‘আপনাকে কেন তথ্য দিতে হবে? যে কেউ এসে তথ্য চাইলেই আমরা দিতে বাধ্য নই। আপনি ভিআইপি আসছেন যে আপনাকে তথ্য দিতে হবে!’ চিলমারী নৌবন্দর পথে আসা ভারতীয় কয়লার লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) এবং বন্দরে কয়লাবাহী বলগেট পৌঁছানো সংক্রান্ত বিল অব লোডিংয়ের তথ্য চাইতে গেলে এভাবেই সাংবাদিকের সাথে উগ্র আচরণ করেন কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট সার্কেল কুড়িগ্রাম কার্যালয়ের রাজস্ব কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম।
সোমবার (৩ মার্চ) দুপুরে কুড়িগ্রাম কার্যালয়ে তথ্য চাইতে গেলে কুড়িগ্রামের স্থানীয় সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম রিগানের সাথে এমন আচরণ করেন ওই কর্মকর্তা।
এর আগে ওই কার্যালয়ের আরেক রাজস্ব কর্মকর্তা মিজানুর রহমান তথ্য নেওয়ার জন্য তার কার্যালয়ে ডাকেন। সোমবার দুপুরে কার্যালয়ে গিয়ে তথ্য চাইলে তিনি সাংবাদিকদের বসিয়ে রেখে বাইরে যান। প্রায় আধা ঘন্টা পর ফিরে এসে তিনি তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
রাজস্ব কর্মকর্তা মিজানুর এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘নিউজ করে কী হবে। নিউজ না করলে হবে না? কয়লার বোটতো চলে গেছে। নিউজ করলে বন্দরের ক্ষতি হবে। নিউজ করা বাদ দেন।’
রাজস্ব কর্মকর্তার এমন আলাপচারিতায় সায় না দিলে তিনি রেগে যান। বলেন, ‘আমি এভাবে তথ্য দিতে পারবো না। তথ্য নিতে হলে কমিশনার স্যারের অনুমতি লাগবে। একটা প্রসিডিউর মেনে তথ্য নিতে হবে।’
তথ্য নিতে ডেকে নিয়ে রাজস্ব কর্মকর্তার এমন গড়িমসির বিষয়ে একই কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার নার্গিস আক্তারের সাথে দেখা করতে যান এই প্রতিবেদক। কিন্তু তাকে কার্যালয়ে পাওয়া যায়নি। তার প্রতিনিধি হিসেবে আরেক রাজস্ব কর্মকর্তা সাইফুল ইসলামের সাথে দেখা করতে বলেন অফিসের কর্মচারীরা।
সাইফুল ইসলামের সাথে দেখা করে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে তথ্য চাইলে তিনি আকস্মিক রেগে যান। তথ্য চাওয়ায় তিনি সাংবাদিককে প্রশ্ন করে বলেন, ‘কেন আপনাকে তথ্য দিতে হবে? আপনি ভিআইপি আসছেন যে আপনাকে তথ্য দিতে হবে!’
সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ার পরও ভিআইপি বলে ব্যঙ্গ করা প্রশ্নে এই রাজস্ব কর্মকর্তা বলেন, ‘ব্যঙ্গ করছি, যান এটা লিখে দেন।’
বিষয়টি নিয়ে সহকারী কমিশনার নার্গিস আক্তারের সাথে কথা বলার জন্য তার ফোন নাম্বার চাইলে অফিস থেকে তা সরবরাহ করতে অপারগতা প্রকাশ করেন দায়িত্বশীলরা।
এ বিষয়ে কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট রংপুর বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার মো. জিয়াউর রহমান খান বলেন, ‘কেউ আমার অফিসে আসলে আমি তাকে বলতে পারি যে তথ্য দিতে পারবো কি পারবো না। কিন্তু ব্যঙ্গ করতে পারি না। উনি (রাজস্ব কর্মকর্তা) ব্যঙ্গ করেছেন কিনা তা আমাকে ভালো করে জেনে বলতে হবে।’
প্রসঙ্গত, চিলমারী নৌবন্দর পথে ভারতীয় কয়লা আমদানিতে অনিয়ম হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। থার্ড কান্ট্রি (মালয়েশিয়া) ডিক্লারেশন দিয়ে গত জানুয়ারি মাসে চিলমারী নৌবন্দরে ৩৫০ মেট্রিকটন কয়লা আমদানি করেন এক আমদানিকারক। কিন্তু তাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনও রেফারেন্স ছিল না। গত ১৩ জানুয়ারি ওই এলসির কয়লাবাহী দুইটি ভলগেট বন্দরে ভিড়ে। কিন্তু ব্যাংকের নো অবজেকশন সার্টিফিকেট না পাওয়ায় পণ্য খালাসের অনুমতি দেয়নি কাস্টমস। মানি লন্ডারিং আইনের ঝামেলা এড়াতে এবং বন্দরে পৌঁছানো কয়লার বৈধতা দিতে কয়লাবাহী দুটি ভলগেট বন্দরে বসিয়ে রেখে একই পণ্যের ওপর আলাদা আরেকটি এলসি করেন আমদানিকারক। বন্দরে পণ্য পৌঁছানোর পর সেই পণ্যের ওপর নতুন করে এলসি করার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠে। কাস্টমস ও সিএন্ডএফ এজেন্টের যোগসাজসে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে নজিরবিহীন এই কারচুপি করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রায় দেড় মাস বন্দরে আটকা থাকার পর গত ২৭ ফেব্রুয়ারি নতুন এলসির বিপরীতে ভলগেট দুটিকে চিলমারী বন্দর থেকে ছাড়পত্র দেয় কাস্টমস। ওই এলসি সংক্রান্ত কাগজ চাইলে তা নিতে সাংবাদিককে অফিসে ডাকেন রাজস্ব কর্মকর্তা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোনও তথ্য দেননি তিনি।