যমুনার চরে পরিবহনে ঘোড়ার গাড়ি
-
-
|

যমুনা নদীর বালু চরে ব্যবহার হচ্ছে ঘোড়া গাড়ি, ছবি: বার্তা২৪.কম
যমুনা নদী এখন শুকিয়ে শুধু ধু ধু বালু চর। যেদিকে দুচোখ যায় বালু আর বালু। আর এই বালুতে সহজেই সবধরনের যানবাহন চলাচল করতে পারে না। এতে চরাঞ্চলে বসবাসকারী মানুষজন পরিবহন হিসেবে ঘোড়ার গাড়ি ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছেন। টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার গাবসারা ও অর্জুনা ইউনিয়নে গিয়ে ঘোড়ার গাড়ি ব্যবহারের প্রমাণ মিলেছে।
যমুনা নদীতে পানি শুকিয়ে যাওয়ায় পূর্বপাড় থেকে চরাঞ্চলের মানুষ ঘোড়ার গাড়িতে তাদের মালামাল পরিবহন করছে। তবে হতদরিদ্র অনেক মানুষ বাড়ির নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিষপত্র মাথায় নিয়ে হেঁটে নদী পাড়ি দিচ্ছে। আবার অনেকেই মোটরসাইকেল যোগে যার যার গন্তব্যে যাচ্ছেন। মোটরসাইকেলের যারা চালক হিসেবে আছেন তাদের অধিকাংশের বয়স ১৫ থেকে ২২ বছর।
জানা গেছে, উপজেলার দুইটি ইউনিয়নে বেশ কয়েকটি গ্রামের বেকার ছেলে ঘোড়ার গাড়ি ও মোটরসাইকেল চালিয়ে সংসারের হাল ধরেছেন। একজন ঘোড়ার গাড়ি চালক সারাদিনে গাড়ি চালিয়ে ৭-৮শ টাকা উপার্জন করেন। আবার মোটরসাইকেল চালিয়ে খরচ বাদে উপার্জন থাকে ৬-৮শ টাকা। এতে চরাঞ্চলের অনেক পরিবারে সচ্ছলতা ফিরে এসেছে।
উপজেলার গাবসারা ইউনিয়নের পুংলীপাড়া গ্রামের ঘোড়া গাড়ির চালক শাহ জামাল বলেন, ‘নদীতে পানি না থাকায় বিশাল বিশাল চর জেগে উঠেছে। নৌকা এখন আর বিভিন্ন ঘাটে যেতে পারে না। চরাঞ্চল এলাকার জমি থেকে উৎপাদিত ফসল ঘরে তোলার জন্য ঘোড়া গাড়ি একমাত্র বাহক। কেননা মাইলের পর মাইল ধু ধু বালুচর পায়ে হেঁটে মাথায় করে ফসল বাড়িতে নিয়ে আসা খুবই কষ্টকর। তাই বর্তমানে এ চরাঞ্চলে মালামাল ও বিভিন্ন ধরনের পরিবহনের জন্য ঘোড়ার গাড়ি প্রধান মাধ্যম।

অর্জুনা ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের ঘোড়া গাড়ির চালক মোতালেব বলেন, যমুনা নদীতে পানি বেশি থাকলে ঘোড়ার গাড়ি তেমন ব্যবহার হয় না। অনেক চালক তখন বেকার হয়ে যায়। সপ্তাহে তিনদিন দুই ইউনিয়নে তিনটি স্থানে হাট বসে। এই হাটকে কেন্দ্র করে মালামাল পরিবহনের জন্য ঘোড়ার গাড়ি চাহিদা থাকে। বিশেষ করে চরাঞ্চলের উৎপাদিত ফসল, বাদাম, ভুট্টা, মসুর ডাল, কাউন, খেসারি ডাল, বোরো ধান, মিষ্টি আলু, কাঁশফুলের শুকনো খড় ইত্যাদি ফসল জমি থেকে ঘোড়ার গাড়িতে পরিবহন করা হয়। এছাড়া চরাঞ্চলে রাস্তা তৈরিতে ইট, সিমেন্ট, কাঠ, বৈদ্যুতিক খুঁটি পরিবহনের জন্য ঘোড়ার গাড়ি ব্যবহার করা হয়।
উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আসলাম হোসাইন বলেন, ‘চরাঞ্চলের অনেক বেকার যুবক ঘোড়ার গাড়ি ও মোটরসাইকেল চালিয়ে সংসারে হাল ধরেছেন। নিজেও সরকারি কাজে চরাঞ্চলে গিয়ে মোটরসাইকেল অথবা ঘোড়ার গাড়িতে চলাচল করেছি। যেহেতু যমুনা নদীর পানি শুকিয়ে চর জেগেছে। সেই কারণে নৌকা বেশি দূর যেতে পারে না। তাই চরাঞ্চলে মালামাল পরিবহনের জন্য যেমন ঘোড়ার গাড়ি ব্যবহার করা হচ্ছে অন্যদিকে মানুষের চলাচলের জন্য মোটরসাইকেল জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।