কেবলামুখী (বায়তুল্লাহ) হওয়া নামাজের অন্যতম প্রধান ফরজ। যারা বায়তুল্লাহ দেখতে পাওয়া যায় এমন স্থানে নামাজ পড়েন তাদেরকে হুবহু বায়তুল্লাহ বা হুবহু কাবা শরিফ বরাবর মুখ করে নামাজ আদায় করতে হয়।
আর যেখান থেকে বায়তুল্লাহ দেখতে পাওয়া যায় না, এমন কোনো স্থানে কেউ নামাজ পড়লে (বিশ্বের যে স্থানেই হোক) তার মুখ হুবহু বায়তুল্লাহ বরাবর না হলেও চলে, তবে বায়তুল্লাহর দিকের মধ্যে থাকতে হবে।
কেবলা চিহ্নিত করার জন্য মদিনার মসজিদে নববির মেহরাব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি সেই স্থান, যেখানে ইমাম ফরজ নামাজের ইমামতি করেন।
নবীর মসজিদের মেহরাবের নকশা এবং নির্মাণে অনেক পরিবর্তন এসেছে, যা নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সময় থেকে আজ পর্যন্ত অব্যাহত রয়েছে।
অতীতে মেহরাবগুলো যুগ অনুসারে সংস্কার ও পরিবর্তন করার পাশাপাশি সেগুলোকে বিভিন্ন নকশা দিয়ে সজ্জিত করা হতো।
পবিত্র কোরআনে ‘মেহরাব’ শব্দটি চার স্থানে ব্যবহৃত হয়েছে। প্রতিটি স্থানে ‘বাইত’ (ঘর) এবং প্রার্থনা কক্ষসহ বিষয় অনুসারে শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে।
মসজিদে নববির মেহরাবগুলো কেবল স্থাপত্যের নিদর্শনই নয়, বরং ইসলামি যুগের স্থাপত্যের প্রতিফলন, যা স্পষ্টভাবে মুসলমানদের তাদের পবিত্র স্থানগুলোর প্রতি অঙ্গীকারকে প্রতিফলিত করে।
মসজিদে নববির মেহরাবের ইতিহাস সম্পর্কে পবিত্র মসজিদ বিষয়ক সংস্থা জানিয়েছে, নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং খলিফাদের যুগে কোনো নিয়মিত (নির্মিত) মেহরাব ছিল না। যখন কেবলা পরিবর্তনের নির্দেশ নাজিল হয়, তখন জেরুজালেমের পরিবর্তে কাবার দিকে নামাজ পড়া হতো।
পরবর্তীতে নবী কারিম (সা.) মসজিদে নববির দক্ষিণ দেয়ালের দিকে দাঁড়িয়ে নামাজ পরিচালনা করেন, যা প্রথমে আয়েশা স্তম্ভে এবং পরে আল-মুখলাকা স্তম্ভে স্থানান্তরিত করা হয়।
উমাইয়া আমলে খলিফা ওয়ালিদ ইবনে আবদুল মালিক ৮৮ থেকে ৯১ হিজরির মধ্যে প্রথম কাঠের একটি মেহরাব তৈরি করেন, যা মসজিদের দেয়ালের দিকে কেবলার দিক নির্দেশ করে।
মসজিদে নববিতে একাধিক মেহরাব রয়েছে। প্রথমটি হলো- নবীর মেহরাব, যা রিয়াজুল জান্নাতে মিম্বরের ডান পাশে অবস্থিত এবং আজও নামাজের ইমামতি করার জন্য ব্যবহৃত হয়।
দ্বিতীয় মেহরাবটি অটোমান যুগের এবং মসজিদের কেবলার দিকে মুখ করে থাকা দেয়ালে অবস্থিত। সোলায়মানি (হানাফি) মেহরাবটি মিম্বরের পশ্চিমে এবং ফাতেমা মেহরাব তাহাজ্জুদ মেহরাবের দক্ষিণে অবস্থিত।
মসজিদে নববির মেহরাব স্থাপত্য সভ্যতা, নির্মাণশৈলী এবং সৌন্দর্য শিল্পের এক অনন্য দৃষ্টান্ত। ফলে মসজিদে নববির মেহরাবগুলোতে অত্যন্ত নৈপূণ্যর সঙ্গে খোদাই করে অংকিত ফুল ও বিভিন্ন কারুকার্যের সৌন্দর্য দেখে মসজিদে নববির আশেক ও দর্শনার্থীরা মুগ্ধ না হয়ে পারে না।
বাদশাহ ফাহাদ বিন আবদুল আজিজ মসজিদে নববির মেহরাবগুলোর সাজ-সজ্জা ও সৌন্দর্য বর্ধনে বিশেষ মনোযোগ দিয়েছিলেন। তার সময়ে দামি মর্মর ও মার্বেল পাথর দ্বারা এগুলো সংস্কার করা হয়।