একটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের চার্টার্ড অ্যাকাউনটেন্টকে (সিএ) ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানোর ঘটনার রহস্য উদঘাটন করেছে থানা পুলিশ। এই ঘটনায় জড়িত অভিযোগে মূলহোতাসহ দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
জানা গেছে, অফিস সহকর্মীর সঙ্গে বিরোধের জেরে অডিট অফিসার হাসান আলীর পকেটে সু-কৌশলে ১৯৩ পিস ইয়াবা ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। প্রথমে সাধারণ জনতাকে দিয়ে মারধর পরে পুলিশ ডেকে ধরিয়ে দেওয়া হয়। ইয়াবা উদ্ধারের ঘটনায় হাসান আলীর বিরুদ্ধে মামলা হলে পুলিশ তাকে আদালতে পাঠায়। পরে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। বর্তমানে তিনি জামিনে কারামুক্ত হয়েছেন। এর আগে গত ২ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকায় অডিট অফিসার হাসানের সঙ্গে ঘটে এই ঘটনা। পুলিশ হাসানকে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসিয়েছে এমন অভিযোগ উঠলে এনিয়ে একাধিক গণমাধ্যমে খবর ছাপা হয়। বিষয়টি নজরে আসে ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলীর। তাঁর নির্দেশে ঘটনার রহস্য উদঘাটনে নামে পুলিশ। সম্প্রতি ঘটনার প্রকৃত কারণ বেরিয়ে এসেছে। ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ৫ ফেব্রুয়ারি প্রথমে ফারুক মিয়া সুমনকে আটক করা হয়। পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য৷
এরপরই হাসান আলীকে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানোর মাস্টারমাইন্ড আরিফ ইমরান খানকে আটক করে পুলিশ। বর্তমানে ফারুক মিয়া সুমন ও আরিফ ইমরান দুইজনেই কারাগারে আছেন।
পুলিশ বলছে, ভুক্তভোগী হাসান আলীর সহকর্মী আরিফ ইমরানের সাবেক গাড়ি চালক ফারুক মিয়া সুমন। এই সুমনকে আরিফ ইমরান বলেছিল, 'অফিসিয়াল বিষয় নিয়ে হাসানের সঙ্গে তার দ্বন্দ্ব চলছে। হাসানকে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসাতে পারলে তাকে পুরস্কৃত করা হবে।' এরপরেই হাসান আলীকে ফাঁসাতে ফাঁদ পাতেন সুমন।
ভুক্তভোগী হাসান আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমার অফিসের এক সহকর্মীর পরিকল্পনায় আমাকে ফাঁসানো হয়। বিনা কারণে সাত দিন কারাভোগের পর ৯ ফেব্রুয়ারি জামিনে মুক্ত হই।
ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানোর ঘটনা যেভাবে ঘটে:
জানা গেছে, ঘটনার দিন সন্ধ্যায় তেজগাঁও রহমান’র রেগনাম সেন্টার ভবনে থাকা অফিস থেকে বের হন হাসান। সঙ্গে দুই সহকর্মী বাশার ও ইমাম হোসেন। তিনজন এসকেএস স্কাই ভবনের ফুটপাত ধরে হেঁটে পুলিশ প্লাজার দিকে যাচ্ছিলেন। হাসান অফিস থেকে বের হওয়ার পর পিছু নেয় অজ্ঞাত দুইজন ব্যক্তি। হাসান হেঁটে এসকেএস স্কাই ভবনের সামনে পৌঁছালে আচমকা চারদিক থেকে ৮-১০ জন লোক তাকে ঘিরে ধরে এবং কিল-ঘুষি দিতে থাকে। এসময় হালকা গড়নের এক ব্যক্তি তার (হাসানের) পকেটে একটি ছোট ‘প্যাকেট’ ঢুকিয়ে দেয়। ঘটনা চলাকালে সেখানে অবস্থানকারীরা থানায় ফোন দিয়ে পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করে। খবর পেয়ে পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে হাসানকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। জনতা ইয়াবাসহ হাসান আলীকে আটক করায় পুলিশ তার বিরুদ্ধে মামলা দেয়।
শনিবার তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) গাজী শামীমুর রহমান বলেন, হাসান আলীর ঘটনায় তেজগাঁও বিভাগের ডিসি ইবনে মিজান স্যারসহ আমাদের যেভাবে জড়ানো হচ্ছিল আসলে আমরা কেউ এর সঙ্গে জড়িত না। বিষয়টি প্রথমে খুবই বিব্রতকর ছিল। পরে ঊধ্বর্তন স্যারদের নির্দেশে ঘটনার প্রকৃত কারণ জানতে মাঠে নামে পুলিশের একাধিক দল। সন্দেহভাজন হিসেবে প্রথমে পূর্ব নাখালপাড়া থেকে ফারুক মিয়া সুমনকে আটক করা হয়। তাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ ও প্রযুক্তির মাধ্যমে তথ্য যাচাই-বাছাই করে জানা যায় অডিট অফিসার হাসান আলীকে ফাঁসানোর জন্য তার পকেটে ১৯৩ পিস ইয়াবা জোরপূর্বক ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে। এরপরই পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়। আর ঘটনার পেছন থেকে ইন্ধন ছিল হাসান আলীর অফিস কলিগ আরিফ ইমরান খানের। তার সঙ্গেই মূলত দ্বন্দ্ব চলছিল হাসান সাহেবের। এমন তথ্য পাবার পর আরিফ ইমরানকে আটক করে পুলিশ।
পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, সুমন জনৈক এক ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করে ইয়াবা সংগ্রহ করে। সেই ব্যক্তিই মূলত অজ্ঞাত আরও ৭-৮ জনকে ভাড়া করে। ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে সুমন আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। ঘটনার সঠিক তদন্ত শেষে প্রকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দেওয়া হবে বলে জানান ওসি শামীমুর রহমান।
বিষয়টি নিয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) এস এন নজরুল ইসলাম বলেন, ঘটনার রহস্য উদঘাটন করা হয়েছে। এর সঙ্গে পুলিশের কেউ জড়িত নাহ। মূল আসামিদের ধরা হয়েছে, একজন নিজের দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।