‘কেউ আসেন আগুন নেভাতে, কেউ লুট করতে’
-
-
|

ছবি: বার্তা ২৪
‘কেউ আসে আগুন নেভাতে। আবার কেউ কেউ আসে সেই সুযোগে লুটপাট করতে। যার যার ঘর নিয়ে সবাই ব্যস্ত। সেই সুযোগে সাহায্য করার নামে কিছু লোক এখানে লুটপাট করেছে।’ আক্ষেপের সুরে কথাগুলো বলছিলেন ভাষানটেক বস্তির বাসিন্দা ইব্রাহীম।
রাজধানীর ভাষানটেক এলাকার বিআরপি বস্তিতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় শতাধিক বাড়িঘর পুড়ে ছাই হয়েছে। পাশাপাশি বস্তি লাগোয়া ৫ টিরও বেশি দোকান পুড়েছে। দোকানের মালামাল কিছুটা সরিয়ে নেয়া গেলেও সরানো মালামাল লুট হওয়ার অভিযোগ তোলেন দোকান মালিকরা ও পুড়ে যাওয়া বাড়ির বাসিন্দারা।
বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) সকাল ১০ টার পর বস্তির একটি বাড়িতে আগুনের সূত্রপাত হয়। বাড়িগুলো লাগালাগি থাকায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ৫ টি ইউনিট গিয়ে বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে এলাকাবাসীর সহায়তায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
যেভাবে লুট হয় মালামাল:
বিআরপি বস্তির বাসিন্দা নুরুল ইসলাম। থাকার ঘরের সঙ্গে একটি মুদি দোকান খুলেছেন তিনি। বস্তিতে আগুন লাগার পর দোকানের কর্মচারীর সহায়তায় দোকানের কিছু মালামাল বের করতে শুরু করেন তিনি। শিশু সন্তানকে কোলে নিয়ে ঘরের মালামাল সরাতে ব্যস্ত তার স্ত্রী শিউলি আক্তার। দোকানের কয়েক বস্তা চাল, ডাল সরানো গেলেও ফ্রিজটি ভেতরেই থেকে যায়। আগুনের খবর চারদিকে ছড়িয়ে গেলে আশেপাশের এলাকা থেকে লোকজন আসা শুরু করে। দোকানের মালামাল সরানোর সময় নুরুল ইসলাম খেয়াল করেন, তার ফ্রিজটি কয়েকজন লোক দোকান থেকে বের করছেন। লোকজনের সহযোগিতা দেখে তিনি খুশি হলেও বিপত্তি বাধে আগুন নেভার পর। চারপাশে খুঁজেও ফ্রিজটির নাগাল পাননি তিনি। খেয়াল করেন যে, দোকান থেকে উদ্ধার করা মালামালের বেশিরভাগই সবার চোখের সামন দিয়ে লুট হয়েছে।
নুরুল ইসলাম বলেন, 'বেশিরভাগ তো আগুন খেয়ে দিলো। যা বাকি ছিল সেখান থেকেও মানুষ লুট করছে। হায় আল্লাহ, আমি কার কাছে যাবো এখন। গতকাল ৩ লাখ টাকার মালামাল কিনেছি দোকানের জন্য। আগের ৩ লাখ টাকার মালামাল ছিল। এখন সব মিলিয়ে ২ লাখ টাকারও নাই। আমার সব গেলো।'
শুধু দোকানেই লুটপাট নয়। ফায়ার সার্ভিস আগুন নেভানোর পর পড়ে থাকা ছাই নিয়ে যখন বাড়ির মালিকরা আহাজারি করছেন। তখন উদ্ধারকাজের নামে একদল লোক লুটপাটে ব্যস্ত। বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরে আসলে তারা দ্রুত ঘটনাস্থল খালি করেন।
আগুনে পুড়ল সবকিছু:
বস্তিতে প্রায় ১ বছর থেকে ভাড়া থাকেন প্রতিবন্ধী সুফিয়া বেগম ও শামসুন্নাহার বেগম। ষাটোর্ধ্ব বয়সের এই দুই বৃদ্ধা ভিক্ষা করে বেঁচে থাকেন। সুফিয়া বেগম প্রতিবন্ধী হওয়ায় তাকে চলাফেরা করতে হয় হুইল চেয়ারে। প্রতিদিন মতো সকাল ৬ টায় দুই বোন বেরিয়ে পড়েন ভিক্ষা করতে। দুপুরে ফিরে দেখলেন তাদের ঘরে ছাই ছাড়া কিছুই অবশিষ্ট নেই। ট্রাঙ্কে রাখা কিছু টাকাও পুড়ে ছাই হয়েছে। তারা দুজনেই কান্নায় ভেঙে পড়ার পর একে অপরকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন। পড়নের কাপড়, সকালের ভিক্ষা করা ৩০০ টাকা ছাড়া তাদের আর কিছুই বেঁচে নেই।
‘কলেজ গেছি, আইসা দেহি আগুন আর আগুন। ট্রাঙ্কের ভিতরে থাকা আমার সার্টিফিকেট গুলাও শ্যাষ। বই গুলাও পুড়ছে।‘ বলছিলেন সাগর নামের এক শিক্ষার্থী।
আগুন লাগার ঠিক আগে কোলের শিশু ঘুমিয়ে পড়লেও কোলে নিয়েই বাইরে যান মা শিউলি আক্তার। তিনি বলেন, সব পুড়ে শ্যাষ। আল্লাহ আমার কোলের বাচ্চারে নিজ হাতে বাঁচাইচে বাবা। আইজ ওরে কোলে নিয়্যা বাইরা আছিলাম।‘
ফায়ার সার্ভিসের মিডিয়া সেলের কর্মকর্তা তালহা বিন বলেন, প্রাথমিকভাবে আগুন লাগার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি। এছাড়া আগুনে হতাহত হয়েছে এমন খবরও পাওয়া যায়নি।