কুড়িগ্রামের সদর উপজেলার ঘোগাদহ ইউনিয়নে আব্দুল জব্বার খন্দকার নামের ৭০ বছরের এক বৃদ্ধকে অপারেশন ডেভিল হান্টে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। অভিযোগ উঠেছে, জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জেরে ওই বৃদ্ধকে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত দেখিয়ে অপারেশন ডেভিল হান্টের মাধ্যমে বৃদ্ধকে গ্রেফতারে সহায়তা করছে প্রতিপক্ষ।
কুড়িগ্রাম জেলার ঘোগাদাহ ইউনিয়নের কামার হাইল্যা গ্রামে এই ঘটনা ঘটেছে। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি মধ্যরাতে অপারেশন ডেভিল হান্টে বৃদ্ধ জব্বারকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গত বছরের ৪ আগস্ট কুড়িগ্রামের ঘোষপাড়া এলাকায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-ছাত্রতার কর্মসূচিতে হামলার ঘটনায় আটক দেখিয়ে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়।
জানা যায়, বৃদ্ধ আব্দুল জব্বারের সাথে দীর্ঘদিন ধরে, একই গ্রামের হাবিবুর রহমান (৪৫), ছকিবর রহমান (৪০), আফজাল হোসেন (৩৭), একরামুল হক (৩০), হামিদুল ইসলাম (২৭), শফিকুল ইসলাম ওরফে ফটকা (২৫) ও শাহ আলম (৪৩) গংয়ের জমিজমা নিয়ে বিরোধ চলছে। ঘোগাদাহ মৌজার আরএস-১৮৬ খতিয়ানের ৩৭৩৯ ও ৩৭৪১ দাগে মোট ৫ শতাংশ জমি প্রতিপক্ষগণ স্থানীয় ঈদগাহ মাঠের বলে দাবি করেন। তবে ওই জমির আরএস রেকর্ড, কবলা দলিল রয়েছে আব্দুল জব্বারের নামে। জমির নিয়মিত খাজনাও পরিশোধ করছেন তিনি। জব্বারের বাড়ির উঠোন সংলগ্ন প্রায় ৪০ বছরের ভোগ দখলীয় এই জমিতে ছিল ৩৫টি বিভিন্ন প্রজাতির গাছ, একটি টিনের চালা, পাকা নলকূপ ও চারদিকে টিনের বাউন্ডারি।
জব্বারের পরিবার ও স্থানীয়দের মধ্যে রফিকুল ইসলাম (৩৫), ইউসুফ আলী (৫০), দেলোয়ার খন্দকার (৭৫), নবুয়ত হোসেন (৪৫), আবু শামা (৬৫), সোহেল রানা (২৬), হোসনে আরা (২৮) জানান,
জব্বারের পরিবার ও প্রতিবেশীরা জানায়, প্রতিপক্ষের লোকজন জোরে জমি দখল করার চেষ্টা করলে জব্বার খন্দকার আদালতে একটি নিষেধাজ্ঞা মামলা করেন। সেই নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে গত ১০ ফেব্রুয়ারি প্রতিপক্ষের লোকজন লাঠিসোঁটা ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে নানা রকম ভয়ভীতি দেখিয়ে জব্বারের সমস্ত স্থাপনা উচ্ছেদ ও সকল গাছ কেটে দেয়। এতে টাকার অঙ্কে আনুমানিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় ২ লাখ ২৫ হাজার। এরপর গত ১৪ ফেব্রুয়ারি মধ্যরাতে অপারেশন ডেভিল হান্টে বৃদ্ধ জব্বারকে গ্রেফতার করে পুলিশ। কুড়িগ্রাম থানার মামলা নং-১১, জিআর নং-৩১৭/২৪।
প্রতিপক্ষদের মধ্যে একজন হাবিবুর রহমান (৪৫)। তিনি জানান, এই জমি জব্বার দীর্ঘদিন থেকে জবরদখল করছেন, তারা সকলে মিলে ঈদগাহ মাঠের এই জমি উদ্ধার করে সাইন বোর্ড স্থাপন করেছেন। তবে জব্বার আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন আমার সঠিক জানা নেই।
ঘোগাদহ ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ড সদস্য খোরশেদ আলম (৩৬) জানান, জমি নিয়ে উভয় পক্ষের দীর্ঘদিন থেকে বিরোধ চলছে তবে আমার জানামতে এই জমি পূর্বে হিন্দুদের ছিল তারা ঈদগাহ কমিটির কাছে বিক্রি করেছেন।
কুড়িগ্রাম সদর থানার তদন্ত কর্মকর্তা আব্দুর রহিম জানান, আমরা পর্যাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে তদন্ত করে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করছি।
এদিকে, ভুক্তভোগী আব্দুল জব্বারের পরিবার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে ক্ষতিপূরণ ও প্রকৃত দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছেন।