জাকাত প্রদানে আত্মপ্রচারণা নয়
-
-
|

লোক দেখানো জাকাত দেওয়ার প্রবণতা কাম্য নয়
অবারিত কল্যাণের মাস রমজান চলছে। এই মাসে অন্যান্য আমলের ন্যায় অধিক সওয়াবের আশায় আমরা জাকাত আদায় করে থাকি। সম্পদের সঠিক হিসাব করে জাকাত আদায় করা মুমিনের পরিচায়ক। ইসলামের অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় জাকাতকে অত্যধিক গুরুত্ব দেওয়ার পাশাপাশি এটাকে ইসলামের একটি মূল স্তম্ভ ঘোষণা করা হয়েছে।
জাকাত দ্বিতীয় হিজরিতে ফরজ করা হয়। নামাজের পর জাকাতের ওপর সবচেয়ে বেশি জোর দিয়ে দ্ব্যর্থহীন কন্ঠে ঘোষণা করা হয়েছে, যে ব্যক্তি অর্থ-সম্পদ সঞ্চয় করে, জাকাত না দেওয়া পর্যন্ত তার ওই সম্পদ হালাল হতে পারে না। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘হে নবী! আপনি তাদের সম্পদ থেকে জাকাত গ্রহণ করুন, যাতে এর মাধ্যমে আপনি সেগুলোকে পবিত্র ও পরিশুদ্ধ (বরকতময়) করতে পারেন।’ -সুরা আত তাওবা : ১০৩
কোরআনে কারিমে এ নির্দেশনা অনুযায়ী নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিভিন্ন প্রকার সম্পদের জন্য বিভিন্ন রকম নেসাব (জাকাত ওয়াজিব হওয়ার সর্বনিম্ন পরিমাণ) নির্ধারণ করে জাকাতের বিভিন্ন হার নির্ধারন করেছেন। সোনা-রূপা ও নগদ টাকা-পয়সার ওপর শতকরা আড়াই ভাগ, কৃষি উৎপাদনের ওপর সেচ ব্যবস্থার আওতাধীন জমি হলে শতকরা ২০ ভাগ ও সেচ ব্যবস্থার আওতাবহির্ভূত জমি হলে শতকরা ১০ ভাগ, ব্যবসায়িক পণ্যের ওপর শতকরা আড়াই ভাগ জাকাত ধার্য করেছেন।
এমনিভাবে ব্যবসায়িক পণ্য হিসেবে থাকা গবাদি পশু প্রভৃতি চতুষ্পদ প্রাণীর ওপর বিভিন্নহারে জাকাত ধার্য করেছেন। জাকাত প্রদান করুণার বিষয় নয়, বরং এটা হক্কুল ইবাদ তথা বান্দার হক। জাকাত প্রদানের অর্থ হচ্ছে পাওনাদারের কাছে তার হক পৌঁছে দেওয়া। কারণ, ধনীদের সম্পদে গরীবের হক আছে। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘আর তাদের (ধনীদের) সম্পদে অবশ্যই প্রার্থী (দরিদ্র) এবং বঞ্চিতদের অধিকার রয়েছে।’ -সুরা আয যারিয়াত : ১৯
আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে যারা জাকাত আদায় করবে না, তাদের পরিণাম সম্পর্কে সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা স্বর্ণ ও রৌপ্য (ধন-সম্পদ) সঞ্চয় করে রাখে এবং তা আল্লাহর পথে ব্যয় করে না (জাকাত দেয় না), তাদেরকে এক কঠিন পীড়াদায়ক আজাবের সুসংবাদ দাও। সেদিন জাহান্নামের আগুনে তা উত্তপ্ত করা হবে। এরপর তা দ্বারা তাদের কপাল, পার্শ্বদেশ ও পৃষ্ঠদেশে দাগ দেওয়া হবে। (তাদেরকে সম্বোধন করে) বলা হবে, এটাই ওই সম্পদ, যা তোমরা নিজেদের জন্য সঞ্চয় করে রেখেছিলে। সুতরাং তোমাদের সঞ্চয়ের স্বাদ আস্বাদন করো।’ -সুরা আত তওবা : ৩৫
অগণিত হাদিসে বিশ্বনবী (সা.) জাকাত আদায় না করার ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কে উম্মতকে সতর্ক করেছেন। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি তার সম্পদের জাকাত আদায় করবে না, তার সম্পদ কেয়ামতের দিন বিষধর সাপের রূপ ধারণ করবে। সেটাকে তার গলায় পেঁচিয়ে দেওয়া হবে। সে তার দুই পার্শ্বে দংশন করে বলবে, আমিই তোমার গচ্ছিত সম্পদ, আমিই তোমার সঞ্চিত ধনভান্ডার।’ -সুনানে ইবনে মাজাহ
জাকাত একটি আর্থিক ইবাদত। তাই জাকাত প্রদান করতে গিয়ে আত্মপ্রচারণা শরিয়তসম্মত নয়। এটা তাকওয়ার পরিপন্থী। ব্যানার ঝুলিয়ে, সাইনবোর্ড লাগিয়ে, মাইকিং করে, ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে জাকাত প্রদান করা কিংবা স্বল্পমূল্যের শাড়ি ও লুঙ্গি দ্বারা জাকাত দেওয়া নিচু মানসিকতার পরিচায়ক। এটা সওয়াবকে নষ্ট করে দেয়। ইসলাম জাকাতসহ অন্যান্য দান-সদকা গোপনে আদায়ের প্রতি উৎসাহ দিয়েছে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী কারিম (সা.) বলেছেন, ‘হাশরের ময়দানে আল্লাহতায়ালা সাত ব্যক্তিকে তার (আরশের) সুশীতল ছায়াতলে স্থান দেবেন, যেদিন তার ছায়া ছাড়া আর কোনো ছায়া থাকবে না। তন্মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- সেই ব্যক্তি যে অত্যন্ত গোপনভাবে দান-খয়রাত করে, এমনকি তার ডান হাতে যা কিছু দান করে তার বাম হাতও তা জানতে পারে না।’ -সহিহ বোখারি