জহির হাসানের একগুচ্ছ কবিতা
-
-
|

আমি মেয়েদেরতে দূরে দূরে থাকি
কেউ ভালোবাসি কয়ে যদি স্পর্শ করি বসে ফের! ফলে
আমি যদি ফের হলুদ কুটুম পাখি হই যাই
আমি যদি ফের মানুষ
হওয়ার কথা পুরাই ভুলি যাই
আমারে যদি ফের বহুকাল জঙলায়
গাছে গাছে
কাটাইতে হয়!
অসহ্য আকাশের ভাওতা বিস্তার
আমারে ফের ফাঁস করতেই হয় যদি!
আমি মেয়েদেরতে দূরে থাকি!
কচ্ছপ বিষয়ে একটি গল্প
আমরা যে কচ্ছপের প্রেমে পড়ছিলাম
তার বয়স ছিল ১ কম পাঁচশ বছর।
আমাদের দিঘিতে ছিল ওর বাস।
ওর বয়সী কোনো লোক আমাদের গ্রামে ছিল না।
আমার দাদার চাচার
গ্রামের যত লোক ছিল সবার ঘড়ি ও চুরি করত।
কারণ আমাদের গ্রামে যত লোক ছিল সবার কোনো ঘড়ি না থাকলেও ছিল।
কচ্ছপ আসত সবার মওতের আগে
সবাই উঠানে জড়ো হইত
হায়, এ বাড়িতে কেউ আজ মারা যাবে!
কারো বাড়ি সেই কচ্ছপের উপস্থিতি মানেই
কারোর সাথে আজ আজরাইলের সাক্ষাৎ হওন।
যার মওত ঘনায়ে আসত সে দৌড়াই আসি
সে নিজেই তার ঘড়িটা দিয়া দিত!
কচ্ছপ নাচতে নাচতে ঘড়িটা পিঠে করি নিয়া
তার আবাস যে বটগাছের গোড়ায়
সেইখানে সারাক্ষণ বাঁশি বাজাত।
আমরা নিজ চোখে কোনোদিন দেখি নাই
কতগুলি ঘড়ি সে এইভাবে জমায়েছে!
কারণ দেখতে গেলে যদি আমরা হতাশ হইতাম
যদি কোনো ঘড়িই না দেখতাম!
যদি কচ্ছপের উপর এই যে দীর্ঘ বিশ্বাস
তা যদি খসি পড়ত!
আমরা জানি সে আমাদের গ্রামের এক কচ্ছপ।
সব গ্রামে হয়তো এরকম একটা কচ্ছপ থাকে।
রসিক লোকেরা খুঁজলে ঠিকই কপালগুনে পাইয়া যায়!
ম্রিয়মাণ
আসমান ঢাকা সাদা কাফনে
রূহু ঢাকা চামড়ায়
সেতারারা বসি আছে কামরায়
নিজেদের মিটিমিটি ন মনে!
আসো আব্বা গান গাই
কাল তো ছিলাম
আজও আছি আমরাই
বিশিষ্ট আকাম!
আমাদের মূল গাড়া পাহাড়ের নীরবে
পরশু না তরশু, আমরা আসছি কবে?
পড়ি থাকা বস্তুর বর্ণনা বিষয়ে
পড়ি থাকা বস্তুকে কিভাবে বর্ণনা করতে হয়
তা আমি শিখি নাই।
তারপর আমি তাকে হারানো বকরি বিষয়ে জিগাস করি :
তারপর আমি তাকে হারানো উট বিষয়ে জিগাস করি :
এক বছর পর্যন্ত
আমি
হারানো উটটিরে পাতা খাওয়াই
তারপর
আমি নদীর কিনারে আনি ছাড়ি দিই
দেখি আমি কানতেছি
পরে ভাবি আমি
তো ওর মালিক না!
কিভাবে অন্যের উটগুলা
আমার ভিতর চরে
চরতে চরতে জোছনায়
রোদে
আমার উট হয়!
আমি উটেদের জন্য পাতা
আর আমার বপন করা ঘাস
আর
শুকনা ঘাসেদের উড়ার জন্য প্রান্তরে
বাতাসের অপেক্ষায় থাকি!
রেবা চলো যাই
রেবা আসো কুত্তার বাচ্চার লগে শুই
এই ঠান্ডা মাটির উপর!
পাশেতে বকুল পাতা জড়ো করা, হয়তো পোড়াবেনে কেউ, বা,
বা, উড়াবে কেউ—
চলো আজ আর অন্য জেলায় না যাই, হ্যানো এই দেশে
সকল রাষ্ট্রীয় উদ্যোগের বিপরীতে
বনে বনে
হাতায়ে ছায়ার হাঁসেদেরে ধরি!
চলো সমুদ্রের তীরে তীরে
রোদের বালিরে
বালির নদীরে
নখ দিয়া খুঁটি
গর্ত করি গে
কয়েক হাজার না ঘুমানো দিনের মধ্যে গিয়া
মরি আসিগে অমরতার আগ পর্যন্ত
একটি কবিতার মইধ্যে
একটি লাইনে
পাশাপাশি
ফাঁকটুকু বাতিল করিয়া
শুই থাকি শব্দ নয়
অর্থ রূপে
হাইড হই
তোমার ভিতর!
অলঙ্করণ শতাব্দী জাহিদ