উত্তরের জেলা রংপুরে বিস্তৃত এলাকা জুড়ে চলছে আলু তোলার ধুম। আলু তুলতে পুরুষ শ্রমিকদের পাশাপাশি ব্যস্ত সময় পার করছেন নারী শ্রমিকরা। নারী শ্রমিকদের মজুরি কম থাকার পরও মাঠ জুড়ে তাদের উপস্থিত বেশ চোখে পড়ছে।
কাজের মান ও মজুরি পার্থক্যে কদর বেড়েছে এই মৌসুমে নারী শ্রমিকদের। পেটের তাগিদে বেকার বসে না থেকে আলু তুলতে মাঠে কাজ শুরু করেছেন। দৈনিক ২৫০-৩০০ টাকা মজুরিতে চলে তাদের সংসার।
আলু উত্তোলনের মহোৎসবে বর্তমানে অতিরিক্ত শ্রমিকের কদর বেড়েছে মাঠে। মৌসুমী কর্মসংস্থানের সুযোগ পেতে নারীরাও অল্প মজুরিতেই শ্রম দিচ্ছেন মাঠে। পারিবারিক অসচ্ছলতায় মাঠে আলু তোলার প্রতিটি মূহুর্তে যেন তাদের লোকোচুরি খেলছে অভাব ও দুঃখের চিত্র। অসহায়ত্বের চোখে রোদে পুরে মাঠে কাজ করছেন নারীরা।
কেউ কেউ পরিবারে একাধিক সদস্যের অভাবে সংসারে সামলাতে না পেরে সন্তানসহ কাজ করছেন মাঠে। কেউ কোলের শিশুটিকে নিয়েই কাজে যোগ দিয়েছেন পেটের ক্ষুধা মেটাতে। জীবন সংগ্রামে বয়সের ভারকে তোয়াক্কা না করেই অসংখ্য বৃদ্ধারও ঘাম ঝড়ছে বিস্তৃত আলু ক্ষেতে। অনেকেই মজুরিতে নয়, আলুর চুক্তিতে কাজ করছেন।
এভাবেই জীবন জীবিকার তাগিদে প্রতিনিয়ত নারীরাও সংগ্রাম করে চলছে। বিস্তৃত আলু ক্ষেতে সারিবদ্ধ হয়ে মৌসুমী নারী শ্রমিকদের কাজ করার এমন দৃশ্য চোখে পরে।
নারী শ্রমিক হাজেরা বেগম বার্তা ২৪ কমকে বলেন, স্বামী ভ্যান চালায়া যেই টাকা পায় হেই দিয়া পোলা পাইন লইয়া সংসারে টানাটানি। সব জিনিসপাতির দাম, পোলা পাইনের লেহাপড়া আমাগো গরীরের কপালে অভাব ছাড়ে না। কি করমু বাড়িত বয়া থাইকা? অল্প মজুরি হইলেও পোলা পাইন লইয়া সংসারে কিছুটা উপকার হইবো। বেডিসহ কাম করতাছি এতে কইরা কিছু বেশি টাকা পামো, আলুও নিতে পামো। আমাগো এতেই লাভ,বয়া থাইকা ২৫০ টাকা পাওয়া যাইবো না।
সারিবদ্ধ হয়ে কাজ করতে থাকা আরেক নারী শ্রমিক জবেদা বলেন, সংসারে অভাব মাঝে মাঝে আলু তোলা, ধান কাটা মারির কাম হইলে আমাদের কিছু টাকা হয়। কখনও ২৫০ টাকার চুক্তি কখনও ৩০০ আবার বেশিও হয়। এই মতন কাজ যদি প্রতিদিন হইতো অভাব কমতো।
মজুরি পার্থক্যে কথা হয় বড়দরগা এলাকার সাইদুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি জানান তার এলাকার নারী শ্রমিকরা দিন হাজিরায় ২৫০থেকে সাড়ে ৩০০ টাকায় আলু উত্তোলনের কাজ করে চলেছেন। অপরদিকে পুরুষ শ্রমিকদের দিন ৫০০ থেকে সাড়ে ৫'শ টাকা করে পারিশ্রমিক দিতে হয়। পুরুষ শ্রমিকের পাশাপাশি নারী শ্রমিক থাকায় কাজ অনেক সহজ ও সস্তায় হচ্ছে। নারীদের কাজ অনেকটা গোছালো। তবে মজুরি বৈষম্য বলতে পুরুষরা ভারী কাজ করে নারীদের দিয়ে সেই কাজ গুলো করানো হয় না।
আলু উত্তোলনের মৌসুমে বিভিন্ন বয়সী মৌসুমী শ্রমিকেরা এই আলু উত্তোলনে নিয়োজিত থাকায় কৃষকদের কাজ যেমন সহজ হয়, তেমনি মাঠ পর্যায়ে অনেকটা উৎসবের আমেজ লক্ষ্য করা যায়। এই আমেজ উপভোগ করে থাকেন এলাকাবাসীরাও।