চট্টগ্রাম জেলায় প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেলের দাম ১৬০ টাকা নির্ধারণ করা হলেও ৩ দিন পরও তা কার্যকর হয়নি। এখনও খুচরা বাজারে তেল মিলছে ১৮০-১৯৫ টাকায়। এছাড়া বোতলজাত তেল অধিকাংশ দোকানে পাওয়া যাচ্ছে না, ফলে ভোক্তাদের দুর্ভোগ বেড়েছে।
বাজার নিয়ন্ত্রণে গত সোমবার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে অভিযান চালান সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন ও জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম। পরে আমদানিকারক, উৎপাদনকারী ও আড়তদারদের সঙ্গে বৈঠক করে চট্টগ্রামে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেলের দাম ১৬০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু বাস্তবে সেই দামে তেল মিলছে না।
শুক্রবার (৭ মার্চ) নগরীর কর্ণফুলী মার্কেট, চকবাজার, আতুরার ডিপোসহ বেশ কিছু বাজারের দোকানে ঘুরে বোতলজাত সয়াবিন পাওয়া য়ায়নি। বিপরীতে তিনদিন আগে নির্ধারণ করা খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৮৫-১৯৫ টাকা দরে।
নগরীর দুই নম্বর গেট এলাকার বাসিন্দা সেলিম উদ্দিন সাগর বলেন, বাজারে এখনও ১৯৫ টাকায় এক লিটার খোলা তেল কিনতে হচ্ছে। অথচ সরকার ১৬০ টাকা নির্ধারণ করেছে। বোতলজাত তেল তো নেই, এখন খোলা তেলও বেশি দামে কিনতে হচ্ছে।
বহদ্দারহাট এলাকার মাসুমুল ইসলাম বলেন, আমি ১৮০ টাকায় এক লিটার খোলা তেল কিনেছি। আগের মতো অন্যকিছু কিনতে হয়নি, তবে দাম বেশি। বোতলজাত তেল পেলে হয়তো বিকল্প থাকত, কিন্তু সেটি বাজারে নেই।
আতুরারডিপু বাজারে আসা গৃহিণী সাবরিনা আক্তার বলেন, ১৬০ টাকার তেল ১৮০-১৯৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। নির্ধারিত দাম কার্যকর করতে কঠোর নজরদারি দরকার। আর বোতলজাত তেল যেন দ্রুত বাজারে আসে, সেটিও নিশ্চিত করা উচিত।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরবরাহ পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হলেও দাম পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। খাতুনগঞ্জের পাইকারি ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন চৌধুরী বলেন, দাম ২০-৪০ টাকা কমলেও এখনও পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। নতুন চালান এলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।
আরেক ব্যবসায়ী মো. হানিফ বলেন, আমদানিকারকরা বলছেন, চালান আসতে দেরি হচ্ছে। বোতলজাত তেলের সরবরাহ এখনও স্বাভাবিক হয়নি। তবে বড় চালান এলে বাজারে আসবে।
মুদি দোকান মালিক মহসিন বলেন, আমরা যে দামে তেল কিনছি, তার ওপর সামান্য লাভ রেখে বিক্রি করি। পাইকারি দামে বড় পরিবর্তন না এলে খুচরা বাজারেও দাম কমবে না।
বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর ও জেলা প্রশাসনের টাস্কফোর্স নগরীর বিভিন্ন এলাকায় নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে।
চট্টগ্রাম ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক ফয়েজ উল্যাহ বলেন, আমরা নিয়মিত তেলের বাজারে অভিযান চালাচ্ছি। গতকালও বেশি দামে বিক্রি করায় জরিমানা করেছি। তবে এখনও পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। ব্যবসায়ীরা নানা অজুহাত দিচ্ছেন। ভোক্তাদের স্বস্তি দিতে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতাদের সতর্ক করেছি। নির্ধারিত দামে তেল বিক্রি নিশ্চিত করতে হবে। কেউ যদি নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করে, তাহলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে, বাজার স্বাভাবিক না হলে গুদামে অভিযান চালানোর ঘোষণা দিয়েছেন জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম। তবে ভোক্তাদের প্রশ্ন, ততদিনে কি বাজারের অবস্থা আরও খারাপ হবে না?