প্রতি মাসে নতুন চাঁদ দেখার ক্ষেত্রে সৌদি আরবের একটি পরিবার অনেকের চেয়ে আলোকবর্ষ এগিয়ে। আরব নিউজের খবর অনুযায়ী, ১০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ঈগল চোখের অধিকারী আল বারঘাশ পরিবার টেলিস্কোপ বা অন্যান্য আধুনিক যন্ত্রপাতি ছাড়াই প্রতি মাসে চাঁদ দেখছে। রিয়াদ থেকে ১৪০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে তামির শহরে বসবাসকারী পরিবারের এই ঐতিহ্য প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে চলে আসছে।
এ প্রসঙ্গে মুতাইব আল-বারঘাশ আরব নিউজকে বলেন, ‘এটি মহান আল্লাহর কাছ থেকে পাওয়া বিশেষ উপহার, যা আমরা উপভোগ করি এবং সন্তানদের শেখানোর চেষ্টা করি। ঠিক যেমনটি আমরা আমাদের বাবা-মা এবং দাদা-দাদির কাছ থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘তার বাবা এবং বন্ধুরা রমজান, ঈদুল ফিতর এবং জিলহজের চাঁদ দেখার জন্য একটি ওয়াচ টাওয়ারে দাঁড়িয়ে থাকতেন।
মুতাইব আল-বারঘাশ তার চাঁদ দেখার অভ্যাস সম্পর্কে বলেন, ‘আমার বাবা আমাকে এবং আমার ভাইদের চাঁদ দেখার প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন যতক্ষণ না এটি আমাদের নেশায় পরিণত হয়।’ ‘আমরা এই জায়গাটিকে একটি মানমন্দিরে (মহাকাশ পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র) পরিণত করার জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছি এবং এখন মানুষ এখানে চাঁদ দেখার প্রশিক্ষণ নিতে আগ্রহী।’
মুতাইব আল-বারঘাশের মতে, ‘চাঁদ দেখার শিল্প’ সম্পর্কে প্রশিক্ষণ ও শিক্ষার উদ্দেশ্য হলো, নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর বাণী অনুসরণ করা, যেখানে মুসলমানদের রমজানের চাঁদ দেখার সঙ্গে সঙ্গে রোজা শুরু এবং শাওয়ালের চাঁদ দেখার সঙ্গে সঙ্গে রোজা ভাঙার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
মুতাইবের দাদা ইবরাহিম ছিলেন একজন পণ্ডিত ব্যক্তি, তিনি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিশক্তির জন্য বিখ্যাত ছিলেন। ‘আমার বাবা আবদুর রহমান এই দক্ষতা তার (দাদার) কাছ থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছিলেন।’ পুরো পরিবার তীক্ষ্ণ দৃষ্টিশক্তির জন্য বিখ্যাত ছিল।
চোখে চাঁদ দেখার জন্য খ্যাতি পাওয়া মুতাইব আরও বলেন, ‘তিনি এবং তার ভাই চাঁদ দেখার ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ, আকাশ মেঘলা থাকলে তা বাধাগ্রস্ত হয়। জলবায়ু পরিস্থিতির কারণে সৌদি আরবের সুদাইর, হাউতা ও তুমাইরসহ বিভিন্ন চাঁদ পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রগুলোরও কিন্তু মতপার্থক্য দেখা যায়। এ বিষয়ে মুতাইব আল বারঘাশ বলেন, ‘আকাশ পরিস্কার থাকলে পাহাড়ের চূড়া চাঁদ দেখার জন্য তিনটি সেরা স্থানের একটি। প্রতি মাসে চাঁদ দেখার জন্য আমরা ১৬ বছর ধরে এটা অনুসরণ করে আসছি।’
প্রযুক্তির কারণে খালি চোখে চাঁদ পর্যবেক্ষণকারীদের অপ্রয়োজনীয় করে তোলার বিষয় সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘পুরাতন এবং নতুন পদ্ধতি একে অপরকে শক্তিশালী করেছে। আমাদের ছেলেরা প্রতি মাসে আমাদের সঙ্গে যায় বিজ্ঞান সঠিকভাবে বোঝার জন্য। আমরা তুমাইর পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের পাঁচজনেরও বেশি লোককে প্রশিক্ষণ দিচ্ছি, যাতে তারা ভবিষ্যতের চাঁদ পর্যবেক্ষক হতে পারে।’
সৌদি আরব চাঁদ দেখার প্রক্রিয়াকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেয় এবং দেশটি সুপ্রিমকোর্ট বেশ কয়েকটি মানদণ্ড ব্যবহার করে চাঁদ দেখার বিশ্বাসযোগ্যতা নিশ্চিত করে। বিশেষ করে পর্যবেক্ষকের চোখের পরীক্ষা। এরপর ফলাফলগুলো বিচার মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত একটি বিশেষ কমিটির কাছে জমা দেওয়া হয় এবং রাজকীয় ডিক্রি দ্বারা অনুমোদিত হয়। বিচারমন্ত্রী কমিটির কাজ পর্যবেক্ষণ করেন।
সৌদি আরবজুড়ে অবস্থিত মানমন্দিরগুলোতে বিচারকদের চাঁদ-পর্যবেক্ষক হিসেবে নিযুক্ত করা হয় এবং বাদশাহ আবদুল আজিজ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কেন্দ্র তা তত্ত্বাবধান করেন। সেখানে চাঁদ-পর্যবেক্ষক এবং জ্যোতির্বিজ্ঞান বিশেষজ্ঞদের পাশাপাশি সরকারি সংস্থার প্রতিনিধিরাও অংশগ্রহণ করেন।