এমআরআই মেশিন-সিটি স্ক্যান নষ্ট শুনতে আমারও খারাপ লাগে: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: আনিসুজ্জামান দুলাল, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ  হাসপাতালের সম্মেলন কক্ষে চিকিৎসকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী

ছবি: আনিসুজ্জামান দুলাল, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সম্মেলন কক্ষে চিকিৎসকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী

স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন বলেছেন, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে একটা এমআরআই মেশিন, সিটি স্ক্যান নষ্ট এটা শুনতেও আমার কাছে খুব খারাপ লাগে! আমি এই মেডিকেল কলেজের ছাত্র হিসেবে বলছি না, একজন চিকিৎসক, একজন মন্ত্রী হিসেবে বলছি!

এ সময় মন্ত্রী আরো বলেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের পর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের অবস্থান। এখানে যদি এই মেশিন নষ্ট থাকে, এটি ঠিক করা জরুরি। এর জন্য যা যা করা দরকার, আমি সেভাবেই আগাবো! আপনারা নিশ্চিন্তে থাকুন!

বিজ্ঞাপন

শনিবার (৬ জুলাই) সকাল ৮টটায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের সম্মেলন কক্ষে চিকিৎসকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন এসব কথা বলেন।

সভায় চিকিৎসকরা মন্ত্রীর কাছে হাসপাতালের বিভিন্ন সমস্যা ও চিকিৎসা সরঞ্জাম সংকটের কথা তুলে ধরেন। এর আগে মন্ত্রী চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের সাইট ও হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড পরিদর্শন করেন।

বিজ্ঞাপন

সভায় বক্তব্যের শুরুতে স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন বলেন, এতক্ষণ যেসব সমস্যার কথা আলোচনা হয়েছে, আমি কিন্তু সবই জানি! আমিও একজন সারাজীবন ডাক্তারি করে এসেছি। মন্ত্রী হয়েছি মাত্র ছয় মাস হলো।

এর আগে আপনাদের মতো আমিও অনেক দৌড়াদৌড়ি করেছি আর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ তো আমার জন্য একটি সেকেন্ড হোম। এখানে হাসপাতালের পরিচালক, কলেজের অধ্যক্ষ আছেন। আমি একটি অনুরোধ করবো, আপনারা আমাকে যদি একটি তালিকা করে যদি যে, কোন কাজটা আগে করতে হবে, কোনটা পরে, তাহলে খুব ভালো হয়!

হাসপাতালের কয়েকটি ওয়ার্ড ঘুরে দেখার বিষয়টি উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আজকে আমি কয়েকটা ওয়ার্ড পরিদর্শন করেছি। ইউরোলজি ওয়ার্ডে গিয়ে আমি যে, রোগীর চাপ দেখেছি, আগে কোনোদিন তা আমি দেখিনি। হয়ত আশেপাশে এই বিভাগে চিকিৎসা নেই। কক্সবাজার, রাঙামাটি, নোয়াখালী এসব মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে রোগীরা এখানে এসেছেন। কিছুদিন আগে মন্ত্রণালয়ের ডিজিসহ আমরা প্রধানমন্ত্রী সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করেছি। সেখানে আমরা প্রেজেন্টেশন আকারে নানা বিষয় প্রধানমন্ত্রীকে খোলামেলাভাবে দেখিয়েছি।

চিকিৎসকদের পোস্টিং নিয়ে নীতিমালা হচ্ছে জানিয়ে সামন্ত লাল সেন বলেন, আপনাদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে প্রায়ই আমাকে আবেদন দেওয়া হয়, বিশেষ করে গাইনি বিভাগ থেকে প্রায় চিকিৎসকই ঢাকা চলে যেতে চান। গাইনি বিভাগ থেকে সবাই যদি চলে যেতে চান, তাহলে চলবে কী করে!

মন্ত্রী বলেন, আমরা ইতোমধ্যে এ নিয়ে একটি নীতিমালা করতে যাচ্ছি, যা প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দিয়েছেন। আমি আপনাদের এটি একটু খুলে বলি- যদি আইনে বা নীতির মধ্যে থাকে, এরপরও কেউ যদি আসতে না চান বা যেতে না চান, তাহলে তাকে বলে দেবেন, চাকরি ছেড়ে দিতে। তাকে যেখানে পোস্টিং দেবে, সেখানে যেতে হবে।

এ সময় মন্ত্রী আরো বলেন, একটা সুন্দর নীতি অনুযায়ী আমি যাতে সব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পোস্টিং দিতে পারি, সেই কাজটা করছি, যেটা অনেক বড় কাজ।

আপনারা জানেন যে, আমি মনে মনে ঠিক করেছি, ঢাকায় বেশিদিন থাকবো না। মাত্র দুইদিন থাকবো আর বাকি দিন আমি বাইরে ঘুরে বেড়াবো। আজকের এই মিটিং শেষ করে আমি এখান থেকে কয়েকটি জায়গায় যাবো। আমি বলবো না, কোথায় যাবো!

মন্ত্রী দুঃখ নিয়ে বলেন, আমি খুব দুঃখের সঙ্গে বলছি, কয়েকটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে আমি যা দেখেছি, তাহলো একটি সরকারি হাসপাতালেও বিকেল পাঁচটায় কাউকে পাইনি। আমার কাছে এরকম প্রমাণ আছে! আপনাদের অনুরোধ করছি, আপনারা আমাকে সার্ভিস দিন। আমি বার বার বলেছি; এখনো বলছি, আপনাদের জন্য যা যা দরকার, তা আমি করবো।

চিকিৎসকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন নিয়ে কাজ চলছে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আপনাদের জন্য আমি স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন নিয়ে বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) মন্ত্রণালয়ে আমি মিটিং করেছি। আগামী পার্লামেন্টে এটি নিয়ে যাওয়ার জন্য দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছি। চিকিৎসকদের সুরক্ষা, চিকিৎসকদের মান-সম্মান, এটা আমার ‘টপ প্রায়োরিটি’ (অগ্রাধিকার)।

আমি মনে করি, আমার চিকিৎসকদের আমি যদি ভালোভাবে রাখতে পারি, আমাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আমাদের ডাক্তার ছেলে-মেয়েরা থাকে, আমি যদি তাদের থাকার বাসস্থান ঠিক রাখতে না পারি, তাহলে তো আমি কোনোদিন তাদের থেকে সার্ভিস আশা করতে পারি না। তাদের থাকার মতো ব্যবস্থা করতে হবে। তাদের জন্য চিকিৎসার সমস্ত সাপোর্ট দিতে হবে। সেগুলো যদি দিতে পারি, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চিকিৎসা দিতে পারলে, ঢাকা শহরে তাহলে যে রোগীর চাপ, তা কমে যাবে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, আজকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যে অবস্থা আমি দেখলাম, এটা তো সত্যি খুবই দুঃখজনক! এত রোগীর চাপ এখানে! যাই হোক, এখানে যত সমস্যা আছে, আমরা সেগুলো নোট নিয়েছি, কীভাবে সমাধান করা যায়! ঢাকায় গিয়ে প্রায়োরিটি হিসেবে আমি চেষ্টা করবো, যত দ্রুত সম্ভব, এগুলো সমাধান করার!

মন্ত্রী চিকিৎসকদের কাছে সহযোগিতা চেয়ে বলেন, আমি কিন্তু একটা কথা খুবই বিশ্বাস করি। সেটা হলো- কথা কম, কাজ বেশি। বেশি কথা বলে আমি আপনাদের মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে যাবো না। আমি যেটুকু পারবো, সেটুকুই বলবো। আমি একদিনে বা রাতারাতি কোনো সমাধান করতে পারবো না। এ সব সমস্যা সমাধান করতে আমার একটু সময় লাগবে! আপনারা আমাকে সহযোগিতা করলে আমার বিশ্বাস, আমি একটা লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবো।

মন্ত্রী সংসদ সদস্যদের স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে মানুষের আস্থা ফেরানোর কথা উল্লেখ করে বলেন, আমাকে সংসদে গেলে প্রায়ই ডাক্তারদের সম্পর্কে বিভিন্ন কথা শুনতে হয়। আমি মাননীয় সংসদ সদস্যদেরকে প্রায় সময় অনুরোধ করি, আপনারা একটু আপনাদের হাসপাতালগুলোতে যান। আপনারা যারা সংসদ সদস্য কোনোদিন কি গিয়ে দেখেছেন! তারা যদি যে এলাকার সংসদ সদস্য, সেই এলাকার হাসপাতালে গিয়ে নিজেদের চেকআপ করান, তাহলে হাসপাতালের মান তো অনেক বাড়বে! এটা তো সত্যি যে, তারা যদি আস্থা প্রকাশ করতে পারেন, তাহলে সাধারণ মানুষের আস্থা ফিরে আসবে। কেউ আর বিদেশ যাবেন না!

মন্ত্রী বলেন, ঈদের আগে প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে আমি গাজীপুর বেগম ফজিলাতুন্নেছা হাসপাতালে কিছু পরীক্ষা করিয়েছি। এরকম আমাদের সবাইকে করতে হবে।

মন্ত্রী চিকিৎসকদের অনুরোধ করে বলেন, আমি আপনাদের কাছে একটা বিষয় অনুরোধ করছি, আমি কিন্তু কোনোদিন ‘অভিযান’ চালাইনি। আমি সাংবাদিক ভাইদের সবসময় বলি, এটি ‘অভিযান নয়, এটি হচ্ছে পরিদর্শন’। অভিযান বলতে তো জঙ্গি বাহিনীকে ধরার মতো অভিযান।