উদ্যোক্তা হতে হলে
সাধারণভাবে উদ্যোক্তাকে ব্যবসায়ী ও বলা যেতে পারে। কিন্তু একজন উদ্যোক্তা আর ব্যবসায়ীর মধ্যে কিছুটা পার্থক্য রয়েছে। সব উদ্যোক্তাই ব্যবসায়ী, কিন্তু সব ব্যবসায়ী উদ্যোক্তা নন। যেমন, একজন সাধারণ দোকান পরিচালনাকারী ব্যবসায়ী হলেও উদ্যোক্তা নন। তিনি উদ্যোক্তা তখনই হবেন, যখন তিনি মানুষের কোনো একটি সমস্যা গৎবাঁধা নিয়মে সমাধান না করে একটু উদ্ভাবনী উপায়ে সমাধান করবেন।
আরও বিস্তারিতভাবে বললে, উদ্যোগ ও উদ্ভাবনী এ দুইয়ে মিলেই হয় উদ্যোক্তা। উদ্যোক্তা হওয়ার কোনো বয়স নেই এবং উদ্যোক্তা হতে হলে আর্থিক সামর্থ্য থাকতেই হবে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। যে কেউ উদ্যোক্তা হতে পারেন। তবে এজন্য কিছু বিষয়ের প্রতি অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে।
প্রথমেই দরকার হার না মানা মনোভাব। একজন উদ্যোক্তাকে তার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে দৃঢ় আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে। যেকোনো পরিস্থিতি সামলে ওঠা ও ব্যর্থতার দায়ভার গ্রহণের সামর্থ্য ও পরিবর্তনের মানসিকতা থাকতে হবে। ব্যর্থতার কথা চিন্তা না করে কাজে গভীরভাবে মনোনিবেশ করে সফল হওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।
সেই সঙ্গে প্রথমেই প্রাথমিক সমস্যাগুলো চিহ্নিত করতে হবে। হতে পারে একজন ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে কোনো সমস্যায় পড়েছেন অথবা আশপাশে কেউ অনেকটা একই ধরনের সমস্যার সম্মুখীন। অথবা সেটা কোনো সামাজিক সমস্যাও হতে পারে। মোটকথা, সমস্যাগুলো চিহ্নিত করা এবং এর একটি উদ্ভাবনী সমাধান দ্রুত বের করা প্রয়োজন।
এর পরের কাজ হলো সমস্যার উদ্ভাবনী সমাধানের একটি ব্যবসায়িক মডেল দাঁড় করানো। এতটুকু হয়ে গেলেই প্রারম্ভিক কাজ অনেকটা শেষ হয়ে যাবে। এরপর কাজটি এগিয়ে নেওয়া এবং এর একটি সফল পরিণাম দেওয়ার জন্য কিছু টিম গঠন করা যেতে পারে। টিমে ভিন্ন ভিন্ন সেক্টরের মানুষ যেমন, কেউ বিপণন, কেউ প্রকৌশল, আবার কেউবা সামাজিক বিজ্ঞানের ছাত্র। এতে করে টিমে বৈচিত্র্যতা থাকবে। আবার সক্ষমতা থাকলে ,কেউ নিজেই উদ্যোগটি নিয়ে এগিয়ে যেতে পারেন।
পরবর্তীতে ব্যবসা সম্প্রসারণ হলে একজন বিপণন কর্মকর্তা, হিসাব কর্মকর্তা, প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও মানবসম্পদ কর্মকর্তা নিয়ে টিম গঠন করতে পারেন। সমস্যার সমাধান হতে পারে কোনো পণ্য অথবা সেবা নিয়ে।সমাধান নিরূপনে ব্রেইনস্টর্মিং করতে হবে৷ সমাধান যা-ই হোক, তার জন্য প্রথমে একটা প্রটোটাইপ বানাতে হবে। প্রটোটাইপ হলো সমস্যা সমাধানের একটা বাস্তব মডেল, যা সমাধানকে প্রদর্শন করবে ৷
কিছু টিপস
নেটওয়ার্কিং বাড়াতে হবে নিজের পরিচিতজনদের, একই কমিউনিটির মানুষদের মাঝে নিজের উদ্যোগ সম্পর্কে জানাতে হবে যা পরবর্তীকালে ক্রেতা বৃদ্ধি ও পণ্যের গুণগত মানোন্নয়নে সাহায্য করবে। উদ্যোক্তা হতে হলে অনেকের সঙ্গে কথা বলতে শিখতে হবে। বিনিয়োগকারী, ক্রেতা এবং অন্যান্য উদ্যোক্তাসহ আরও অনেকের সঙ্গে। ভালো যোগাযোগ দক্ষতা থাকতে হবে ৷ কারও কাছে খুব ভালো আইডিয়া বা ভালো পণ্য আছে,কিন্তু সঠিকভাবে যোগাযোগ বা পণ্যের কার্যকারিতা বোঝাতে না পারলে খুব একটা লাভ হবে না। তাই একজন সফল উদ্যোক্তা হতে গেলে যোগাযোগে দক্ষতা অর্জন করতে হবে। নেতৃত্বদানের গুণাবলীও অর্জন করতে হবে।
বাস্তব অভিজ্ঞতা
উদ্যোগ ও উদ্ভাবনী এ দুইয়ের সম্মিলন ঘটাতে এবং সমাজের ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটানোর লক্ষে সুবিধাবঞ্চিত বা জীবনমানের মানোন্নয়নে পরিবর্তন আনতে সক্ষম যা কিছু অনেকে চোখে দেখে ও বাস্তবে দেখতে পায় না এরকম উদ্যোগ কয়েকজন সমমনা তরুণ মিলে পরিকল্পনা শুরু করি৷ অনেকগুলো উদ্যোগের মাঝে আমরা মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের ইংরেজি পাঠদান শুরু করি যা আমাদের কাছে একইসাথে গ্রহণযোগ্য ও সেবামূলক সামাজিক উদ্যোগ মনে হয়েছে ৷
কটূক্তির জবাব দিতে গিয়ে উদ্যোক্তা হওয়ার দৃষ্টান্ত
আমার পরিচিত ৪ বন্ধু তারা প্রত্যেকেই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী। একদিন চট্টগ্রাম নিউ মার্কেট থেকে টিশার্ট ক্রয় করতে যেয়ে ব্যর্থ হয়৷ স্বাভাবিকের তুলনায় আকারে মোটা হওয়াতে বিক্রেতা ‘হাতি সাইজের জামা পাওয়া যায় না’- জামা কিনতে গিয়ে এমন কটূক্তি শুনে তারা নিজেরাই নামলেন ব্যবসায়। তাদের এখন নিজেদেরই টিশার্ট বিক্রির অনলাইন পেজ আছে যেখানে ৩XL পর্যন্ত সাইজ পাওয়া যায়। বর্তমানে তারা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম শহরে টিশার্ট বিক্রির জন্য বেশ সমাদৃত ৷
এ দৃষ্টান্ত থেকে আমরা বলতেই পারি, পরিবর্তনের প্রত্যয়ে হোক আমাদের নিরন্তর পথচলা!
লেখক: শিক্ষার্থী, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়