শুক্রবার থেকে পবিত্র রমজান মাস শুরু হচ্ছে। ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) রাতে তারাবির নামাজ আদায় করেন। শেষ রাতে প্রথম সেহরি খাওয়া হবে।
এই হিসেবে আগামী ১৮ এপ্রিল (২৬ রমজান) মঙ্গলবার দিবাগত রাতে পবিত্র শবে কদর পালিত হবে।
বিজ্ঞাপন
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ইসলামিক ফাউন্ডেশন বায়তুল মুকাররম সভাকক্ষে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান।
পবিত্র মাহে রমজান উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণী দিয়েছেন।
বিজ্ঞাপন
প্রসঙ্গত, মুসলমানদের জন্য রমজান মাস রহমত, বরকত ও মাগফেরাতের বার্তা বয়ে আনে। সংযমের এ মাসে মুসলিমরা আত্মশুদ্ধি ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় ইবাদত-বন্দেগি করে থাকেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ ড. মিজানুর রহমান আজহারীর মাহফিলে ১২ থেকে ১৫ লাখ মানুষের সমাগম ঘটে। এটি চাঁপাইনবাবগঞ্জের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ওয়াজ মাহফিল বলে দাবি করেন সংশ্লিষ্টরা।
শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে চাঁপাইনবাবগঞ্জে মাহফিলে বয়ান পেশ করেন জনপ্রিয় ইসলামি বক্তা ড. মিজানুর রহমান আজহারী। মাহফিল উপলক্ষে সকাল থেকে সেখানে চলছে স্থানীয় নেতৃত্বের বক্তব্য।
মাহফিলকে ঘিরে ভোর থেকে শ্রোতাদের ঢল নামতে থাকে চাঁপাইনবাবগঞ্জে। কেউ যাত্রীবাহী বাস রিজার্ভ করে, কেউবা ট্রেনে। তবে অধিকাংশ মানুষ দূরদূরান্ত থেকে মাইক্রোবাসে এসেছেন।
ভোর থেকেই নামে শ্রোতাদের ঢল
রাকিবুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি বলেন, তারা পাবনা থেকে বাসে রাত ৩টার দিকে রওনা হয়েছিলেন। তাদের সঙ্গে পরিবারের সদস্যরাও রয়েছেন। তার দাবি, রাজশাহী বিভাগে আর মিজানুর রহমান আজহারীর মাহফিল নেই। তাকে সরাসরি দেখে তার মুখে ওয়াজ শোনার জন্য সবাই এসেছি।
আরেক মুসল্লি সজিব ইসলাম বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেক মাহফিল শুনেছি। মাহফিল শুনতে অনেক ভালো লাগে। কাছে এসে সরাসরি দেখার একটা সুযোগ হয়েছে। তাই এ সুযোগ মিস করতে চায় না। আজহারী সাহেবকে দেখা হবে এবং তার মুখ থেকে মাহফিলও শোনা হবে। আমরা যতটুকু শুনেছি, তিন দিন আগে থেকে এখানে মানুষ আসতে শুরু করেছে। আসলে তার জনপ্রিয়তা আছে বলেই তো এত মানুষ আসছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, জনসমাগম বিবেচনা করে দর্শকদের জন্য আটটি মাঠ প্রস্তুত করা হয়েছে। আর জেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের ঘোড়াস্ট্যান্ডের পাশের আমবাগান মাঠে করা হয়েছে মূল মঞ্চ। এই মূল মাঠ ছাড়াও আশপাশে পুরুষদের জন্য তিনটি ও নারীদের জন্য চারটি আলাদা মাঠের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
মূল মাঠে চারটি প্রজেক্টরসহ সব মাঠে থাকবে প্রজেক্টরের ব্যবস্থা। এ ছাড়া সার্বক্ষণিক বিদ্যুতের জন্য রয়েছে জেনারেটর। পাশাপাশি ফ্রি ওয়াইফাই, স্যানিটেশন, পর্যাপ্ত সুপেয় পানি, অজুখানার ব্যবস্থা, ইন্টারনেট সচলের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এ ছাড়া থাকবে ৫ হাজার স্বেচ্ছাসেবক দল ও মেডিক্যাল ক্যাম্প।
জানা গেছে, জাবালুন নূর ফাউন্ডেশন এই ঐতিহাসিক মাহফিলে সভাপতিত্ব করবেন জাবালুন নুর ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা আবু জার গিফারী। প্রধান অতিথি থাকবেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল।
আয়োজক কমিটির অন্যতম সদস্য হাফেজ গোলাম রাব্বানী বার্তা২৪.কমকে বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ইতিহাসে এটি সবচেয়ে বড় ওয়াজ মাহফিল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি ৫ হাজার স্বেচ্ছাসেবক কাজ করছেন। এ ছাড়া পর্যাপ্ত টয়লেট, পানির ব্যবস্থা, খাবার হোটেল, প্রকাশনা স্টল, মেডিকেল টিম, ও পরিবহন রাখার জন্য প্রায় ১৬টি গ্যারেজের সুব্যবস্থা করা হয়েছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. রেজাউল করিম বার্তা২৪.কমকে বলেন, ড. মিজানুর রহমান আজহারীর মাহফিলে জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করছে পুলিশ। যানজট নিরসনে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে এবং জননিরাপত্তায় পুলিশ সদস্যরা নিয়োজিত আছে।
মসজিদে হারামের ইমামদের সঙ্গে বৈঠকে শায়খ সুদাইস, ছবি: সংগৃহীত
ইসলাম
প্রতিবছরের মতো আসন্ন রমজান মাসে মক্কার মসজিদে হারাম ও মদিনার মসজিদে নববিতে তারাবির নামাজ অনুষ্ঠিত হবে। এরই মধ্যে এই দুই মসজিদের তারাবি ও তাহাজ্জুদ নামাজের ইমামদের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে।
সম্প্রতি এই দুই মসজিদের ইমামদের সঙ্গে রমজান নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করেন পবিত্র দুই মসজিদের পরিচালনা পর্ষদের প্রধান শায়খ ড. আবদুর রহমান আস সুদাইস। এ সময় রমজানবিষয়ক কর্মপরিকল্পনা প্রকাশ করেন তিনি।
প্রকাশিত তালিকা অনুসারে মসজিদে হারামে এবার মোট সাতজন তারাবির নামাজের ইমাম হিসেবে থাকবেন।
প্রতিদিন দুজন করে ইমাম তারাবির ২০ রাকাত নামাজ পড়াবেন। তারা হলেন- শায়খ ড. আবদুর রহমান আস-সুদাইস, শায়খ ড. আবদুল্লাহ আল-জুহানি, শায়খ ড. আল-ওয়ালিদ আল-শামসান, শায়খ ড. ইয়ারিস আল-দাওসারি, শায়খ ড. মাহির বিন হামাদ আল-মুয়াইকালি, শায়খ ড. বান্দার বালিলা, শায়খ বদর আল-তুর্কি। তারা রমজানের শেষ ১০ দিন তাহাজ্জুদের নামাজও পড়াবেন।
আর মসজিদে নববিতে তারাবির নামাজে আট জন ইমাম দায়িত্ব পালন করবেন। তারা হলেন- শায়খ ড. আলী আল-হুজাইফি, শায়খ সালাহ আল বুদাইর, শায়খ ড. খালিদ আল মুহান্না, শায়খ ড. আবদুল্লাহ আল-করাফি, শায়খ ড. আবদুল্লাহ বুয়াইজান, শায়খ ড. মুহাম্মদ বারহাজি, শায়খ আহমদ বিন তালিব, শায়খ ড. আবদুল মুহসিন আল-কাসিম। তারা রমজানের শেষ ১০ দিনের তাহাজ্জুদ নামাজের ইমামতিও করবেন।
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ১ মার্চ পবিত্র রমজান শুরু হওয়া সম্ভাবনা রয়েছে দেশটিতে।
রমজান মাসে বিশ্বের অসংখ্য মুসলিম উমরা পালন করেন। গত বছর এক কোটি ৩০ লাখ ৫৫ হাজারের বেশি মুসলিম উমরা পালন করে। এ বছর দুই কোটিরও বেশি মুসল্লির আশা করছে সৌদি আরব।
সরকার চায় আমাদের সমাজ অপরাধমুক্ত সমাজ হোক। দেশে ভ্রাতৃত্ববোধের বিকাশ ঘটুক। সবার মাঝে সাম্প্রদায়িক সৌহার্দ্য বিরাজ করুক। অন্তরে হিংসা থাকলে মানবিক গুণাবলী নষ্ট হয়ে যায়। অন্তরকে পবিত্র রাখতে পারলে এদেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে।
শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে নাটোরের বাগাতিপাড়ায় নবনির্মিত উপজেলা মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন এসব কথা বলেন।
ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, সরকার বিশ্বে বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মডেল হিসেবে উপস্থাপন করতে চায়। সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর হতে দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যপূর্ণ আবহ তৈরির লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায় ও নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে সরকার তৎপর। তিনি সরকারের এ উদ্যোগকে এগিয়ে নিতে সবাইকে ভূমিকা রাখার অনুরোধ জানান।
ধর্ম উপদেষ্টা আরও বলেন, এদেশের সব ধর্মের মানুষের সাংবিধানিক ও নাগরিক অধিকার সমান। স্বাধীনতার ৫৪ বছরে বাংলাদেশের সব অর্জনের পেছনে সব ধর্মের মানুষের অবদান রয়েছে। তিনি আগামীদিনে একটি বৈষম্যমুক্ত ও ইনসাফভিত্তিক বাংলাদেশ গড়তে সব ধর্মের মানুষকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
মসজিদ আবাদের গুরুত্ব তুলে ধরে ড. খালিদ বলেন, মসজিদ ফেলে রাখলে হবে না। মসজিদ আবাদ করতে হবে, নামাজ পড়তে হবে। সমাজে নামাজী মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে অপরাধপ্রবণতা সহনীয় পর্যায়ে চলে আসবে।
ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও ইসলামিক ফাউন্ডেশন যৌথভাবে এই তিনতলা মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ করেছে। এতে ব্যয় হয়েছে ১৩ কোটি ৫৩ লাখ ৯ হাজার টাকা। এটির নির্মাণকাজ বাস্তবায়নের দায়িত্বে ছিলো গণপূর্ত অধিদপ্তর। এ মডেল মসজিদে ১২০ জন মহিলাসহ একসঙ্গে ৯২০ জন মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারবে। মহিলাদের জন্য আলাদা প্রবেশপথের ব্যবস্থা রয়েছে।
উল্লেখ্য, এ প্রকল্পের অধীনে চলতি মাসে সারাদেশে মোট ৫০টি মডেল মসজিদ উদ্বোধন করা হবে। এর ফলে ফেব্রুয়ারি শেষে উদ্বোধনকৃত মসজিদের সংখ্যা দাড়াবে ৩৫০টি।
জেলা প্রশাসক আসমা শাহীনের সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন পাবনা গণপূর্ত সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোঃ আফছার উদ্দিন, নাটোরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আমজাদ হোসেন, প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক মোহাম্মদ ফেরদৌস-উজ-জামান।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপদেষ্টার একান্ত সচিব ছাদেক আহমদ, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব সাজ্জাদুল হাসান ও বাগাতিপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হা-মীম তাবাসসুম প্রভা উপস্থিত ছিলেন।
পরে উপদেষ্টা একইজেলার লালপুর উপজেলা মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র উদ্বোধন করেন।
এর আগে উপদেষ্টা রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন এলাকার বাগানপাড়ায় উত্তম মেষপালক ক্যাথিড্রাল চার্চ ও খ্রিস্টান সিমেট্রি পরিদর্শন করেন। সেখানে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় তিনি যেকোনো মূল্যে সাম্প্রদায়িক সৌহার্দ্য বজায় রাখার অহ্বান জানান।
সৌদি আরবের ইসলামিক অ্যাফেয়ার্স, দাওয়াহ ও গাইডেন্স মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, পবিত্র রমজান মাসে মসজিদে নামাজের সময় বিশেষ করে তারাবি চলাকালে ইমাম ও মুসল্লিদের ভিডিও ধারণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এছাড়া, নামাজের সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরাসরি (লাইভ) প্রচারও নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
তবে এই নিষিদ্ধের আওতায় সরকারি টেলিভিশন নয়। যে চ্যানেল থেকে মসজিদে হারাম ও মসজিদে নববির নামাজ সম্প্রচার করা হয়। ওই চ্যানেলে এই দুই মসজিদ থেকে সরাসরি নামাজ সম্প্রচার করা হবে।
সৌদি প্রেস এজেন্সি (এসপিএ) জানিয়েছে, মসজিদগুলোর পবিত্রতা ও ইবাদত-বন্দেগির পরিবেশ অক্ষুণ্ণ রাখতে এসব ব্যবস্থা নিয়েছে মন্ত্রণালয়।
ইমাম ও ধর্মীয় নেতাদের এ নির্দেশনা মেনে চলতে বলা হয়েছে এবং মুসল্লিদেরও যথাযথ শৃঙ্খলা ও ধর্মীয় আদব বজায় রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
রমজান মাসে ইবাদতের উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা, মুসল্লিদের নিরাপত্তা রক্ষা করা এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালন করাই এ নির্দেশনার মূল উদ্দেশ্য।
প্রতিবছর রমজানের আগে সৌদি কর্তৃপক্ষ মসজিদসংশ্লিষ্ট কার্যক্রম নিয়মিত করার জন্য এ ধরনের নির্দেশনা জারি করে থাকে।
গ্র্যান্ড মসজিদ ও মসজিদে নববির ধর্মবিষয়ক প্রধান শায়খ ড. আবদুর রহমান আস সুদাইস বলেছেন, ‘এ নির্দেশনার মাধ্যমে রমজানে হজ ও উমরা পালনকারীদের সুবিধার্থে মন্ত্রণালয় উচ্চমানের সেবা ও পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবে।’
তিনি আরও জানান, এসব নির্দেশনার পাশাপাশি মুসল্লিদের সুবিধার্থে রমজান মাসে মসজিদের কার্যক্রম আরও আধুনিক ও ডিজিটালাইজড করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।