তামাক মুরা বেছেই চলে একাধিক অসহায় বৃদ্ধার সংসার
-
-
|

ছবি: বার্তা২৪.কম
তামাক কারখানায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে ধুলা মিশ্রিত আগাছা থেকে তামাক মুরা বেছে আলাদা করছেন কয়েকজন বৃদ্ধা। দ্রুত হাত চালিয়ে মনযোগী হয়ে কাজ করছেন তারা। অভাবের তাড়নায় অসহায় চাহনিতে হাজিরা তুলতে কাজ করে ফুসরত মিলছে না তাদের। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত কাজ করে কেজিপ্রতি তামাক মুরায় মিলে ৩০ টাকা, এভাবে দৈনিক আয় হয় ১৫০-২৫০ টাকা। কখনো কাজ না থাকায় হাত গুটিয়ে বসে থাকেন তারা। অসহায় এই বৃদ্ধাদের সংসার চালানোর একমাত্র ভরসা তামাক মুরা। রংপুর নগরীর বিভিন্ন তামাক কারখানায় ঘুরে দেখা মিলে অসহায় এসব বৃদ্ধাদের।
তামাক কারখানায় এক কোনে মুরা বাছাই করতে থাকা বৃদ্ধা আছিরুন বেগম বার্তা ২৪. কমকে বলেন, স্বামী নাই, ছেলেও নাই আল্লাহ যে মোক রাখছে কি করিম প্যাটে ভাতে খোয়াই নাগবে। এই বয়সে ভারী কাম করবার পাওনা। মোক দ্যাহার মত কাইয়্যো নাই। একদিন কাজ না করলে প্যাটোত ভাত জোটে না। ধুলা ময়লাত কাজ করি স্বর্দি কাশ হয়, কিন্তু করার কিচু নাই। হাত না নারাইলে ভাত পামো কই? কাই দিবে খোরাক?
তামাক মুরা বাছতে থাকা আরেক বৃদ্ধা জোবেদা বেগম বলেন, তামাকের কারখানা না থাকলে হামার সংসার চলার কোন গতি না আছিল। এত অভাব নিয়া কাম করিয়া দুইটা ট্যাকার মুখ দেকি। ছইল পোইল থাকিয়াও নাই। কাইয়ো খোঁজ নেয় না, দ্যাহে না। দিনে যে কয় ট্যাহা পাই চাইল, ডাইল খরচ নিয়া আনদি বাড়ি খাই। কোনদিন মুরা বাছিয়া ১২০ ট্যাহা, কোনদিন ১৫০ আবার ২০০ ট্যাহাও হয়। কোনমতে টানাটুনি করি চলে সংসার।
অশ্রুসিক্ত কন্ঠে তামাক বাছতে থাকা বৃদ্ধা মরিয়ম বলেন, দুঃখের কথা কয়া কি হইবো? কেউ দ্যাখবো না। বুড়া বয়সে শরীর না চললেও কাম কইরা খাওন লাগবো। আল্লাহ যেদিন স্বামীরে নিছেগা হেদিন থাইকাই দুনিয়া অন্ধকার। ভাগ্যের লেহন আছে কষ্ট! কষ্ট কইরাই জীবন চালাইতে হইবো।
তামাক কারখানায় সুযোগ হয়েছে এসব অসংখ্য অসহায়, অসচ্ছল মানুষের কর্মসংস্থান। পরিবারে অভাব অনটন ঘোচাতে প্রতিনিয়ত কাজ করে যে টাকা আয় হয় তাই দিয়ে চলে তাদের সংসার।