কূটনৈতিক পাড়ায় ভবনের ফ্লোর দখলের পাঁয়তারা, দু'দফায় হামলা

, জাতীয়

নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম | 2025-03-19 14:22:01

কূটনৈতিক স্থাপনা ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে রাজধানীর গুলশানে। নিরাপত্তার জন্য সর্ব্বোচ গুরুত্ব দেওয়া হয় এই এলাকাকে। তবে দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর গুলশানে প্রভাব বিস্তার ও ভবনের ফ্লোর দখলে দু’দফাই ফিল্মি স্টাইলে সন্ত্রাসী হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে এস এস বিল্ডার্সের বিরুদ্ধে।

অভিযোগ রয়েছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সামনেই চালানো হয়েছে এই হামলা। ফলে নিরাপত্তায় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পাওয়া কুটনৈতিক পাড়ায় দফায় দফায় এভাবে হামলার ঘটনায় প্রশ্ন উঠছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা নিয়ে।

সম্প্রতি, রাজধানীর গুলশান ২ নম্বরে অবস্থিত গুলশান সেন্টার পয়েন্টের ১৮ তলার ৩০ হাজার বর্গ ফিটের ফ্লোর দখলে সন্ত্রাসী ভাড়া করে দুই দফায় হামলা চালানোর ঘটনা ঘটেছে।

অভিযোগ রয়েছে, এস এস বিল্ডার্সের মালিক সাব্বির ইসলাম ভাড়া করা সন্ত্রাসী দিয়ে ফ্লোর দখলের চেষ্টা করেছেন।

কূটনৈতিক পাড়া গুলশান ২ নম্বরের কেন্দ্রে অবস্থিত এই ভবনটিতে নামী সুপারশপ ইউনিমার্টসহ একাধিক বহুজাতিক কোম্পানির অফিস রয়েছে। ফলে দফায় দফায় হামলার এমন ঘটনায় শঙ্কা প্রকাশ করছে ভবনটি ঘিরে গড়ে ওঠা ব্যবসায়ীরা।


জানা গেছে, বিগত ২০০৬ সালে ভবনটির মালিক পক্ষের সাথে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হয় এস এস বিল্ডার্সের সাথে। যেখানে ভবনটির ১০ তলার প্রায় ১৪ হাজার স্কয়ার ফিট ১৫ কোটি টাকার বিনিময়ে বিক্রয়ের কথা উল্লেখ করা হয়। পরে ২০২১ সাল পর্যন্ত ভবনটির মালিককে বিভিন্ন দফায় এস এস বিল্ডার্স ৫ কোটি টাকা প্রদান করে। কিন্তু সম্পূর্ণ অর্থ প্রদান না করায় প্রতিষ্ঠানটিকে ১০ তলার ১৪ হাজার স্কয়ার ফিট বুঝিয়ে দেয়া সম্ভব হয়নি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সম্প্রতি ভবনটির ১৮ তলার ফ্লোরটি খালি হয়। সেই সুযোগে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি মধ্যরাতে ভবনটির ৩০ হাজার স্কয়ার ফিটের ১৮ তলার ফ্লোরটি দখল করতে  এস এস বিল্ডার্সের মালিক পক্ষ একদল সন্ত্রাসী পাঠিয়ে হামলা চালায়।

প্রথম দফায় সফল না হওয়ায় গত ৯ মার্চ এসএস বিল্ডার্সের পাঠানো আরেক দল সন্ত্রাসী বাহিনী  ভবনটির ১৮ তলায় প্রবেশের চেষ্টা করে। পরে ভবনের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সদস্যরা সন্ত্রাসী বাহিনীর প্রবেশ রোধের চেষ্টা করলে একপর্যায়ে নিরাপত্তা রক্ষীদেরকে শারীরিক নির্যাতন করে।

ভবনটির মালিকপক্ষ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ফোন দিলে তারা সেখানে উপস্থিত হন। পুলিশ ঘটনাস্থলে পরিদর্শনে এলেও, হামলাকারীরা সারারাত ধরে নির্বিঘ্নে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। হামলাকারীদের প্রতিহত করতে শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে কোন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি।

এদিকে, দুই দফা হামলার ঘটনা নিয়ে তদন্ত চলছে। তবে তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের আগে এই হামলার ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।  এতে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে।

জানা গেছে, ঘটনার দিন হামলাকারীরা অনুপ্রবেশের সময়, বিভিন্ন সম্পদ ভাঙচুর করে এবং এমন কর্মকাণ্ডের প্রমাণ লোপাট করতে ইচ্ছাকৃতভাবে সিসিটিভি ক্যামেরা নষ্ট করে।

তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ৪ মিনিট ১৫ সেকেন্ডের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, ভবনটির সামনে মোটরসাইকেল রেখে লাঠি হাতে বেশ কয়েকজন হামলাকারী সেখানে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। এরপর দ্রুত গতিতে আরও একটি মোটর বাইকে তিনজন সেখানে এসে উপস্থিত হন। এরপর আনুমানিক ২০ থেকে ২৫ জন দলবদ্ধভাবে লাঠি হাতে ভবনটির ভেতরে প্রবেশ করেন। এরপর লিফটের ভেতরের অন্য একটি ক্যমেরায় দেখা যায়, তারা দলবদ্ধ ভাবে লিফটে প্রবেশ করেন। এসময় একজনের মাথায় একটি লাল হেলমেট এবং দুইজনের মাথায় ক্যাপ পরে থাকতে দেখা গেছে। এরপর ১৮ তলায় একজন লিফটি ধরে দাড়িয়ে থাকেন এবং বাকিরা ভেতরে প্রবেশ করেন। ভেতরের ভাঙচুর করে আবার দলবদ্ধ ভাবে লিফটে দিয়ে নিচে নামতে দেখা গেছে তাদের। ভবনটি থেকে সবাইকে লাঠি হাতে বের হতে দেখা গেছে। পরে ভবনটির বাইরের সীমানা বাউন্ডারির গেটে লাথি দিতে ও লাঠি দিয়ে আঘাত করতেও দেখা যায়। এক পর্যায়ে গেটটি ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে ভাঙচুর করার চিত্র দেখা যায়।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে গুলশান বিভাগের উপ পুলিশ কমিশনার (ডিসি) তারেক মাহমুদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে ও সরাসরি একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সম্ভব হয়নি।

ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম এন্ড অপারেশন্স) এস. এন. মোঃ নজরুল ইসলাম বলেন, গুলশানের  ডিসি তারেক মাহমুদ বিষয়টি সম্পর্কে ভালো বলতে পারবেন। আমি শুনেছি ওখানে হামলার বিষয়ে। দুই হেভিওয়েট ব্যবসায়ীর সমস্যা। আমরা চেষ্টা করছি মিটমাট করতে। তবে এখানে আতঙ্কের কিছু নাই।

এ সম্পর্কিত আরও খবর