গ্যাসের দাম বাড়ালেও ঈদের আগে নয়: চেয়ারম্যান বিইআরসি

  • সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

ঢাকাঃ করছেন বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ বলেছেন, গ্যাসের দাম না বাড়ালে যে কোন দিন আদেশ দেওয়া যেতে পারে, দাম বাড়ানো হলে ঈদের আগে ঘোষণা দেওয়াটা যুক্তিসঙ্গত হবে না বলে মনে করি। তবে এখনও কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেনি বিইআরসি।

তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, গ্যাসের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে বিইআরসি এখনও কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি। শুনানি পরবর্তী অনেক ব্যাক্তি ও সংগঠন লিখিত মতামত দিয়েছে। ৫ মার্চ পর‌্যন্ত লিখিত মতামত দেওয়া সময় ছিল, বিকেএমইএ অনুরোধ করেছিল সময়ের, আমরা ৯ মার্চ পর‌্যন্ত সময় দিয়েছিলাম। আগামী সপ্তাহে কমিশন বৈঠকে বসবে। তারপর সিদ্ধান্ত হবে।

বিজ্ঞাপন

এক পশ্নের জবাবে বিইআরসি চেয়ারম্যান বলেন, এখানে নীতি সিদ্ধান্তের বিষয় জড়িত রয়েছে। সরকার কতটা ভর্তুকি দেবে সেটাও এখানে বিবেচ্য। আমার মনে হয় বিষয়টি প্রধান উপদেষ্টা পর‌্যন্ত যাবে।

শুনানিতে অনেকেই শিল্পে দুই ধরণের দরের বিষয়ে আপত্তি তুলেছেন। তারা বলেছেন, বিদ্যমান শিল্প বিদ্যমান দরে পারে, আর নতুন শিল্পের জন্য বাড়তি দাম ধরা হবে এতে করে অসম প্রতিযোগিতার তৈরি হবে। এ বিষয়ে বিইআরসি কি ভাবছে? জবাবে চেয়ারম্যান বলেন, আমরা কমিশনের বৈঠকে মতামতগুলো বিশ্লেষণ করবো। তারপর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। নিশ্চয় সবকিছু বিবেচনায় নিয়েই সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।

বিজ্ঞাপন

পেট্রোবাংলা ও বিতরণ কোম্পানিগুলো শিল্প কারখানার বয়লার ও শিল্প কারখানার জেনারেটরে (ক্যাপটিভ) সরবরাহ করা গ্যাসের দাম যথাক্রমে ৩০ ও ৩১.৭৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭৫.৭২ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। বিদ্যমান গ্রাহকদের দর অপরিবর্তিত রাখার কথা বলা হলেও অনুমোদিত লোডের অধিক ব্যবহারের অংশ এবং প্রতিশ্রুত গ্রাহকদের (ইতোমধ্যে অনুমোদিত) গ্যাসের বিল অর্ধেক বিল বিদ্যমান দরে, অর্ধেক ৭৫.৭২ টাকা নির্ধারণ করতে পেট্রোবাংলা।

পেট্রোবাংলার দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবে বলা হয়েছে, প্রতি ঘনমিটার এলএনজির বর্তমান আমদানি মূল্য পড়ছে ৬৫.৭০ টাকা। ভ্যাট-ট্যাক্স ও অন্যান্য চার্জ যোগ করলে দাঁড়ায় ৭৫.৭২ টাকা। ফলে এ খাতকে টিকিয়ে রাখতে হলে গ্যাসের প্রাইস গ্যাপ কমাতে হবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী এলএনজি আমদানি করলে চলতি অর্থবছরে পেট্রোবাংলার ঘাটতি হবে প্রায় ১৬ হাজার ১৬১ কোটি ৭১ লাখ টাকা।

পেট্রোবাংলার সেই দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব নিয়ে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি শুনানি গ্রহণ করে বিইআরসি। গ্যাসের দাম বাড়ানোর শুনানিতে ক্যাব, ব্যবসায়ী সংগঠন শিল্প মালিকদের তোপের মুখে পড়ে বিইআরসি, পেট্রোবাংলা ও বিতরণ কোম্পানি কর্মকর্তারা। প্রস্তাবকে অযৌক্তিক উল্লেখ করে শুনানি করায় বিইআরসির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন অনেকেই। শুনানিতে নজির বিহীন বিক্ষোভের ঘটনা ঘটেছে এবারই প্রথম।

ক্যাবের পক্ষ থেকে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. এম শামসুল আলম বলেন, গ্যাসের দাম ‍বৃদ্ধির প্রস্তাব ভয়ঙ্কর গণবিরোধী। কমিশনের এই শুনানি গ্রহণ করা যৌক্তিক হয় নি। তাদের উচিত ছিল কমিশনের বৈঠকেই এই প্রস্তাব বাতিল করে দেওয়া।

শুনানিতে বিকেএমইএ সভাপতি হাতেম আলী বলেন, অবান্তর অযৌক্তিক প্রস্তাবের শুনানি বন্ধ করার বিনীত অনুরোধ করছি। ৩০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭৫ টাকা হলে নতুন শিল্প আসবে না, শিল্প খাত ধ্বংস হয়ে যাবে। আশা করি শিল্পখাত ধ্বংসের ষড়যন্ত্র করবেন না।

এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মীর নাসির উদ্দিন বলেন, এভাবে ৩০ টাকার গ্যাসের দাম ৭৫ টাকা করার প্রস্তাব দিয়ে আমরা কি মেসেস দিচ্ছি দেশি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে। আপনারা কি বলতে চাচ্ছেন স্টপ শিল্পায়ন, নতুন শিল্পের দরকার নেই। দয়া করে গ্যাসের দাম বাড়াবেন না। এটার মারাত্মক প্রভাব পড়বে।

বিটিএমইএ সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল বলেন, আমরা বিনিয়োগ করে ফেঁসে গেছি। ব্যবসা বন্ধ করতে পারছি না, ব্যাংক ঋণ রয়েছে বলে। না হলে অনেক আগেই বন্ধ করে দিতাম। এখন যে ৩০ টাকা দিচ্ছি সেটাই অনেক বেশি। আমরা গ্যাস পাচ্ছি না, আর আপনারা দাম বাড়ানোর প্রস্তাব নিয়ে এসেছে। আপনারা ব্যবসাটা কি ভারতের হাতে তুলে দিতে চাচ্ছেন! দয়া করে শিল্পকে ভারতের হাতে তুলে দিবেন না।

শুনানি শেষে বিইআরসি চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ বলেছেন, হ্যাঁ এ কথা সঠিক শিল্পে দুই ধরনের দর বৈষম্য তৈরি হতে পারে। অনেকেই শুনানি বন্ধের দাবি করেছিলেন, আমাদের বক্তব্য হচ্ছে সকল পক্ষের কথা শুনতে পারলাম। সকলের মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

গ্যাসের দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে উভয় সংকটে রয়েছে বিইআরসি। শুনানিতে সকলেই বিরোধীতা করে নানা রকম যুক্তি দিয়েছেন। আবার শুনানি পরববর্তী অনেকেই দাম বাড়ানো থেকে বিরত থাকার অনুরোধ করেছেন। অন্যদিকে পেট্রোবাংলা বলেছে,পরিকল্পনা অনুযায়ী আমদানি করতে হলে গ্যাসের দামের গ্যাপ কমাতে হবে।