ভিসা আবেদনের কোটা পদ্ধতি বাতিল করেছে ঢাকার রয়েল থাই দূতাবাস। তবে আবেদনকারীদের থাইল্যান্ড ভ্রমণের অন্তত ৪৫ দিন আগে ভিসার আবেদনের জন্য অনুরোধ করেছে কর্তৃপক্ষ।

বুধবার (১২ মার্চ) এ তথ্য নিশ্চিত করেছে থাই দূতাবাস।

থাই দূতাবাস জানিয়েছে, গত ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে কোটার অতিরিক্ত ভিসা আবেদন পরীক্ষামূলকভাবে গ্রহণ করেছে দূতাবাস এবং সেটি সফল হয়েছে। ফলশ্রুতিতে গত রোববার থেকে দৈনিক ৪০০ ভিসা আবেদন জমা নেয়ার কোটা পদ্ধতি রহিত করা হয়েছে। এর ফলে ভ্রমণ ইচ্ছুকরা সঙ্গে সঙ্গেই ভিসা আবেদন করতে পারবেন এবং ভিসা ফি জমা দিতে পারবেন।

ভিসা আবেদন ফি দূতাবাসের কর্মদিবসে সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত জমা দেয়া যাবে। তবে সীমাহীন ভিসা আবেদন গ্রহণ করলেও ভিসা দেয়ার সংখ্যা আগের মতোই থাকবে। ফলে আবেদনকারীদের কিছু সময় অপেক্ষা করার ‍অনুরোধ করা হয়েছে।

আবেদনকারীদের ভ্রমণের অন্তত ৪৫ দিন আগে ভিসা আবেদন করার অনুরোধ জানিয়েছে থাই দূতাবাস। আবেদনের সময় পাসপোর্টের মেয়াদ ৬ মাস রয়েছে কিনা সেটি যাচাই করার অনুরোধ করা হয়েছে।

এছাড়াও আবেদন ফর্মের সঙ্গে পাসপোর্টের নাম, নামের বানান, জন্ম তারিখ, পাসপোর্ট নম্বর, লিঙ্গ যেন ভিন্ন না হয় সে বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে।

ভিসা চালুর নির্দিষ্ট কোনো সময় বলা সম্ভব নয়। তবে আমরা আমিরাত সরকারের সঙ্গে নিয়মিত আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি বলে মন্তব্য করেন আমিরাতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত তারেক আহমদ।

সোমবার (১০ মার্চ) বাংলাদেশ প্রেসক্লাব ইউএই-এর সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, ভিসা চালুর নির্দিষ্ট সময় বলা সম্ভব নয়, অগ্রগতি গুরুত্বপূর্ণ। তবে বিশেষ করে দুই দেশের মধ্যে ব্যবসায়িক সম্পর্ক আরও জোরদার হলে সাধারণ ভিসা চালুর সম্ভাবনা সৃষ্টি হতে পারে।”

তিনি আরও জানান, এই বিষয়ে ইতোমধ্যে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা আমিরাত সফরে গিয়ে আলোচনা করেছেন। আমরা দূতাবাস থেকেও নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছি, যাতে এই প্রক্রিয়ায় অগ্রগতি আসে।

সম্প্রতি আমিরাত সফর শেষে দেশে ফিরে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক সার্টিফিকেট জালিয়াতির কারণে আমিরাতের ভিসা চালুর ক্ষেত্রে কিছুটা কম অগ্রগতি হয়েছে।

তার এই বক্তব্যে নতুন একটি দিক উঠে আসে। অর্থাৎ আমিরাত সরকার শুধুমাত্র ভিসা ইস্যুর বিষয়টি নয়, বরং শ্রম বাজারের স্বচ্ছতা ও জালিয়াতি রোধের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে। এ কারণে প্রক্রিয়া কিছুটা দীর্ঘ হলেও এটি একটি বাস্তবসম্মত চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

প্রবাসীদের একটি বড় অংশ মনে করেন, নতুন ভিসা চালুর চেয়ে আরও বেশি জরুরি অভ্যন্তরীণ মালিক (স্পন্সর) পরিবর্তনের সুযোগ। মতবিনিময় সভায় প্রেসক্লাব নেতৃবৃন্দ রাষ্ট্রদূতের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, যেসব বাংলাদেশি প্রবাসী দীর্ঘদিন ধরে আমিরাতে কর্মরত, কিন্তু চাকরি পরিবর্তনের সুযোগ পাচ্ছেন না, তাদের জন্য একটি কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।

উল্লেখ্য, সংযুক্ত আরব আমিরাতে বসবাসরত বাংলাদেশি প্রবাসীদের অন্যতম প্রধান আলোচনার বিষয় আমিরাতের সাধারণ ভিসা চালুর সম্ভাবনা। এ নিয়ে নানা গুঞ্জন থাকলেও স্পষ্ট কোনো সময়সীমা এখনো নির্ধারিত হয়নি।

পবিত্র মাহে রমজান উপলক্ষে সংযুক্ত আরব আমিরাতে এবার জনপ্রতি ফিতরা নির্ধারণ করা হয়েছে ২৫ দিরহাম। দেশটির ফতোয়া কাউন্সিল ঘোষণা দিয়েছে, ঈদুল ফিতরের নামাজের আগেই এই ফিতরা আদায় করতে হবে।

যে কোনো মুসলিম নর-নারী, যুবক-বৃদ্ধ, যারা অর্থ বা খাদ্যের মাধ্যমে যাকাত আল ফিতর (ফিতরা) দেওয়ার সামর্থ্য রাখেন, তাদের জন্য এটি ফরজ করা হয়েছে। যারা এ দায়িত্ব পালনে সক্ষম নন, তাদের জন্য ফিতরা ফরজ নয়।

ফতোয়া কাউন্সিল জানিয়েছে, জনপ্রতি ফিতরার নির্ধারিত অর্থমূল্য ২৫ দিরহাম। যারা নগদ অর্থ দিতে চান না, তারা এর পরিবর্তে ২.৫ কেজি চাল বা সমপরিমাণ খাদ্যসামগ্রী প্রদান করতে পারেন।

আমিরাতে বসবাসরত প্রবাসীরা চাইলে ২৫ দিরহামের সমপরিমাণ টাকা বাংলাদেশে পরিবারের কাছে পাঠাতে পারেন, তবে শর্ত হচ্ছে, এটি আমিরাতে ঈদুল ফিতরের নামাজের আগেই প্রদান করতে হবে। যদি কেউ বাংলাদেশের ঈদের সময় ফিতরা প্রদান করেন, তাহলে সেটি আর ফিতরা হিসেবে গণ্য হবে না বরং তা সদকা হিসেবে বিবেচিত হবে।

এ বিষয়ে দুবাইয়ের আল জারওয়ানি মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ নুর হোছাইন জানান, যদি আমিরাতে বসবাসকারী কেউ এখানে ঈদের আগেই ফিতরা আদায় করেন, তবে তা শুদ্ধ হবে। কিন্তু কেউ যদি বাংলাদেশে ঈদের সময় এই অর্থ পাঠান এবং তখন ফিতরা আদায় করেন, তবে সেটি ফিতরা হিসেবে গণ্য হবে না, বরং তা সাধারণ সদকা হিসেবে বিবেচিত হবে।

ফিতরা ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিধান। এটি রমজানের রোজার পরিশুদ্ধি এবং গরিব-মিসকিনদের জন্য সহায়তা হিসেবে গণ্য হয়। হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) ঈদের আগেই ফিতরা আদায় করতে নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে সমাজের দরিদ্র ও অসহায় ব্যক্তিরা ঈদের আনন্দে শরিক হতে পারেন।

ফিতরা মূলত তাদের জন্য ফরজ, যারা নিজের ও পরিবারের জন্য মৌলিক চাহিদা পূরণের পর অতিরিক্ত কিছু সঞ্চয় বা সম্পদ রাখেন। আবু দাউদের একটি হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.) শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত প্রত্যেক মুসলমানের ওপর ফিতরা ফরজ করেছেন।

প্রবাসীদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে, তারা যে দেশে বসবাস করছেন, সেই দেশের সময় অনুযায়ী ফিতরা আদায় করতে হবে। আমিরাতে বসবাসরত মুসলমানদের উচিত ঈদের আগেই ফিতরা পরিশোধ করে দেওয়া, যাতে এটি যথাযথভাবে আদায় হয়।ফিতরা আদায় করা রোজার শুদ্ধতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং দরিদ্রদের সহায়তার মাধ্যম, তাই যথাযথভাবে তা আদায় করা প্রতিটি মুসলমানের কর্তব্য।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের শারজাহতে মুহাম্মদ সুমন আহমেদ (৩৬) নামে এক প্রবাসী বাংলাদেশি হৃদ্‌যন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা গেছেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।

রোববার (৯ মার্চ) সকালে রোজা অবস্থায় নিজ বাসায় মৃত্যুবরণ করেন তিনি।

মুহাম্মদ সুমন আহমেদ চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার ধলই ইউনিয়নের এনায়েতপুর এলাকার নুর উল্লাহ চৌধুরী বাড়ির মৃত মনির আহম্মেদের দ্বিতীয় সন্তান।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, মাত্র সাত মাস আগে, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন সুমন আহমেদ। সুখের সংসার গড়ার স্বপ্ন নিয়ে জীবিকার তাগিদে তিনি প্রবাসে ছিলেন। কিন্তু স্বপ্ন পূরণের আগেই থেমে গেল তার জীবন।

তার মৃত্যুতে পরিবার, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও হাটহাজারীর প্রবাসী বাংলাদেশি কমিউনিটিতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের হাটহাজারী প্রবাসী সংগঠনসহ স্থানীয় কমিউনিটির সদস্যরা শোক প্রকাশ করেছেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন।

পরিবারের সদস্যরা মরদেহ দেশে পাঠানোর জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে দ্রুতই মরদেহ দেশে পাঠানো হবে বলে জানা গেছে।

এভাবে একের পর এক প্রবাসে অকাল মৃত্যুর ঘটনা শুধু পরিবার নয়, পুরো কমিউনিটিকেই শোকাহত করছে। মুহাম্মদ সুমনের মৃত্যু তার স্বজনদের জন্য যেমন অপূরণীয় ক্ষতি, তেমনি এটি প্রবাসীদের জন্য এক বেদনাদায়ক বাস্তবতা।