সংযুক্ত আরব আমিরাতের রমজান প্রথা
-
-
|

আরব আমিরাতের বাচ্চার রমজানের আগে গান গেয়ে বড়দের থেকে উপহার সংগ্রহ করে, এটা তাদের ঐতিহ্য, ছবি: সংগৃহীত
আপামর বিশ্বের কাছে স্বপ্নপুরীসম দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত। বিলাসে ও আভিজাত্যে অতুলনীয়। অফুরান তেলের খনি, প্রাচুর্য ও বৈভবের সংমিশ্রণে তৈরি এই দেশ যেন স্বপ্নালোক। দেশের রাজধানী আবু ধাবি। দেশটিতে ভিনদেশিদের আধিক্য বেশি।
দেশটিতে প্রতিবছর রমজানে উৎসবমুখর পরিবেশে পালিত হয়ে আসছে রোজা। কিন্তু এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন। করোনার কারণে আরোপিত কারফিউয়ের সময় দুই ঘণ্টা কমানো হয়েছে। এখন রাত ১০টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত কারফিউ জারি থাকবে। এর আগে দেশটিতে রাত ৮টা থেকেই কারফিউ জারি ছিল।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী সেখানে রমজানের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সংগ্রহের জন্য মলগুলো আংশিকভাবে খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া রমজান মাসে দুবাই শহরে একসঙ্গে ১০ জনের বেশি মানুষের একত্র হওয়ায় নিষেধাজ্ঞাসহ শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার নির্দেশ এখনও বলবৎ আছে। তবে শিথিল হলেও জনসমাগম নিষিদ্ধই থাকছে রমজানজুড়ে। বাতিল করা হয়েছে রাস্তার পাশে তাঁবু ইফতারের আয়োজন।
তবে চলে আসা প্রথা অনুযায়ী প্রতি বছর রমজানের আগে শাবান মাসের ১৫ তারিখে দেশটিতে হক আল লায়লা প্রথা পালন করা হয়। অনেকেই একে পশ্চিমা সংস্কৃতির অংশ ট্রিক-অর-ট্রিটিং এর সঙ্গে তুলনা করেন। বাচ্চারা যা সাধারণত হ্যালুইনের রাতে করে থাকে। উপসাগরীয় অনেক দেশেই এই প্রথা চালু আছে। এবার সেই উৎসব পালন করা হয়নি।

অন্য সময় ওই দিন বাচ্চারা রঙিন জামাকাপড় পরে ঐতিহ্যবাহী স্থানীয় গান গায় এবং মিষ্টি ও বাদাম নিয়ে তাদের খারাইতা নামের ব্যাগে জমা করে। তাদের গাওয়া আরবি গান ‘আতোনা আল্লাহ ইয়ুতিকুম, বাইত মাক্কাহ ইয়ুদিকুম’ এর অর্থ ‘আমাদের দান করুন তাহলে আল্লাহ আপনাকে পুরস্কৃত করবেন এবং মক্কায় আল্লাহ ঘরে যাওয়ার জন্য সাহায্য করবেন।’ বাচ্চারা খাবার সংগ্রহ করে এবং উৎসাহের সঙ্গে রাস্তায় রাস্তায় এই গান গেয়ে বেড়ায়।
সংযুক্ত আরব আমিরাতে এই উদযাপন আমিরাতের জাতীয় পরিচয়ের অন্তর্ভুক্ত। আজকের আধুনিক সমাজে মানুষ যখন একে অপরের থেকে অনেকটা বিচ্ছিন্ন হয়ে জীবনযাপন করে তখন এই প্রথা আগেকার সেই সহজ সরল জীবনের কথা মনে করিয়ে দেয়। সেই সঙ্গে সামাজিক বন্ধন এবং পারিবারিক মূল্যবোধের গুরুত্বের ওপরও আলোকপাত করে।
একটি মজার তথ্য দিয়ে লেখাটি শেষ করছি। বিশ্বের উচ্চতম বিল্ডিং বুর্জ খলিফার ৮০ তলার ওপরে যারা বাস করেন তাদের রমজানের সময় অতিরক্তি ২-৩ মিনিট অপেক্ষা করতে হয় ইফতারের জন্য। কারণ, উঁচুতে সূর্যকে বেশ কিছুক্ষণ দেখতে পান তারা।