বেড়েছে চাহিদা, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিদ্যুতের লোডশেডিং
-
-
|

দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিদ্যুতের লোডশেডিং, ছবি: সংগৃহীত
একদিনের ব্যবধানে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েছে প্রায় ১ হাজার মেগাওয়াটের বেশি। বাড়তি বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে না পারায় দিন-রাতের বিভিন্ন সময়ে লোডশেডিং করার তথ্য পাওয়া গেছে।
বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) কর্মদিবসে সন্ধ্যা ৭টায় সর্বোচ্চ চাহিদা ওঠেছিল ১৪ হাজার ৪২১ মেগাওয়াটে। আর সরকারি ছুটির দিন শনিবার (১৫ মার্চ) রাত ৯ টায় চাহিদা ওঠেছিল ১৫ হাজার ৩৭৬ মেগাওয়াট। ২০২৪ সালের মার্চের মাঝামাঝি (১৫ মার্চ ২০২৪) চাহিদা ওঠেছিল ১২ হাজার ৭৭৪ মেগাওয়াট। অর্থাৎ বিগত বছরের তুলনায় চাহিদা অনেকটা বাড়তির দিকে।
পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি বাংলাদেশ (পিজিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, শনিবার (১৫ মার্চ) রাত ৯টায় বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা দাঁড়িয়েছিল ১৫ হাজার ৩৭৬ মেগাওয়াট, ওই সময়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয় ১৫ হাজার ৩৩৬ মেগাওয়াট। তারাবির নামাজের ওই সময়টাতে ৪০ মেগাওয়াট লোডশেডিং করতে হয়েছে। ওই দিন সর্বোচ্চ লোডশেডিং করা হয়েছে সন্ধ্যা ৭টায় ৭৩ মেগাওয়াট। সান্ধ্যকালীন পিকে ১৫ হাজার ১২১ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে উৎপাদন করা হয় ১৫ হাজার ৪৫ মেগাওয়াট। শনিবার বিকেল ৩টায় লোডশেডিং ছিল ৭০ মেগাওয়াট।
রোজার প্রথম দুই সপ্তাহ খানিকাটা শীতের আবহ ছিল। রাতের বেলা ফ্যান-এসি ছাড়াই চালিয়ে দেওয়া গেছে। ১৫ মার্চ হঠাৎ করেই তাপমাত্রার পারদ ঊর্ধ্বমুখী হয়ে পড়েছে। শনিবার বেলা তিনটার দিকে রাজশাহীতে ৩৬ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। এটি চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। আর সঙ্গে সঙ্গেই বেড়েছে বিদ্যুতের চাহিদা।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সূত্র দাবি করেছে, প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী গ্যাস সরবরাহ না পাওয়ায় চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হয়নি। রমজান মাসে দৈনিক ১২০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করার কথা ছিল। কিন্তু শনিবার পাওয়া গেছে মাত্র ৯৮৬ ঘনফুট।
পেট্রোবাংলার দৈনিক উৎপাদন বিবরণীর তথ্য অনুযায়ী, ১৫ মার্চ বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাসের চাহিদা ছিল ২৪১০ মিলিয়ন ঘনফুট। যার বিপরীতে সরবরাহ করা হয় ৯৮৬ মিলিয়ন ঘনফুট। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, গ্যাস ঘাটতির কারণে ১২টি বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ ছিল, আর ২টি বন্ধ ছিল স্বল্প চাপ সমস্যার কারণে।
৫ ফেব্রুয়ারি রমজান ও সেচ মৌসুমে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ সংক্রান্ত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেই সভা শেষে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড ফাওজুল কবির খান বলেছিলেন, রোজায় লোডশেডিং মুক্ত রাখার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, তবে গ্রীষ্ম মৌসুমে ৭০০ থেকে ১৪০০ মেগাওয়াট লোডশেডিং করতে হতে পারে।
তিনি বলেছিলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদনে এখন ৯০০ মিলিয়ন গ্যাস সরবরাহ দেওয়া হচ্ছে। রোজার মাসের জন্য ১২০০ মিলিয়ন সরবরাহ এবং এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর ১১০০ মিলিয়ন গ্যাস সরবরাহ করা হবে। এতে বিদ্যুৎ উৎপাদন বেড়ে যাবে।
তিনি বলেছিলেন, গ্রীষ্ম ও সেচ মৌসুমে বিদ্যুতে চাহিদা প্রাক্কলন করা হয়েছে ১৮ হাজার মেগাওয়াট। এরমধ্যে কুলিং (এসি) লোড রয়েছে ৬ হাজার মেগাওয়াট। আমরা যদি এসির তাপমাত্রা ২৫ অথবা ২৬ ডিগ্রিতে রাখতে পারি তাহলে ২ থেকে ৩ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা কমে যাবে। তাহলে লোডশেডিংয়ের প্রয়োজন হবে না।
এসির তাপমাত্রা নিয়ে জ্বালানি উপদেষ্টার ওই বক্তব্যের মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কেউ কেউ দাবি করেছেন, এসি ২৫ ডিগ্রি তাপমাত্রায় রাখলে গরম বাতাস দিতে থাকে। উপদেষ্টার বক্তব্য বিজ্ঞান সম্মত না।
বর্তমানে বিদ্যুতের উৎপাদন সক্ষমতা রয়েছে ২৬ হাজার ৬০৯ মেগাওয়াট। এর মধ্যে গ্যাস ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে ১২ হাজার ১৩ মেগাওয়াট, কয়লা ভিত্তিক ৬ হাজার ৯৫১ মেগাওয়াট, ফার্নেস অয়েল ৫ হাজার ৫০৩ মেগাওয়াট, ডিজেল ২৮৬ মেগাওয়াট ও আমদানি ১১৬০ মেগাওয়াট। সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদনের রেকর্ড রয়েছে ২০২৪ সালের ১ মে ১৬ হাজার ৪৩৫ মেগাওয়াট। এবার ১৮ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহের কথা বলা হলেও সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থা কতটা গ্রহণে সক্ষম তা নিয়ে প্রশ্ন রয়ে গেছে।