রমজান মাসে টিসিবির পণ্য বিক্রি কার্যক্রম বরিশাল নগরীজুড়ে ব্যাপকভাবে চলছে। তবে এই কার্যক্রমে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে বিভিন্ন অভিযোগ উঠে এসেছে। বিশেষ করে সিটি কর্পোরেশনের পরিচিত বা স্বজনরা একাধিক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে পণ্য কিনে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এই অনিয়মের ফলে প্রকৃত গরীব ও ভুক্তভোগীরা পণ্য পাচ্ছেন না এবং তাদের মধ্যে হতাশা তৈরি হচ্ছে।
বরিশাল নগরীজুড়ে ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের খান সড়ক, সিকদার পাড়া ও আমতলা মোড়ের স্বাধীনতা পার্কের মডেল মসজিদের সামনে মঙ্গলবার ( ২৫ ফেব্রয়ারী) সকাল সাড়ে ১১টায় টিসিবির দুটি ট্রাক এসে পণ্য বিক্রি শুরু করে। প্রথম দিকে ২০০ জনের জন্য টিসিবির পণ্য ছিল, কিন্তু তা পর্যাপ্ত না হওয়ায় অনেকেই হতাশ হয়ে ফিরে গেছেন। এতে দেখা গেছে, কেউ কেউ দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও পণ্য সংগ্রহ করতে পারেননি।
এ বিষয়ে কথা হলে, খান সড়ক এলাকার বাসিন্দা বেবি ইসলাম ও সুলতানা নাজ জানান, তারা সিটি করপোরেশন থেকে টিসিবি কার্ড পেয়েছিলেন। তবে তাদের ভোটার আইডি ঢাকা জেলার হলেও তারা বরিশালে বসবাস করছেন এবং স্থানীয় ভোটার হওয়ার চেষ্টা করছেন। কিন্তু, তাদের ফ্যামিলি কার্ড অজ্ঞাত কারণে বাতিল হয়ে গেছে। পুনরায় আবেদন করেও এখন পর্যন্ত নতুন কার্ড পাননি।
বেবি ইসলাম বলেন, আমরা আমাদের পরিবারের জন্য একটি মাত্র কার্ড নিয়ে ছিলাম। কিন্তু বর্তমানে কার্ড না থাকার কারণে লাইনে দাঁড়িয়ে পণ্য কিনতে চেষ্টা করছি। সুলতানা নাজও একই অভিযোগ জানিয়ে বলেন, আমার শারীরিক অবস্থা খারাপ, কিন্তু পণ্য পাওয়ার আশায় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকলেও দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর পণ্য পাওয়া অসম্ভব মনে হচ্ছে। আমাদের জন্য টিসিবি কার্ড অনেক জরুরি।
এ বিষয়ে বরিশালের টিসিবির কর্মকর্তা শতদল মন্ডল জানান, যারা আবেদন করেছেন, তাদের দ্রুত স্মার্ট ফ্যামিলি কার্ড দেওয়া হবে। তবে, বরিশাল বা ঝালকাঠির কার্ড ঢাকা বা অন্যত্র ব্যবহৃত হবে না, এবং সেগুলোকে শুধু তাদের নিজ নিজ এলাকায় ব্যবহারের জন্য বৈধ করা হবে। তিনি আরও বলেন, আজ একদিনে তো এই ট্রাকের পণ্য বিক্রি শেষ হবে না। পুরো রমজান মাসজুড়ে এই বিক্রি চলবে।
টিসিবি কর্মকর্তারা আরও জানান, স্মার্ট ফ্যামিলি কার্ডধারী ব্যক্তিরা সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য পাবেন। এই পণ্যগুলির মধ্যে রয়েছে ভোজ্য তেল, ডাল, চিনি, ছোলা এবং খেজুর। ট্রাকের মাধ্যমে ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে পণ্য বিক্রি শুরু হয়ে, বরিশালসহ বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে এই কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
এদিকে, বরিশালে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে বিক্রি হওয়া পণ্যের তালিকা কিছুটা এই রকম ছিল: ভোজ্য তেল ২ লিটার প্রতি লিটার ১০০ টাকা, মশুর ডাল ২ কেজি প্রতি কেজি ৬০ টাকা, চিনি ১ কেজি প্রতি কেজি ৭০ টাকা, ছোলা ২ কেজি প্রতি কেজি ৬০ টাকা, খেজুর ৫০০ গ্রাম ৭৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
যদিও, ক্রেতারা ট্রাক থেকে ৫৯০ টাকায় প্যাকেজ ক্রয় করতে বাধ্য হচ্ছেন, কারণ ৫৮৮ টাকার প্যাকেজে খুচরো দুই টাকা নিয়ে সমস্যা তৈরি হচ্ছে। এতে ২০০ থেকে ৪০০ টাকা অতিরিক্ত আদায় হলেও, সাধারণ মানুষ হাসিমুখে তা মেনে নিচ্ছেন।
এদিকে, অনেক ক্রেতা অভিযোগ করেছেন, তাদের ট্রাক থেকে পণ্য কেনার সময়, বেশ কিছু লোক একাধিক ব্যক্তিকে লাইনে দাঁড় করিয়ে পণ্য সংগ্রহ করছেন। এতে প্রকৃত ভুক্তভোগীরা সঠিকভাবে পণ্য পেতে পারছেন না। বেশ কিছু মানুষ বলেন, এভাবে পরিচিতজনদের মাধ্যমে পণ্য কেনার জন্য লাইনে দাঁড়ানো হয়, যার ফলে সাধারন গরীব মানুষের সুযোগ হয়ে ওঠে না।
এ বিষয়ে টিসিবির বরিশালের উপপরিচালক শতদল মন্ডল আরও জানান, নগরীতে মোট ১০টি ভ্রাম্যমাণ ট্রাক রয়েছে এবং এর নিয়ন্ত্রণ বরিশাল সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষের হাতে রয়েছে। তাদেরকে এই বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে। তবে, কিছুটা অনিয়ম হচ্ছে না, তা বলা যাবে না। তাই, ক্রেতাদের নৈতিকতা ও সিটি করপোরেশনের সচেতনতা জরুরি। রমজান মাসের আত্মশুদ্ধি বোধ যতো বেশি হবে, ততোই সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখা সম্ভব।
বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল বারী বলেন, এটা অবশ্যই হতে পারে। কার্ডধারীরা একসঙ্গে ২০০ জন করে পণ্য কেনার সুযোগ পাচ্ছেন। এ কারণে ট্রাকের আগমন পূর্বে লাইনে দাঁড়িয়ে যারা প্রস্তুত ছিলেন, তাদের জন্য এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। সব সময় ভ্রাম্যমাণ ট্রাক থাকবে, তবে কখন কোথায় ট্রাক আসবে তা আগে থেকে বলা যায় না।