প্রথমে বান্ডিল বান্ডিল টাকা, পরে ভিক্ষার কথা, আলোচনায় সাজ্জাদের স্ত্রী

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রামের শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ ওরফে ‘বুড়ির নাতি’কে রাজধানী থেকে গ্রেফতারের পর তার স্ত্রী তামান্না শারমিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা মন্তব্য করে আলোচনায় আসছেন। প্রথমে তিনি ‘কাড়ি কাড়ি বান্ডিল বান্ডিল টাকা ছেড়ে স্বামীকে মুক্ত করার’ ঘোষণা দিলেও পরে জানান, প্রয়োজনে ভিক্ষাও করবেন।

গত শনিবার (১৫ মার্চ) রাজধানীর বসুন্ধরা সিটি শপিং মল থেকে সাজ্জাদকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে ১৭টি মামলার মধ্যে অন্তত দুটি হত্যার অভিযোগ রয়েছে। এরপর তাকে নগরের বায়েজিদ বোস্তামী ও চান্দগাঁও থানায় ১৪ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়।

বিজ্ঞাপন

গ্রেফতারের পর, তামান্না শারমিন একটি ভিডিও বার্তায় বলেন, ‘আমার জামাইকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তবে এটা নিয়ে হায় হুতাশ করার কিছু নেই। মামলার প্রক্রিয়া চলবে, আর সবাই জানবে, আমার জামাই বীরের বেশে ফিরে আসবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এখন তোমরা পলাতক, কিন্তু শিগগিরই আইনি প্রক্রিয়া শেষে আমার জামাই ফিরে আসবে, এবং তখন খেলা শুরু হবে।’

ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর তামান্না তার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট নিষ্ক্রিয় করেন। তবে, তার আরেকটি ভিডিও ভাইরাল হয়ে যায়, যেখানে তিনি বলেন, ‘যারা আমাকে গালমন্দ করছে, তাদের বিরুদ্ধে আমি সাইবার ক্রাইমের মামলা করবো। আমার স্বামীর জন্য ভিক্ষা করতে হলে, তাও আমি করবো। আপনারা যেভাবে কথা বলছেন, সেটা তো আমার পক্ষে নয়, তবে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

বিজ্ঞাপন

এরপর, চট্টগ্রাম নগর পুলিশের কমিশনার হাসিব আজিজ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘সাজ্জাদ দীর্ঘদিন ধরে বায়েজিদ ও চান্দগাঁও এলাকায় চাঁদাবাজি ও ঝুট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ করছিলেন।’

চট্টগ্রামে সাজ্জাদের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা নতুন নয়। গত ২৮ জানুয়ারি রাতে ফেসবুক লাইভে এসে বায়েজিদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আরিফুর রহমানকে প্রকাশ্যে পেটানোর হুমকি দেন সাজ্জাদ। ওই লাইভে তিনি বলেন, ‘তোর (ওসি) যদি শাস্তি না হয়, আমি তোকে কুত্তার মতো পেটাবো। অক্সিজেন থেকে বায়েজিদ পর্যন্ত কুত্তার মতো ন্যাংটা করে পেটাবো। কোর্টের রায় আসা পর্যন্ত তোরা টিকে থাকবি। যেখানেই থাকস আমি পিটাবো। প্রয়োজনে আমি মরে যাবো, তোদেরকে মেরে। তবুও আমি হার মানবো না।’ এই হুমকি দেওয়ার পর থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন ওই ওসি।

এরপর ৩০ জানুয়ারি চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার হাসিব আজিজের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ‘সাজ্জাদ হোসেনকে আইনের আওতায় আনার জন্য পুলিশকে সঠিক তথ্য দিয়ে সহায়তা করলে উপযুক্ত পুরস্কৃত করা হবে, তবে সহায়তাকারীর পরিচয় গোপন রাখা হবে।’

সাজ্জাদের অপরাধজগতের ভয়াবহতা এই কয়েকটি ঘটনায় স্পষ্ট হয়ে ওঠে। তিনি চট্টগ্রামের হাটহাজারী, বায়েজিদ বোস্তামী, চান্দগাঁও এবং পাঁচলাইশ এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছিলেন। তার বাহিনী জানোয়ারের মতো চাঁদাবাজি করতো। সাজ্জাদের অপরাধের শিকড় মাটির গভীরে, যেখানে তার সহযোগীরা, জামায়াত-শিবিরের ক্যাডার হিসেবে পরিচিত, তাকে বিদেশে বসেই চাঁদাবাজি করানোর নির্দেশ দিত।

গত বছর ২৯ আগস্ট নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানা-সংলগ্ন অক্সিজেন–কুয়াইশ সড়কে প্রকাশ্যে দুই ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা করা হয়। মাসুদ কায়সার ও মোহাম্মদ আনিস নামে ওই দুই ব্যক্তিকে হত্যার পেছনে ছিল ব্যবসায়িক আধিপত্য বিস্তার ও রাজনৈতিক মতাদর্শের দ্বন্দ্ব। সাজ্জাদ এই খুনের প্রধান আসামি। এক মাস পর ২১ সেপ্টেম্বর, চান্দগাঁও থানার অদূরপাড়া এলাকায় একটি চায়ের দোকানে মাইক্রোবাস থেকে নেমে স্থানীয় ব্যবসায়ী আফতাব উদ্দিন তাহসীনকে গুলি করে হত্যা করেন।

এছাড়া ১৭ জুলাই চান্দগাঁও থানা পুলিশ অস্ত্রসহ সাজ্জাদকে গ্রেফতার করে, তবে পরবর্তীতে তিনি জামিনে বেরিয়ে আসেন। জামিনে মুক্ত হয়ে, ১৮ সেপ্টেম্বর, বায়েজিদ বোস্তামী থানার কালারপুল এলাকায় শটগান হাতে এসে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। একই বছরের ৫ জুলাই বুলিয়াপাড়া এলাকায় এক বাসায় গুলি চালিয়ে চাঁদা আদায়ের চেষ্টা করেন।

অপরাধী সাজ্জাদ এবং তার বাহিনী সর্বশেষ গত ৫ ডিসেম্বর পুলিশ অভিযান চলাকালীনও গুলি চালিয়ে পালিয়ে যায়। তবে, তার স্ত্রী পরিচয় দেওয়া এক নারীকে আটক করা হয়।