জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে মানুষের শরীরে নানারকম অভ্যন্তরীণ এবং বর্হিভূত পরিবর্তন আসে। তবে পুরুষদের তুলনায় নারীদের শরীরে পরিবর্তন বেশি হয়। কৈশোর থেকে শুরু করে মাতৃত্বকালীন, নানা বয়সে নারীদের শরীরে বড় ধরনের আসে বার বার। এরকমই একটি বড় ধরনের পরিবর্তন হলো মেনোপজ।
নারীরা যখন ৪৫-৫০ বছর পার করে, তখন তাদের শরীরে মধ্যবয়সের নানারকম পরিবর্তন আসতে শুরু করে। এসব পরিবর্তনের কারণে সমগ্র শরীরেও নতুন কিছু অবস্থার সৃষ্টি হয়। শরীরের অন্যান্য অঙ্গগুলোও তাতে সমর্থন করতে নিজেদের মধ্যেও পরিবর্তন আনে। তবে সমস্যা হলো, এসব অভ্যন্তরীণ পরিবর্তনের কারণে বাহ্যিক প্রভাবে নারীদের নানা জটিলতার পরতে হয়। নারীদের এই পরিবর্তনের প্রক্রিয়া মেনোপজ নামে পরিচিত।
মেনোপজ হলো নারীদের জীবনের একটি বড় পরিবর্তনের ধাপ। এইসময় ঋতুস্রাবের স্বাভাবিকতা নষ্ট হয়ে অনিয়মিত হতে শুরু করে। এই কারণে আরও কিছু উপসর্গ প্রকট হতে থাকে। যেমন: মেজাজ পরিবর্তন বা মুড সুয়িং, চুল ঝরা, হঠাৎ হঠাৎ বেশি গরম লাগাসহ আরও অনেক কিছু। এইসব সমস্যাগুলো এড়াতে যা করতে পারেন-
১.ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ‘ডি’ সমৃদ্ধ খাবার: মেনোপজ শুরু হওয়ার পর নারীদের দ্রুত হাড় ক্ষয় হতে দেখা যায়, যার ফলে ওস্টেওপোরোসিসের মতো রোগ হতে পারে। ভিটামিন ‘ডি’ এবং ক্যালসিয়াম হাড়ের ক্ষতিপূরণ করে মজবুত করতে কাজ করে। দই, চিজের মতো দুগ্ধজাতীয় খাবার ক্যালসিয়ামের ঘাটতি কমাতে সাহায্য করে। যাদের এইজাতীয় খাবারে হজম বা এলার্জির সমস্যা আছে তারা সবুজ শাক এবং কাঠ বাদাম খেলে উপকার পাবেন। সার্ডিন, শিম বা মটরশুটি জাতীয় খাবার এবং টফুতেও ভরপুর ক্যালসিয়াম থাকে। অন্যদিকে স্যামনের মতো সামুদ্রিক মাছ, ডিমের কুসুম, ম্যাকরেল- এধরনের চর্বিযুক্ত খাবার ভিটামিন ‘ডি’ এর ভালো উৎস।
২. নিয়মিত ব্যায়াম: একটা বয়সের পর নারীদের ওজন বাড়তে শুরু করে, যা নিয়ন্ত্রণে রাখা অনেক জরুরি। এতে মেনোপজের ধাপেও ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। প্রতিদিন অল্প করেও ব্যায়াম করলেও মানসিক চাপ কমে আর মেজাজ নিয়ন্ত্রণে থাকে। শরীরে রক্ত চলাচল ভালো হয়, তার সাথে হৃদক্রিয়াও তরান্বিত হয়।
৩. হরমোন অসুবিধার চিকিৎসা: মেনোপজের সময় নানারকম অস্বস্তিকর উপসর্গ দেখা যায়। যেমন: গরম লাগা, রাতে ঘাম হওয়া, স্পর্শকাতর স্থান শুষ্ক হয়ে যাওয়া, চুল পড়ে যাওয়া ও পাতলা হতে থাকা ইত্যাদি। সাধারণত এই সমস্যাগুলো এরস্ট্রাজেন কমার লক্ষণ। মূলত নারীজাতীয় হরমোন অর্থাৎ, প্রোজেস্টেরন এবং এস্ট্রোজেনের মাত্রা অস্বাভাবিক হলে বা ভারসাম্য হারানোর সঙ্গে এই সমস্যাগুলো সরাসরি সম্পৃক্ত। তাই এই ধরনের সমস্যা দেখা দিলে পরিণতি গুরুতর হওয়ার আগেই অভিজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
৪. বাজারজাত করা খাদ্য পরিহার: মেনোপজ নারীদের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং স্বাভাবিক প্রাকৃতিক পরিবর্তন প্রক্রিয়া। যে বয়সে এই প্রক্রিয়া শুরু হয়, সেসময় রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা প্রয়োজন। কারণ ব্লাডসুগারের তারতম্যের কারণে ক্লান্তি, ওজনবৃদ্ধি, মুড সুয়িংয়ের মতো সমস্যা বাড়তে থাকে।
এইসময় নারীদের স্বাস্থ্যকর পুষ্টিসম্পন্ন খাবার বেশি করে খাওয়া উচিত। যেমন তাজা শাক-সবজি, রঙিন ফল এবং শস্যজাতীয় খাবার। প্রক্রিয়াজাতকারী খাবারে অনেক সময় প্রিজারভেটিভ বা রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা হয়, যা একেইবারেই স্বাস্থ্যকর নয়। তাই বিশাল এই পরিবর্তনের সময়ে অস্বস্তিকর অনুভূতি কমাতে জীবনধারার পরিবর্তন আনা অতীব জরুরি।
তথ্যসূত্র: মেডিক্যাল রিসার্চ.কম