কোথায় পাব করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট?
বাংলাদেশে করোনাভাইরাস-
-
|

মুগদা জেনারেল হাসপাতালে নমুনা দিতে এসেছেন এক নারী
সকাল ৮টা। রাজধানীর মুগদা জেনারেল হাসপাতালের মূল ফটকের সামনে শ’খানেক লোকের এলোমেলো লাইন। বিভিন্ন জায়গায় চার-পাঁচজন করে জটলা পাকিয়ে বসে বা দাঁড়িয়ে আছেন আরো জনা পঞ্চাশেক।
বর্ষার সকালে মেঘ কেটে যাওয়া রোদের তেজ উপেক্ষা করে সবাই অপেক্ষা করছেন কখন ৯টা বাজবে! অপেক্ষায় থাকা বেশিরভাগ মানুষ করোনা সন্দেহভাজন। তাই এসেছেন নিজেদের নমুনা জমা দিতে।
মুগদা হাসপাতালে যারা নমুনা জমা দিতে আসেন তাদের সিরিয়াল টোকেন দেওয়া হয় মূল ফটকের সাথে লাগোয়া ছোট নিরাপত্তা চৌকির কক্ষ থেকে। আগত সবার চোখেমুখে দুশ্চিন্তা, হয়রানি ও ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট।
মঙ্গলবার (২৩ জুন) সকালে সরজমিনে গিয়ে এমন চিত্র লক্ষ্য করা যায় মুগদা হাসপাতালে।
আগতদের মধ্যে চার-পাঁচজনের একটি দলকে দেখা গেল হাসপাতালের সামনে ও ভেতরে উদ্ভ্রান্ত হয়ে ছোটাছুটি করতে। কিছুক্ষণ তাদের অনুসরণ করে বোঝা গেল তারা নমুনা দিতে বা সিরিয়াল নিতে আসেননি।
এগিয়ে গিয়ে কথা বলতে চাইলে তুহিন নামে ত্রিশোর্ধ্ব এক গৃহবধূ জানান, তার স্বামী জয়নাল আবেদিন করোনায় আক্রান্ত ছিলেন, বাড়িতে চিকিৎসা নিয়ে এখন সুস্থ। তবে সুস্থ হওয়ার পরে পেশায় সিকিউরিটি গার্ড জয়নাল তার কর্মক্ষেত্র স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের ইস্কাটন শাখায় যোগ দিতে পারছেন না। কাজে যোগ দিতে গেলে ব্যাংকের ম্যানেজার তাকে করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট নিয়ে যেতে বলেছেন। কিন্তু তাকে তেমন কোন সার্টিফিকেট দেওয়া হয়নি। তার মোবাইলে মেসেজ দিয়ে জানানো হয়েছে তিনি সুস্থ।
এক মাস স্বামীকে নিয়ে প্রাণঘাতী ভাইরাসের সঙ্গে যুদ্ধ করে জয়ী হওয়ার পরে গৃহবধূ তুহিনের এখন শুরু নতুন যুদ্ধ—সনদ জোগাড়ের যুদ্ধ। গত পাঁচদিন ধরে স্বামীর করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট জোগাড় করতে বাড়ি-হাসপাতাল-স্বামীর কর্মক্ষেত্রে ছোটাছুটি করতে হচ্ছে তাকে।
করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেটের জন্য ছুটতে ছুটতে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন গৃহবধূ তুহিন। তিনি বলেন, ‘যাদের কাছে নমুনা পরীক্ষা করতে দিছিলাম তারা বলেন—মোবাইলের মেসেজ দেখালেই হয়, সনদ লাগব না। কিন্তু অফিসে গেলে করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট চায়।’
করোনা নেগেটিভ কাগুজে সনদ না থাকায় বিপাকে পড়েছেন পঞ্চাশোর্ধ্ব ক্যান্সার রোগী মোবারক আলীও। তার নিয়মিত চিকিৎসক করোনার নেগেটিভ সার্টিফিকেট না থাকায় তাকে চিকিৎসা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। চিকিৎসা পেতে নমুনা পরীক্ষা করিয়েছেন এবং নেগেটিভ ফল এসেছে মোবারক আলীর মোবাইল মেসেজে। কিন্তু মেসেজে আস্থা নেই তার চিকিৎসকের। তিনিও কাগুজে সনদ নিয়ে যেতে বলেছেন। তাই এখন করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট জোগাড় করতে গিয়ে হয়রানি শিকার হচ্ছেন মোবারক আলী। রোগে ভোগা ভঙ্গুর শরীরে গত চার দিন ধরে নানান জায়গায় ছোটাছুটি করেও করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট জোগাড় করতে পারেননি তিনি।
শিশু-বৃদ্ধ আর নারী মিলিয়ে এমন পাঁচজন ভুক্তভোগীর দেখা মিলেছে মুগদা জেনারেল হাসপাতালে। সেখানে নমুনা সংগ্রহের দায়িত্বে থাকা এক চিকিৎসা কর্মীও ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, প্রায় প্রতিদিনই এ ধরনের সমস্যা নিয়ে দুই-চার জন আসছেন। আমরা তো নমুনা সংগ্রহ করি, সার্টিফিকেটের ব্যাপারে কিছু জানি না। মোবাইলের মেসেজ দেখেই তো সব হওয়ার কথা। কিন্তু তারা কেন এমন সমস্যায় পড়ছেন সেটা বোধগম্য নয়।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ন্যাশনাল হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোলরুমের সহকারী পরিচালক ডা. আয়েশা আক্তার বলেন, সার্টিফিকেটের ব্যাপারে আমরা কিছু জানি না। তবে কাগুজে সনদের ব্যবস্থা আছ। এগুলো রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) ও এমআইএস দেখে থাকে। তারাই নেগেটিভ ও পজেটিভ সদন দেয়।
বিস্তারিত জানতে কথা হয় আইইডিসিআর পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরার সঙ্গে। বার্তা২৪.কমকে তিনি জানান, আইইডিসিআর থেকে যে নমুনা পরীক্ষা করা হয় সেগুলোর রেজাল্ট আইইডিসিআর দেয়। সেগুলো ই-মেইল বা মোবাইলে মেসেজের মাধ্যমে পাঠানো হয়। প্রয়োজনে কাগুজে সনদও দেওয়া হয়। আমি আইইডিসিআর‘র ব্যাপারটা বলতে পারি। তবে যতটুকু জানি আইইডিসিআর বাদে বাকিটা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও এমআইএস’র তত্ত্ববধানে হয় এবং তারা এ ধরনের সনদ দিয়ে থাকে। আরো সহজ করে বলতে গেলে, নমুনা যে পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করা হয় সনদ তারাই দেয়। সেটা এসএমএস, ই-মেইল বা হার্ড কপি যেটাই হোক না কেন।