনাবেচার হিড়িক পড়েছে। মূলত কম দামে ভালো মানের কাপড় পাওয়া যাওয়ায় ফুটপাতে ভিড় করছেন ক্রেতারা। এসব অস্থায়ী দোকানে জামাকাপড়, জুতা, গেঞ্জিসহ বিভিন্ন পণ্যের সমারোহ সাজিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা। এছাড়াও দোকানগুলোতে পুরুষদের জন্য পাঞ্জাবি-পায়জামা, টিশার্ট ও প্যান্ট পাওয়া যাচ্ছে। নারীদের জন্য বিভিন্ন ডিজাইনের শাড়ি, সালওয়ার কামিজ, জুতা, ব্যাগসহ নানা ধরণের পণ্য পাওয়া যাচ্ছে।

মিরপুরের বাসিন্দা আসমা খাতুন বলেন, আমি আসছি অনেক আগেই। মার্কেটে ঘুরে ঘুরে কিছু কিনলাম। এখানেও দেখছি কিছু কেনা যায় কি না। তাদের কাছেও অনেক সময় কম দামে ভাল জিনিস পাওয়া যায়। আর দোকানের যেহেতু একটা ভাড়া আছে সেটাও ত আমাদের কাপড়ের দামে যোগ হচ্ছে, তাদের ত সেটা নাই। তাই দেখা যায়, দোকান থেকে যেটা বেশি দামে কিনছি সেটা এখানে পেয়ে যাচ্ছি কম দামে। সে জন্যই দেখা।

মার্কেটের বাইরে ফুটপাতেও কেনাবেচার হিড়িক পড়েছে

ঢাকা কলেজের সামনে নুরজাহান মার্কেটের সামনের ফুটপাতে পায়জামা-পাঞ্জাবি বিক্রি কারেন রবিউল নামের এক হকার। তিনি বলেন, ঈদে আমাদের সারা বছরের ব্যবসা। আমরা লাভ করি কিন্তু বিক্রি করি বেশি। আবার যেহেতু আমাদের বাড়তি খরচও কম তাই আমরা বিক্রিও করতে পারি কম দামে। আমি ২৫০-৩০০ টাকায় পায়জমা আর ৩০০-৫০০ টাকায় পাঞ্জাবি বিক্রি করছি।

অন্যদিকে, ঈদ কেনাকাটাকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সতর্ক থাকতে দেখা যায় বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যদের। যে কোন ধরণের সমস্যার সমাধানে করা হয়েছে অস্থায়ী তথ্য ও সেবা বুথ। বেসামরিক ও আধাসামরিক বাহিনীর সঙ্গে সঙ্গে সেনাবাহিনীকে সতর্ক থেকে দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়। জন সচেতনায় মাইক দিয়ে সতর্কতামূলক নানা কথা বলতেও শোনা যায়।