নীলফামারী সরকারি মেডিকেল কলেজ বন্ধের ষড়যন্ত্র, প্রতিবাদে হুঁশিয়ারি

  • ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, নীলফামারী
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

নীলফামারী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল বন্ধের ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে ও স্থায়ী ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠার দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বৃহস্পতিবার সকাল ১১টা থেকে দুপুর একটা পর্যন্ত জেলা শহরের চৌরঙ্গী মোড়ে ওই কর্মসূচি পালিত হয়। নীলফামারীর সর্বস্তরের জনগণ ও শিক্ষার্থীদের ব্যানারে ব্যানারে অনুষ্ঠিত কর্মসূচিতে জেলার পাঁচ উপজেলার মানুষ অংশ গ্রহণ করেন।

বিজ্ঞাপন

এছাড়াও ওই দাবির প্রতি সংহতি প্রকাশ করে, নীলফামারী মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী, ইন্টার্ন চিকিৎসক সোসাইটি, নার্সিং ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী, মানারাত মাদরাসাসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন, ডক্টরস্ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) নীলফামারী জেলা শাখা, জেলা আইনজীবী সমিতি, নীলফামারী প্রেসক্লাব, জেলা কেমিস্ট্রি এন্ড ড্রাগিষ্ট সমিতিসহ বিভিন্ন পেশাজীবী ও সাংস্কৃতিক সংগঠন, জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, জেলা ছাত্রদল, জেলা ছাত্র শিবির, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দল সহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন অংশ গ্রহণ করে।

মানববন্ধন শেষে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তৃতায় ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) নীলফামারী জেলা সভাপতি ডা. সোহেলুর রহমান সোহেল বলেন, ‘২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠিত নীলফামারী মেডিকেল কলেজ। প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রতিষ্ঠানটি নীলফামারী জেলাসহ আশপাশের জেলার জনগণের স্বাস্থ্যসেবা প্রদান ও চিকিৎসাশাস্ত্র শিক্ষার গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে কাজ করছে।

বিজ্ঞাপন

আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে জানাচ্ছি যে, সাম্প্রতিক বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যাচ্ছে দেশের কিছু সরকারি মেডিকেল কলেজ বন্ধ করার আলোচনা করছে সরকার। যেখানে আমাদের প্রতিষ্ঠানটিও অন্তর্ভুক্ত।’

তিনি আরো বলেন, ‘শুরুর দিকে কিছু জনবল ও অবকাঠামোগত ঘাটতি থাকলেও শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের নিরলস ও ঐকান্তিক প্রচেষ্ঠায় রাজশাহী মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয়ের অধীনে অনুষ্ঠিত পেশাগত পরীক্ষাগুলোতে নীলফামারী মেডিকেল কলেজ বরাবরই প্রশংসনীয় ফলাফল অর্জন করেছে। ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে অনুষ্ঠিত প্রথম পেশাগত পরীক্ষায় ২৪টি মেডিকেল কলেজের মধ্যে পাশের হারে নীলফামারী মেডিকেল কলেজ প্রথম স্থান অর্জন করে। এরপরেও অবকাঠামো এবং আবাসন সুবিধার অজুহাতে প্রতিষ্ঠানটিকে বন্ধের পাঁয়তারা চালাচ্ছে একটি মহল।

নীলফামারী মেডিকেল কলেজের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী হরি মোহন রায় বলেন, কলেজটি প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে অবকাঠামো ও আবাসন সমস্যা থাকলেও বর্তমানে সে সমস্যা নেই। স্থায়ী ক্যাম্পাস না থাকলেও নবনির্মিত সরকারি ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি (আইএইচটি) ভবনটি বর্তমানে অস্থায়ী ক্যাম্পাস হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। ওই ভবনে দুইটি লেকচার গ্যালারি, ১০টি শ্রেণি কক্ষ, একটি লাইব্রেরি, একটি কনফারেন্স রুম, অফিস কক্ষসহ অধ্যক্ষের কার্যালয় এবং বিভিন্ন বিভাগের অফিস রুমসহ একটি অ্যাকাডেমিক কাম প্রশাসনিক ভবনে চলছে নীলফামারী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের কার্যক্রম।

আইএইচটি ভবনের পাশে চারতলা ভবনে ১৫০জন ছাত্র এবং পাঁচ তলা ভবনে ২০০ জন ছাত্রীর মানসন্মত আবাসিক সুবিধা রয়েছে। বর্তমানে নীলফামারী মেডিকেল কলেজের ১৮টি বিভাগে মোট ৫৬ জন শিক্ষক কর্মরত আছেন। এই প্রতিষ্ঠানের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা এমবিবিএস ডিগ্রি সম্পন্ন করে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালে ইন্টার্নশিপ করছেন।

নীলফামারীর সর্বস্তরের জনগণের পক্ষে জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মারুফ পারভেজ প্রিন্স বলেন,‘ইতিমধ্যে নীলফামারী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের অস্থায়ী ক্যাম্পাসের (আইএইচটি ভবন) সাথে লাগোয়া ২৭ দশমিক ৪৬ একর জমি অধিগ্রহণ করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। মাস্টার প্লানে প্রস্তাবিত ৩৫টি স্থাপনার নির্মাণ কার্যক্রম শুরুর জন্য প্রশাসনিক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। এরপরও একটি মহল অবকাঠামো এবং আবাসন সুবিধার অজুহাতে প্রতিষ্ঠানটিকে বন্ধের পাঁয়তারা চালাচ্ছে।’

সমাবেশে অন্যান্যদের মধ্যে জেলা বিএনপির সভাপতি আ.খ.ম আলমগীর সরকার, জেলা জামায়েতের সহকারী সেক্রেটারি ও জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আল ফারুক আব্দুল লতিফ, জেলা জজ আদালতের জিপি আবু মো. সোয়েম, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শেফাউল জাহাঙ্গীর আলম শেফু, পৌর বিএনপির সভাপতি মাহবুব উর রহমান, সদর উপজেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি আহমেদ রায়হান, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মারুফ পারভেজ প্রিন্স, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মোর্শেদ আযম, ছাত্রনেতা শ্রেষ্ঠ সরকার, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন জেলা কমিটির আহ্বায়ক সৈয়দ মেহেদী হাসান আশিক, নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা মো. আব্দুর রহিম, ড্যাবের জেলা সভাপতি মো. সোহেলুর রহমান সোহেল, নীলফামারী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল ইন্টার্ন ডক্টরস সোসাইটির পক্ষে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ডা. আহসান হাবিব সোহান, শিক্ষার্থীদের পক্ষে শিক্ষার্থী অর্পিতা চৌধুরী, হরি মোহন রায়, বাঁধন আচার্য, কাজী রাহাতুল জান্নাত, ইয়ামান ইসলাম ইমন, জান্নাতুল ফেরদৌস জীবন প্রমুখ।

সমাবেশে বক্তারা নীলফামারী মেডিকেল কলেজ বন্ধের ষড়যন্ত্রকারীদের কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে উচ্চারণ করে তিনি বলেন বলেন,‘ষড়যন্ত্রকারীদের প্রভাবে বর্তমান সরকার এমন সিদ্ধান্ত যে দিনই নিবে সেদিন থেকে নীলফামারী জেলা ‘ব্লকেড’ ঘোষণা করা হবে। সারা দেশের সঙ্গে সড়ক পথ, রেলপথ ও আকাশ পথের যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়া হবে।’

বক্তারা সরকারের দৃস্টি আকর্ষণ করে আরো বলেন, নীলফামারী মেডিক্যাল কলেজ এ জেলাসহ আশপাশের পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর এবং লালমনিরহাট জেলার মানুষের স্বাস্থ্যসেবা এবং চিকিৎসাশাস্ত্র শিক্ষার গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় নিয়ে দ্রুত স্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণ করে প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ ও সরঞ্জামের মানোন্নয়নের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটির সকল কার্যক্রম সচল রাখবে সরকার।

সমাবেশ শেষে একই দাবিতে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করেন। জেলা প্রশাসকের পক্ষে স্মারকলিপি গ্রহণ করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. সাইদুল ইসলাম।