কেউ মাছ কিনলে, ওরা খেতে পায়
-
-
|

মানুষ মাছ কিনলে, ওরা খেতে পায়
‘সবাই বড় বড় মাছ কিনে কিন্তু বাড়িতে কাটতে চায় না। এই নিয়ে কারো কারো মাঝে ঝগড়াও হয়। আমরা এই সব মাছ কেটে দেই। দুই চার পয়সা ইনকাম হয়। সংসারও চলে। অন্যের সংসারের ঝগড়াও বন্ধ করতে পারি’- এই বলে খিলখিল করে হেসে উঠলেন আয়েশা।
নাটোর শহরের নীচাবাজার কাঁচাবাজার মাছের বাজারের ‘মাছ কাটাইয়া’তিনি। মঙ্গলবার (১৮ জানুয়ারি) সকালে এই মাছের বাজারে একদল নারীর সঙ্গে তাকেও দেখা গেল। সারিবদ্ধভাবে বসেছেন তারা। সামনে তাদের আঁশবটি। পাশে রাখা ছাই। যারা মাছ কিনেছেন, তাদের কেউ কেউ এসে দাঁড়াচ্ছেন তাদের সামনে। মাছভর্তি থলে হাতে তুলে দিচ্ছেন। থলের ভেতরে থাকা মাছগুলো সযত্নে কুটে আবার ব্যাগে ভরে দিচ্ছেন। বিনিময়ে দিচ্ছেন ২০ থেকে ৩০ টাকা।
এভাবেই প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ক্রেতাদের মাছ কুটে দেন আয়েশা, ফাতেমা, আমেনা, জুলেখা, মালতি, রেখারাণী, রমিজান বেগমসহ কয়েকজন নারী। এদের কারো স্বামী রিকশাচালক, মজুর, মুচি বা কাঠমিস্ত্রী। সংসারে একটু স্বচ্ছলতা আনতেই প্রতিদিন ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা মাছ কাটেন তারা।
প্রতিকেজি মাছ কুটে নেন ২০ থেকে ৩০ টাকা। প্রতিদিন এভাবে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা রোজগার করেন। তবে সপ্তাহে ছুটির দিন শুক্রবার ক্রেতাসমাগম বেশী হওয়ায় বাড়ে মাছের কেনাবেচা। তখন উপার্জনও কিছুটা বাড়তি হয়।
মাছ কিনে ‘বাড়িতে নিয়ে কাটা’ গৃহকর্তীর জন্য কখনও কখনও বাড়তি ঝামেলার মনে হয়। সেই অনাগ্রহ কিছুটা উপার্জনের পথ সুগম করেছে মাছ কুটা নারীদের।এই পেশার আয় দিয়েই সচ্ছলভাবে চলছে তাদের পরিবার।
আমেনা বেগম বলেন, ‘মাছ আমরা কুটি বাপ কিন্ত এমন অনেক মাছই কুটি যা বছরে একদিন কিনে খাওয়ার খ্যমোতা আমার নাই’।
মাছ কাটাইয়া মালতি রাণী বলেন, ‘ভাতের কষ্টই তো শ্যাষ কষ্ট লয়। বাইচতে হইলে আরো কিছুক লাগে। মাছ কুটার ট্যাকা ওইসগ কাজে লাগে’।
জুলেখা বেগম বলেন, ‘মানুষ মাছ কিনলে, আমরা খাইতে পারি, চলতে পারি একটু ভালো কইরা। বাড়ির বৌ-ঝি রা মাছ কুইটতে চায় না বইলাই আমরা তা কুইটা দিচ্চি’।