মানবজীবনে মাহে রমজান ও রোজার গুরুত্ব ও বৈশিষ্ট্য অপরিসীম। ধর্মীয় দিক থেকে রোজা ঈমান ও তাকওয়া তথা খোদাভীতি বৃদ্ধি করে। শারীরিক দিক থেকেও মানুষের রিপু, কামনা, বাসনা, প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণের সুযোগ সৃষ্টি করে রোজা। একজন মানুষের সারা জীবনের বছরগুলোতে প্রাপ্ত রমজান মাস ও রোজার প্রতিটি দিন এজন্য প্রতিটি মুসলিম নরনারীর জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ও মূল্যবান। এজন্য বিশেষ মনোযোগী, আগ্রহী ও তৎপর হতে হয় প্রতিটি মুসলমান নর-নারীকে।
কারণ, অফুরন্ত কল্যাণ ও সুযোগ নিয়ে আগত রমজান ও রোজাকে হেলায় হারানো দুর্ভাগ্যের শামিল। ফলে প্রতিটি মুসলমানের সামনে রমজান ও রোজার মূল গুরুত্ব ও বৈশিষ্ট্যসমূহ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকা দরকার, যার ভিত্তিতে রোজার মাসকে অন্য মাসের মতো সাধারণ মনে করা যাবে না এবং মাহে রমজানের বিষয়ে বিশেষ মনোযোগী ও তৎপর হতে হবে। কারণ:
বিজ্ঞাপন
* রমজান তাকওয়া বা খোদাভীতি বাড়ানোর মাস।
* রমজান আল্লাহ সোবহানাহু তায়ালার কাছ থেকে পুরস্কার প্রাপ্তির মাস।
* রমজান জান্নাত প্রাপ্তির এবং জান্নাতে রাইয়ান নামক দরজা দিয়ে প্রবেশের সুযোগ দানকারী মাস।
* রমজান শেষ বিচারের কঠিন দিনে শান্তি ও নিরাপত্তার সুযোগ সৃষ্টিকারী মাস।
* রমজান জাহান্নাম থেকে মুক্তির মাস।
* রমজান দোয়া কবুলের মাস।
* রমজান পাপ মোচন, তাওবাহ ও ক্ষমা প্রাপ্তির মাস।
* রমজান পাপাচার থেকে বাঁচার শিক্ষা দানকারী মাস।
* রমজান দানশীলতার মাস।
* রমজান সাওয়াব বহুগুণে বৃদ্ধি পাওয়ার মাস।
* রমজান বরকতময় রজনী লাইলাতুল কদরের মাস।
* রমজান তারাবিহ নামাজের মাস।
* রমজান ইতেকাফ করার সুবর্ণ সুযোগ সৃষ্টিকারী মাস।
বস্তুতপক্ষে, মাহে রমজানের গুরুত্ব, তাৎপর্য ও মর্যাদা বলে শেষ করা যায়। মানবজীবনকে শারীরিক ও আত্মীকভাবে সফল করতে এবং দুনিয়া ও আখেরাতের চূড়ান্ত সফলতা ও কল্যাণ লাভ করতে মাহে রমজান আল্লাহ সোবহানাহু তায়ার তরফ থেকে এক ঐশী উপহার। ফলে মাহে রমজানের গুরুত্ব অনুধাবণ করে এবং বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে সচেতন হয়ে রোজা রাখা এবং রমজানের দিন-রাত্রি তথা প্রতিটি মুহুর্তকে সফলতার সঙ্গে অতিবাহিক করা প্রতিটি মুসলিম নর-নারীর একান্ত দায়িত্ব।
পরিবারকে দারিদ্র্যমুক্ত করতে নারীদের জাকাত দেওয়ার সুফল
শওকত আরা, অতিথি লেখক, ইসলাম
|
সিজেডএম-এর প্রকল্প থেকে সহায়তা পেয়ে হাঁস পালন দারিদ্র মুক্ত হয়েছে প্রায় অর্ধসহস্র পরিবার, ছবি: সংগৃহীত
ইসলাম
নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের অর্থ হলো তাদের এমন সম্পদ, দক্ষতা ও সুযোগ প্রদান করা যাতে তারা অর্থনীতিতে পূর্ণ অংশগ্রহণ, সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং আর্থিক স্বাধীনতা অর্জনে সক্ষম হয়। বর্তমান বিশ্বে নারীরা উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করলেও শিক্ষার অভাব, আর্থিক সেবা এবং কর্মসংস্থানের সুযোগের সীমাবদ্ধতাসহ বহুমুখী চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। এসব চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করার এক অনন্য ব্যবস্থা জাকাত। জাকাত ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের একটি।
মুসলিমরা প্রতি বছর তাদের সঞ্চয়ের ২.৫ শতাংশ অংশ দরিদ্র ও অভাবগ্রস্তদের মধ্যে নির্দিষ্ট নিয়মে বিতরণ করতে বাধ্য। জাকাত সমাজে সম্পদ পুনর্বণ্টনের বাধ্যতামূলক মাধ্যম, যা দারিদ্র্য ও বৈষম্য কমাতে সহায়ক।
অসহায়, দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত নারীদের জাকাতের প্রাপক হিসেবে বিবেচনা করে জাকাতের অর্থ দেওয়া হলে তা সমাজে বড় পরিবর্তন আনতে পারে। কিছু প্রধান ক্ষেত্র রয়েছে যেখানে এই পরিবর্তন সুস্পষ্টভাবে লক্ষণীয়। সেগুলো হলো-
১. নারীদের আয় করার জন্য প্রয়োজনীয় সম্পদ ও সুযোগ দেওয়া হলে তারা নিজেদের ও পরিবারকে দারিদ্র্যের চক্র থেকে বের করে আনার সম্ভাবনা বাড়ায়। বিশেষত যেখানে নারীরা পরিবারের প্রধান উপার্জনকারী। এ ছাড়া নারীরা পুরুষদের তুলনায় তাদের আয়ের একটি বড় অংশ পরিবারে বিশেষ করে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও পুষ্টিতে ব্যয় করে। তাই জাকাতের মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়ন পরিবারের সামগ্রিক কল্যাণ নিশ্চিত করে।
২. সমাজে নারী-পুরুষের এমন বহু প্রচলিত ভূমিকা ও রীতি আছে, যা নারীদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ সীমিত করে তাকে আরো দুর্বল, অসহায় ও বিপর্যস্ত করে দেয়। নারীদের জাকাতপ্রাপ্তি নিশ্চিত করার মাধ্যমে সমাজ সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে পারে। ক্ষমতায়িত নারীরা তাদের পরিবারের ও বৃহত্তর সমাজে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে বেশি সক্ষম হয়, যা আরো সমতাপূর্ণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গড়ে তোলে। এ ছাড়া অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন নারীদের নিজেদের জীবনের ওপর আরো নিয়ন্ত্রণ এনে দেয় এবং অন্যদের ওপর নির্ভরতা হ্রাস করে। ফলে নারীনির্যাতনের ঝুঁকি কমে।
৩. গবেষণায় দেখা যায়, উদ্যোক্তা হিসেবে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধির ফলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ঘটছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল অনুমান করে যে, কর্মশক্তিতে নারী-পুরুষ বৈষম্য দূর করলে অনেক দেশের জিডিপি উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়তে পারে। নারীর ক্ষমতায়নকে সমর্থন করে, জাকাত-তহবিলভিত্তিক এমন উদ্যোগগুলো হতে পারে স্থানীয় ও জাতীয় উভয় পর্যায়ে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির চালক।
কেস স্টাডি: জাকাতভিত্তিক নারীর ক্ষমতায়ন ইন্দোনেশিয়া: ইন্দোনেশিয়ায় নারীর ক্ষমতায়নে জাকাত তহবিলকে কাজে লাগানোর প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে। একটি উদ্যোগ হলো নারীদের জন্য মাইক্রোফাইন্যান্স প্রোগ্রামে জাকাতের ব্যবহার। এতে নিম্ন আয়ের পটভূমি থেকে আসা নারীদের সুদমুক্ত ঋণ, আর্থিক শিক্ষার প্রশিক্ষণ ও ব্যবসা উন্নয়ন সেবা প্রদান করে।
উদাহরণস্বরূপ, জাতীয় জাকাত বোর্ডের দেসা বারদায়া প্রোগ্রাম, নারী উদ্যোক্তা প্রোগ্রাম, ফ্যামিলি হোপ প্রোগ্রামসহ আরো এমন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে, যা ক্ষুদ্র ব্যবসার জন্য অনুদান এবং দক্ষতা প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নারীদের ক্ষমতায়নের ওপর গুরুত্ব দেয়। এর মাধ্যমে হাজার হাজার নারী কৃষি, কুটিরশিল্প ও খুচরা খাতের মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবসা শুরু ও বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছে।
পাকিস্তান: পাকিস্তানে নারীদের শিক্ষার ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের জন্য জাকাত কাজে লাগানো হচ্ছে। জাকাতের অর্থে পরিচালিত কর্মসূচিগুলো সুবিধাবঞ্চিত তরুণীদের বৃত্তি দেয়, যা তাদের বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিত ক্ষেত্রে উচ্চশিক্ষা অর্জনের সুযোগ দেয়।
এ ছাড়াও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলো নারীদের বিবিধ কারিগরি প্রশিক্ষণ দেয়; যা তাদেরকে চাকরি পেতে বা নিজস্ব ব্যবসা শুরু করতে সহায়তা করে। বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ কর্মসূচি অসংখ্য নারীকে আর্থিক স্বাধীনতা অর্জন এবং সামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখতে সক্ষম করেছে।
মিসর: মিসরে জাকাত ক্রমবর্ধমানভাবে সামাজিক উদ্যোগ এবং সমবায় মডেলের মাধ্যমে নারীদের উন্নয়নে ব্যবহৃত হচ্ছে। সমবায়ের মাধ্যমে শহর ও গ্রামাঞ্চলের নারীরা তাদের সম্পদ একত্রিত করতে, বাজারে প্রবেশাধিকার পেতে এবং দর-কষাকষির ক্ষমতা বাড়াতে পারে। যেমন কিছু কর্মসূচি গ্রামীণ নারীদের কৃষিকাজে নিয়োজিত হওয়ার সুযোগ দেয়, যেমন মুরগি পালন বা হস্তশিল্প, যা তারা গৃহস্থালি দায়িত্বের পাশাপাশি পরিচালনা করতে পারে।
সেন্টার ফর জাকাত ম্যানেজমেন্টের অভিজ্ঞতা সেন্টার ফর জাকাত ম্যানেজমেন্টের (সিজেডএম) প্রাতিষ্ঠানিক যাত্রা শুরু ২০০৮ সালে। ২০১০ সালে জীবিকা উন্নয়ন কর্মসূচি ও জিনিয়াস স্কলারশিপ কর্মসূচিতে জাকাত ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম শুরু হয়। জীবিকা উন্নয়ন কর্মসূচিতে জাকাতের হকদার ২৮ হাজার ৬৫২ জন নারীর নামে সমসংখ্যক পরিবার নিবন্ধিত হয়েছে। বর্তমানে চলমান বিভিন্ন প্রোগ্রামে নিবন্ধিত আছেন ১৪ হাজার ৫০০ জন নারী।
জিনিয়াস স্কলারশিপ কর্মসূচি পরিচালনা করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়-পড়ুয়া মেধাবী মুস্তাহিক (জাকাত পাওয়ার যোগ্য) ছাত্রছাত্রীর জন্য। এই প্রোগ্রামের আওতায় ২০২৩ শিক্ষাবর্ষে বৃত্তিপ্রাপ্ত ছাত্রের সংখ্যা ১০ হাজার ৪৭৮ জন এবং ছাত্রীর সংখ্য পাঁচ হাজার ১৫০ জন। বৃত্তিপ্রাপ্ত ছাত্র ও ছাত্রীর অনুপাত ৬৭:৩৩ বা প্রায় ২:, যেখানে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র ও ছাত্রী ভর্তির অনুপাত প্রায় ৭:৩। এ ছাড়া আছে নারীদের জন্য নৈপুণ্যবিকাশ কর্মসূচির মাধ্যমে কারিগরি প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়ার কার্যক্রম।
শিক্ষা কর্মসূচি ‘গুলবাগিচা’র অধীনে আছে প্রাক-প্রাথমিক ও কোরআন শিক্ষা এবং জাতীয় শিক্ষা কারিকুলাম অনুযায়ী প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা। প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষাকেন্দ্রগুলোতে এক হাজার ৫৬ জন শিশু শিক্ষার্থীর মধ্যে ৫৬৩ জনই মেয়েশিশু। ফোরকানিয়া মাদরাসায় এক হাজার ৮৯০ জন মুস্তাহিকের মধ্যে আছেন এক হাজার ১০০ মধ্যবয়সী নারী শিক্ষার্থী। ২০টি হিফজুল কোরআন মাদরাসার মধ্যে একটি শুধু মেয়েদের জন্য। ৫-১২ বছর বয়সী শিশুদের জন্য পরিচালিত এসব মাদরাসায় ছাত্র সংখ্যা এক হাজার ৩০১ এবং ছাত্রী ৮০ জন। জাতীয় কারিকুলামের তিনটি মাদরাসার মধ্যে একটি মেয়েদের। তিনটি মাদরাসার মোট ছেলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৬০ জন ও মেয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২১৬ জন।
ফেরদৌসি স্বাস্থ্য কর্মসূচিতে বর্তমানে ৬১টি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র চালু আছে। এখানে ১৬ হাজার ৯০০ প্রসূতি ও স্তন্যদায়ী মায়েরা পূর্ণ ম্যাটার্নিটি সেবা পেয়েছেন। দুরারোগ্য ও রেফারাল রোগীদের চিকিৎসা, শারীরিক দিক থেকে বিশেষভাবে সক্ষম রোগীদের সহায়ক ডিভাইস প্রদান, বিনামূল্যে ওষুধ বিতরণ, নিরাপদ পানি সরবরাহ, স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগার নির্মাণ, ডায়াগনস্টিক পরীক্ষা, ক্রনিক রোগীদের নিয়মিত ওষুধ বিতরণে সুবিধা দেয়ার পাশাপাশি আছে নারী ও বয়ঃসন্ধিকালীন মেয়েদের জন্য স্বাস্থ্য সচেতনতা ক্যাম্পেইন।
‘ইনসানিয়াত’ হলো সিজেডএমের বন্যা, শৈত্যপ্রবাহ, রাজনৈতিক দুর্যোগ ইত্যাদি কারণে জরুরি দুর্যোগ সহায়তা কর্মসূচি। এর আওতায় নয় লাখের বেশি অসহায় মানুষ চিকিৎসা, বাসগৃহ নির্মাণ সুবিধার মতো সেবা পেয়েছেন। এদের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারী। সম্প্রতি বৈষম্যবিরোধী গণ-আন্দোলনে শহীদদের স্ত্রীদের হাতে তাদের অশোধিত মোহরানা হস্তান্তর, সন্তানের শিক্ষা, তাদের জীবিকার ব্যবস্থা করা, ঋণ পরিশোধ করা ইত্যাদি।
সিজেডএম-এর নৈপূণ্য বিকাশ কর্মসূচির আওতায় নারীদের সেলাই প্রশিক্ষণ, ছবি: সংগৃহীত
দাওয়াহ বা প্রচারণা কর্মসূচি আয়োজন করে বিভিন্ন সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, জাকাত ফেয়ার। এসব অনুষ্ঠানে নারীদের উপস্থিতি ও অংশগ্রহণের পাশাপাশি তাদের মধ্যে সিজেডএমের কর্মসূচি বিস্তারে গঠিত হয়েছে উইমেন ফোরাম ফর জাকাত ক্যাম্পেইন যেখানে সমাজের সুবিধাপ্রাপ্ত নারীরা সুবিধাবঞ্চিত নারীদের অর্থনৈতিক ও জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে জাকাত দেওয়া, বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া, ওয়ার্কশপ ও প্রকল্প এলাকা পরিদর্শনসহ বিভিন্ন কাজ করে যাচ্ছে।
চ্যালেঞ্জ ও সুযোগ জাকাতের সুষ্ঠু প্রয়োগ নারীদের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য প্রতিশ্রুতিময় হলেও এর প্রভাব সর্বাধিক করতে কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা প্রয়োজন-
ক. সচেতনতা ও শিক্ষামূলক প্রচারাভিযান এবং সম্পৃক্ততার মাধ্যমে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন এবং আরো টার্গেটভিত্তিক জাকাতদানকে উৎসাহিত করা।
খ. স্বচ্ছতার সঙ্গে তহবিল পরিচালনা, দক্ষতার সঙ্গে তা বণ্টন ও জাকাতের কার্যকর প্রশাসনের জন্য শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান প্রয়োজন। জাকাত সংস্থাগুলোর মধ্যে জেন্ডার-সেনসংবেদনশীল কর্মসূচিগুলো প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের জন্য ক্ষমতা বৃদ্ধি করা গুরুত্বপূর্ণ।
গ. কিছু ক্ষেত্রে, সাংস্কৃতিক রীতিনীতি নারীদের জাকাতপ্রাপ্তিতে বা অর্থনৈতিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ সীমিত করতে পারে। জাকাতভিত্তিক উদ্যোগগুলো তাই জেন্ডার-ভূমিকা সম্পর্কে সামাজিক মনোভাব পরিবর্তনের বৃহত্তর প্রচেষ্টার সঙ্গে যুক্ত হতে হবে।
উপসংহার জাকাত সামাজিক ন্যায়বিচার ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের শক্তিশালী পদ্ধতি। এ পদ্ধতির ইতিবাচক ফলাফল ইতোমধ্যে বিভিন্ন মুসলিম দেশের নারীরা ভোগ করছেন। জাকাতের প্রভাব বাড়িয়ে তুলতে ধর্মীয় নেতা, নাগরিক সমাজ ও সরকারের মধ্যে সমন্বিত সহযোগিতা প্রতিষ্ঠা করা হলে সমাজে নারীদের সামগ্রিক অবস্থার আরো উন্নয়ন ঘটবে। এর মাধ্যমে নিশ্চিত হবে যে জাকাত শুধু ইবাদতেরই স্তম্ভ নয়, বরং তা উন্নয়নেরও স্তম্ভ।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ ড. মিজানুর রহমান আজহারীর মাহফিলে ১২ থেকে ১৫ লাখ মানুষের সমাগম ঘটে। এটি চাঁপাইনবাবগঞ্জের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ওয়াজ মাহফিল বলে দাবি করেন সংশ্লিষ্টরা।
শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে চাঁপাইনবাবগঞ্জে মাহফিলে বয়ান পেশ করেন জনপ্রিয় ইসলামি বক্তা ড. মিজানুর রহমান আজহারী। মাহফিল উপলক্ষে সকাল থেকে সেখানে চলছে স্থানীয় নেতৃত্বের বক্তব্য।
মাহফিলকে ঘিরে ভোর থেকে শ্রোতাদের ঢল নামতে থাকে চাঁপাইনবাবগঞ্জে। কেউ যাত্রীবাহী বাস রিজার্ভ করে, কেউবা ট্রেনে। তবে অধিকাংশ মানুষ দূরদূরান্ত থেকে মাইক্রোবাসে এসেছেন।
ভোর থেকেই নামে শ্রোতাদের ঢল
রাকিবুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি বলেন, তারা পাবনা থেকে বাসে রাত ৩টার দিকে রওনা হয়েছিলেন। তাদের সঙ্গে পরিবারের সদস্যরাও রয়েছেন। তার দাবি, রাজশাহী বিভাগে আর মিজানুর রহমান আজহারীর মাহফিল নেই। তাকে সরাসরি দেখে তার মুখে ওয়াজ শোনার জন্য সবাই এসেছি।
আরেক মুসল্লি সজিব ইসলাম বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেক মাহফিল শুনেছি। মাহফিল শুনতে অনেক ভালো লাগে। কাছে এসে সরাসরি দেখার একটা সুযোগ হয়েছে। তাই এ সুযোগ মিস করতে চায় না। আজহারী সাহেবকে দেখা হবে এবং তার মুখ থেকে মাহফিলও শোনা হবে। আমরা যতটুকু শুনেছি, তিন দিন আগে থেকে এখানে মানুষ আসতে শুরু করেছে। আসলে তার জনপ্রিয়তা আছে বলেই তো এত মানুষ আসছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, জনসমাগম বিবেচনা করে দর্শকদের জন্য আটটি মাঠ প্রস্তুত করা হয়েছে। আর জেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের ঘোড়াস্ট্যান্ডের পাশের আমবাগান মাঠে করা হয়েছে মূল মঞ্চ। এই মূল মাঠ ছাড়াও আশপাশে পুরুষদের জন্য তিনটি ও নারীদের জন্য চারটি আলাদা মাঠের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
মূল মাঠে চারটি প্রজেক্টরসহ সব মাঠে থাকবে প্রজেক্টরের ব্যবস্থা। এ ছাড়া সার্বক্ষণিক বিদ্যুতের জন্য রয়েছে জেনারেটর। পাশাপাশি ফ্রি ওয়াইফাই, স্যানিটেশন, পর্যাপ্ত সুপেয় পানি, অজুখানার ব্যবস্থা, ইন্টারনেট সচলের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এ ছাড়া থাকবে ৫ হাজার স্বেচ্ছাসেবক দল ও মেডিক্যাল ক্যাম্প।
জানা গেছে, জাবালুন নূর ফাউন্ডেশন এই ঐতিহাসিক মাহফিলে সভাপতিত্ব করবেন জাবালুন নুর ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা আবু জার গিফারী। প্রধান অতিথি থাকবেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল।
আয়োজক কমিটির অন্যতম সদস্য হাফেজ গোলাম রাব্বানী বার্তা২৪.কমকে বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ইতিহাসে এটি সবচেয়ে বড় ওয়াজ মাহফিল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি ৫ হাজার স্বেচ্ছাসেবক কাজ করছেন। এ ছাড়া পর্যাপ্ত টয়লেট, পানির ব্যবস্থা, খাবার হোটেল, প্রকাশনা স্টল, মেডিকেল টিম, ও পরিবহন রাখার জন্য প্রায় ১৬টি গ্যারেজের সুব্যবস্থা করা হয়েছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. রেজাউল করিম বার্তা২৪.কমকে বলেন, ড. মিজানুর রহমান আজহারীর মাহফিলে জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করছে পুলিশ। যানজট নিরসনে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে এবং জননিরাপত্তায় পুলিশ সদস্যরা নিয়োজিত আছে।
মসজিদে হারামের ইমামদের সঙ্গে বৈঠকে শায়খ সুদাইস, ছবি: সংগৃহীত
ইসলাম
প্রতিবছরের মতো আসন্ন রমজান মাসে মক্কার মসজিদে হারাম ও মদিনার মসজিদে নববিতে তারাবির নামাজ অনুষ্ঠিত হবে। এরই মধ্যে এই দুই মসজিদের তারাবি ও তাহাজ্জুদ নামাজের ইমামদের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে।
সম্প্রতি এই দুই মসজিদের ইমামদের সঙ্গে রমজান নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করেন পবিত্র দুই মসজিদের পরিচালনা পর্ষদের প্রধান শায়খ ড. আবদুর রহমান আস সুদাইস। এ সময় রমজানবিষয়ক কর্মপরিকল্পনা প্রকাশ করেন তিনি।
প্রকাশিত তালিকা অনুসারে মসজিদে হারামে এবার মোট সাতজন তারাবির নামাজের ইমাম হিসেবে থাকবেন।
প্রতিদিন দুজন করে ইমাম তারাবির ২০ রাকাত নামাজ পড়াবেন। তারা হলেন- শায়খ ড. আবদুর রহমান আস-সুদাইস, শায়খ ড. আবদুল্লাহ আল-জুহানি, শায়খ ড. আল-ওয়ালিদ আল-শামসান, শায়খ ড. ইয়ারিস আল-দাওসারি, শায়খ ড. মাহির বিন হামাদ আল-মুয়াইকালি, শায়খ ড. বান্দার বালিলা, শায়খ বদর আল-তুর্কি। তারা রমজানের শেষ ১০ দিন তাহাজ্জুদের নামাজও পড়াবেন।
আর মসজিদে নববিতে তারাবির নামাজে আট জন ইমাম দায়িত্ব পালন করবেন। তারা হলেন- শায়খ ড. আলী আল-হুজাইফি, শায়খ সালাহ আল বুদাইর, শায়খ ড. খালিদ আল মুহান্না, শায়খ ড. আবদুল্লাহ আল-করাফি, শায়খ ড. আবদুল্লাহ বুয়াইজান, শায়খ ড. মুহাম্মদ বারহাজি, শায়খ আহমদ বিন তালিব, শায়খ ড. আবদুল মুহসিন আল-কাসিম। তারা রমজানের শেষ ১০ দিনের তাহাজ্জুদ নামাজের ইমামতিও করবেন।
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ১ মার্চ পবিত্র রমজান শুরু হওয়া সম্ভাবনা রয়েছে দেশটিতে।
রমজান মাসে বিশ্বের অসংখ্য মুসলিম উমরা পালন করেন। গত বছর এক কোটি ৩০ লাখ ৫৫ হাজারের বেশি মুসলিম উমরা পালন করে। এ বছর দুই কোটিরও বেশি মুসল্লির আশা করছে সৌদি আরব।
সরকার চায় আমাদের সমাজ অপরাধমুক্ত সমাজ হোক। দেশে ভ্রাতৃত্ববোধের বিকাশ ঘটুক। সবার মাঝে সাম্প্রদায়িক সৌহার্দ্য বিরাজ করুক। অন্তরে হিংসা থাকলে মানবিক গুণাবলী নষ্ট হয়ে যায়। অন্তরকে পবিত্র রাখতে পারলে এদেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে।
শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে নাটোরের বাগাতিপাড়ায় নবনির্মিত উপজেলা মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন এসব কথা বলেন।
ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, সরকার বিশ্বে বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মডেল হিসেবে উপস্থাপন করতে চায়। সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর হতে দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যপূর্ণ আবহ তৈরির লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায় ও নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে সরকার তৎপর। তিনি সরকারের এ উদ্যোগকে এগিয়ে নিতে সবাইকে ভূমিকা রাখার অনুরোধ জানান।
ধর্ম উপদেষ্টা আরও বলেন, এদেশের সব ধর্মের মানুষের সাংবিধানিক ও নাগরিক অধিকার সমান। স্বাধীনতার ৫৪ বছরে বাংলাদেশের সব অর্জনের পেছনে সব ধর্মের মানুষের অবদান রয়েছে। তিনি আগামীদিনে একটি বৈষম্যমুক্ত ও ইনসাফভিত্তিক বাংলাদেশ গড়তে সব ধর্মের মানুষকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
মসজিদ আবাদের গুরুত্ব তুলে ধরে ড. খালিদ বলেন, মসজিদ ফেলে রাখলে হবে না। মসজিদ আবাদ করতে হবে, নামাজ পড়তে হবে। সমাজে নামাজী মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে অপরাধপ্রবণতা সহনীয় পর্যায়ে চলে আসবে।
ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও ইসলামিক ফাউন্ডেশন যৌথভাবে এই তিনতলা মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ করেছে। এতে ব্যয় হয়েছে ১৩ কোটি ৫৩ লাখ ৯ হাজার টাকা। এটির নির্মাণকাজ বাস্তবায়নের দায়িত্বে ছিলো গণপূর্ত অধিদপ্তর। এ মডেল মসজিদে ১২০ জন মহিলাসহ একসঙ্গে ৯২০ জন মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারবে। মহিলাদের জন্য আলাদা প্রবেশপথের ব্যবস্থা রয়েছে।
উল্লেখ্য, এ প্রকল্পের অধীনে চলতি মাসে সারাদেশে মোট ৫০টি মডেল মসজিদ উদ্বোধন করা হবে। এর ফলে ফেব্রুয়ারি শেষে উদ্বোধনকৃত মসজিদের সংখ্যা দাড়াবে ৩৫০টি।
জেলা প্রশাসক আসমা শাহীনের সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন পাবনা গণপূর্ত সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোঃ আফছার উদ্দিন, নাটোরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আমজাদ হোসেন, প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক মোহাম্মদ ফেরদৌস-উজ-জামান।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপদেষ্টার একান্ত সচিব ছাদেক আহমদ, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব সাজ্জাদুল হাসান ও বাগাতিপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হা-মীম তাবাসসুম প্রভা উপস্থিত ছিলেন।
পরে উপদেষ্টা একইজেলার লালপুর উপজেলা মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র উদ্বোধন করেন।
এর আগে উপদেষ্টা রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন এলাকার বাগানপাড়ায় উত্তম মেষপালক ক্যাথিড্রাল চার্চ ও খ্রিস্টান সিমেট্রি পরিদর্শন করেন। সেখানে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় তিনি যেকোনো মূল্যে সাম্প্রদায়িক সৌহার্দ্য বজায় রাখার অহ্বান জানান।