যৌতুকে দাবিতে স্ত্রীকে পিটিয়ে হত্যা
বিয়ের ৮ মাসের মাথায় স্বপ্নের সোনার সংসার শেষ হয়ে গেছে লামিয়া আক্তার তিন্নি (২০) নামের এক গৃহবধূর। স্বামী মনিরুলের লাঠির আঘাতে নির্মম ভাবে নিহত হয়েছেন তিন্নি।
মঙ্গলবার (৩ নভেম্বর) সন্ধ্যার পরে বরগুনার আমতলী উপজেলার আরপাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের তারিকাটা গ্রামে এই ঘটনা ঘটে।
নিহত লামিয়া আক্তার তিন্নি উপজেলার চাওড়া ইউনিয়নের চন্দ্রা গ্রামের নিজাম উদ্দিন হাওলাদারের মেয়ে।
জানা গেছে, চলতি বছরের মার্চ মাসে তিন্নির সঙ্গে একই গ্রামের হারুন খানের ছেলে অটোরিকশা চালক মনিরুলের বিয়ে হয়। তিন্নি তখন এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিল।গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় স্ত্রীর ওপর পরকিয়ার অভিযোগ মনিরুল তিন্নির মাথায় লাঠি দিয়ে আঘাত করে। এতে অজ্ঞান হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পরে তিন্নি। তখন মনিরুল ও তার পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতায় তিন্নিকে চিকিৎসার জন্য আমতলী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে জরুরী বিভাগের চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনা দেখে মনিরুল স্ত্রীর মরদেহ ফেলে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। তখন হাসপাতালে উপস্থিত জনতা তাকে আটক করে আমতলী থানা পুলিশের হাতে তুলে দেয়।
পুলিশ তিন্নির মরদেহ হাসপাতাল থেকে উদ্ধার করে বুধবার সকালে ময়না তদন্তের জন্য বরগুনার জেনারেল হাসপাতালে পাঠায়।
তিন্নির ভাই রাব্বি হাওলাদার অভিযোগ করে বলেন, আমার বোনকে ৩ লাখ টাকা যৌতুকের জন্য পিটিয়ে হত্যা করেছে। বিয়ের সময় আমার বাবা তিন্নির সুখের কথা ভেবে সংসারে মালামাল, গলার চেইন ও কানের দুল দিয়েছিল। কিন্তু আমার বোনের কপালে সেই সুখ সইলোনা। মাত্র ৮ মাসের মাথায় তাকে ৩ লাখ টাকার জন্য পিটিয়ে হত্যা করা হলো।
চাওড়া ইউনিয়নের চন্দ্রা গ্রামের ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য রুহুল আমিন বলেন, যৌতুকের জন্য তিন্নি আক্তার লামিয়কে স্বামী মনিরুল এবং তার শ্বশুর হারুন খান, শাশুড়ি লাইলী বেগম প্রায়ই নির্যাতন করতো। ঘটনার দিন মনিরুল তিন্নির নিকট ৩ লাখ টাকা যৌতুক দাবী করে। এ টাকা দিতে না পারায় তাকে পিটিয়ে হত্যা করে। আমরা এই ঘটনার বিচার চাই।
তবে অভিযুক্ত মনিরুল ইসলামের অভিযোগ তিন্নি পরকীয়া করতো। আমি নিষেধ করার পরও সে শুনতো না। ওই বিষয় নিয়ে স্থানীয়ভাবে সালিশ দরবারও হয়েছে।
ঘটনার দিন রাতে পরকীয়া নিয়ে তাদের মধ্যে ঝগড়ার এক পর্যায়ে মাথায় লাঠির আঘাতে তিন্নির মৃত্যু হয় বলেও স্বীকার করে মনিরুল।
আমতলী হাসপাতালের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক ডা. মনিরুজ্জামান খান বার্তা২৪.কমকে বলেন, তিন্নির মাথায় লাঠির আঘাতের চিহ্ন ছিল। হাসপাতালে আনার আগেই তার মুত্যু হয়।
আমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তদন্ত মো. আমির হোসেন সেরনিয়াবাদ বার্তা২৪.কমকে বলেন, হাসপাতাল থেকে তিন্নির মরদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য রগুনার মর্গে পাঠানো হয়েছে। নিহত তিন্নির স্বামী মনিরুলকে আটক করা হয়েছে। এই বিষয়ে মামলার প্রস্ততি চলছে।