দরজায় কড়া নাড়ছে ঈদুল ফিতর। ঈদ উৎসব কে কেন্দ্র করে জমে উঠেছে দেশের বিপণিকেন্দ্রগুলো। নতুন জামার সঙ্গে নতুন টাকায় ঈদ সালামি বাড়তি আনন্দ দেয় শিশুদের। তাই তো শিশুদের ঈদের আনন্দ দ্বিগুন করতে নতুন টাকায় ঈদ সালামি দেয়ার চেষ্টা থাকে বাড়ির মুরুব্বীদের। সে চেষ্টায় এবার ভাটা পড়ছে ব্যাংক থেকে নতুন নোট সরবরাহ বন্ধ থাকায়। বাড়তি চাহিদায় নতুন টাকার বান্ডিলের মূল্য বেড়েছে খোলাবাজারে।
সরেজমিনে বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) রাজধানীর গুলিস্তানে নতুন টাকার বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়। এদিন অনেক ক্রেতাকে নতুন টাকা কিনতে আসলেও বাড়তি দামে ফিরে যেতে দেখা যায়।
এবার নতুন নোটের বাড়তি চাহিদা ও দাম বাড়ার প্রধান কারণ হচ্ছে নতুন নোট বিনিময় স্থগিত রাখার নির্দেশ দিয়ে বিভিন্ন ব্যাংককে দেয়া বাংলাদেশ ব্যাংকের চিঠি। সে চিঠিতে বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে জনসাধারণের মধ্যে নতুন নোট বিনিময় কার্যক্রম বন্ধ রাখার জন্য পরামর্শ দেওয়া হলো। পাশাপাশি ব্যাংকের শাখায় যে নতুন নোট গচ্ছিত রয়েছে, তা বিনিময় না করে সংশ্লিষ্ট শাখায় সংরক্ষণ করার জন্য বলা হলো। চিঠিতে পুনঃপ্রচলনযোগ্য নোট দ্বারা সব নগদ লেনদেন কার্যক্রম সম্পাদনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নতুন নোটের সবচেয়ে বেশি চাহিদা ১০ ও ২০ টাকার নোটে। তাই এসব নোটে বাড়তি দামও হাকাচ্ছেন বিক্রেতারা। ১০ টাকার এক ব্যান্ডেল টাকায় ১০০ নোটে এক হাজার টাকা হলেও দাম হাকাচ্ছেন ১৬০০ থেকে ১৬৫০ টাকা পর্যন্ত। একই অবস্থা ২০ টাকা নোটের ক্ষেত্রেও। ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা বাড়িয়ে এক বান্ডেল নোটে বিক্রেতারা দাম হাকাচ্ছেন ২৬০০ থেকে ২৬৫০ টাকা পর্যন্ত।
এছাড়াও ২ টাকার ১০ বান্ডিল (২ হাজার টাকা) নতুন নোটের দাম চাওয়া হচ্ছে ৩ হাজার ৫০০ টাকা। ৫ টাকার এক বান্ডিল (৫০০ টাকার মূল্যমান) বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকা। ৫০ টাকার এক বান্ডিল (৫ হাজার টাকা) নোটের দাম বাড়িয়ে রাখা হচ্ছে ৫০০-৬০০ টাকা।
বাড়তি দামের কারণ জানতে চাইলে ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতিবছর ঈদে নতুন টাকা ছাড়ে বাংলাদেশ ব্যাংক কিন্তু এবছর বন্ধ। আমাদের যে ব্যাংক কর্মকর্তারা টাকা সরবরাহ করেন তারাও চাহিদা অনুযায়ী টাকা দিতে পারছেন না। আবার ব্যাংক থেকে নতুন টাকা না দেয়ায় আমাদের কাছে ক্রেতারা বেশি আসছেন। তাই স্বাভাবিক কারণেই দাম বেড়েছে নতুন নোটের।
নতুন নোটের বান্ডিল নিতে গুলিস্তানের টাকা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে দর-দাম করছিলেন ফাতেমা খাতুন। মধ্যবয়সী এই নারী একজন গৃহকর্ত্রী। ঈদে পরিবারের শিশুদের মাঝে ঈদ সালামি বিতরণ করতে নতুন টাকা কিনতে এসে দাম শুনে কিছুটা হকচকিয়ে গেছেন তিনি।
ফাতেমা খাতুন বার্তা২৪.কম কে বলেন, আসলে ঈদ একটা আনন্দের বিষয়। তাই প্রতিবছর ঈদ সালামিটা আমি নতুন টাকায় দেয়ার চেষ্টা করি। ১০০-১৫০ টাকা বাড়তি দিয়েই নতুন টাকার বান্ডিল কিনতে পারলেও এবার অনেক বেশি দাম চাচ্ছে। ১০ টাকা নোটের এক বান্ডিল টাকায় ৫০০ টাকা বেশি দিয়েও পাচ্ছি না। বিক্রেতা ৬০০ টাকায় চায়।
রুবেল মিয়া নামের আরেক ক্রেতা বার্তা২৪.কম কে বলেন, নতুন টাকা কিনতে আসছিলাম। ঈদ এগিয়ে আসলে দাম বেড়ে যাবে তাই নতুন টাকা নিতে একটু আগেভাগেই আসা। তবে তাতে খুব একটা উপকার হয়নি। ব্যাংক থেকে নতুন নোট না ছাড়ার অজুহাতে দাম বাড়িয়ে ফেলছে। দাম বাড়লেও নিতে ত হবেই। এখন দেখি কোথায় একটু কম পাই।
এবার নতুন নোটের বান্ডিলের চাহিদা ও দাম কেমন জানতে চাইলে গুলিস্তানে ২০ বছরেরও অধিক সময় ধরে নতুন টাকার ব্যবসা করে আসা ব্যবসায়ী শাহিন আহমেদ বার্তা২৪.কম কে বলেন, ব্যাংক ত নতুন টাকা দিচ্ছে না। আমরা ব্যাংকের যাদের মাধ্যমে নতুন টাকা পাইতাম তারাও আমাদের চাহিদামতো টাকা দিতে পারতেছে না। এখনও ত কিছু টাকা বেশি দিয়ে হলেও বিক্রি করতে পারতেছি, আর কয়দিন গেলে নতুন টাকায় থাকবে বলে মনে হয় না।