ফেনীর পরশুরাম উপজেলায় বাবাকে গরম তেল ছুড়ে ঝলসে দেওয়ার ঘটনায় বাবার করা মামলায় অভিযুক্ত মেয়ে ফাতেমা আক্তার নিহাকে (১৩) গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
সোমবার (৩ মার্চ) গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পরশুরাম মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নুরুল হাকিম।
এর আগে দগ্ধ মো. নূর নবী বাদী হয়ে চারজনকে আসামি করে পরশুরাম মডেল থানায় একটি মামলা করেন। মামলার অন্য আসামিরা হলেন- নিহার নানা ও ভুক্তভোগীর সাবেক স্ত্রীর বাবা পৌরসভার দক্ষিণ কোলাপাড়া এলাকার মনির আহম্মদ (৬০), তার ছেলে মো. জাবেদ (৩০) ও ভুক্তভোগীর ভাই বাঁশপদুয়া এলাকার মৃত সাহাব উদ্দিনের ছেলে আব্দুর রহিম (৩৯)। তাদের মধ্যে মো. জাবেদকেও গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, রোববার (২ মার্চ) দুপুরে ভুক্তভোগী বাদী হয়ে ৪ জনের বিরুদ্ধে পরশুরাম মডেল থানায় মামলা করেন। ভুক্তভোগীর মেয়েকে জিজ্ঞাসাবাদে সে তেল ছুড়ে ঝলসে দেওয়ার ঘটনাটি স্বীকার করে। তিনি জানান তার মাকে ডিভোর্স দেওয়ার কারণে সে ক্ষুব্ধ হয়ে এই কাজটি করেছে।
ভুক্তভোগী নূর নবী বলেন, বিছানায় শুয়ে থাকা অবস্থায় আমার মেয়ে হঠাৎ এসে আমার মুখ ও শরীরে গরম তেল ছোড়ে মারেন। এতে আমার মুখসহ শরীরের একটি অংশ ঝলসে গেছে। এর আগে তার সঙ্গে আমার তেমন কোনো ধরনের রাগারাগিও হয়নি। বর্তমানে তিনি ফেনী জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
এদিকে, মামলার বিবাদী ও ভুক্তভোগীর (নূর নবী) ভাই আবদুর রহিম বলেন, আমি, আমার শ্বশুর মনির আহমদ এবং শ্যালক মো. জাবেদ এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত নই। ঘটনার সময় আমি এলাকায় ছিলাম না। আমাদেরকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। লামিয়া হত্যাকাণ্ড ধামাচাপা দিতে এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
এ বিষয়ে পরশুরাম মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নুরুল হাকিম জানান, ভুক্তভোগীর মেয়েকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে তেল ছুঁড়ে ঝলসে দেওয়ার ঘটনাটি স্বীকার করে। সে জানায়, তার মাকে ডিভোর্স দেওয়ার কারণে সে ক্ষুব্ধ হয়ে এই কাজটি করেছে। ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে ভুক্তভোগী তার মেয়েসহ চারজনকে আসামি করে থানায় মামলা করেছেন। এ মামলার প্রেক্ষিতে ভুক্তভোগীর মেয়ে ও তার মামাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মামা বর্তমানে কারাগারে আছেন এবং নিহাকে গাজীপুর সংশোধনাগারে পাঠানো হবে বলে জানান তিনি।
উল্লেখ্য, গত বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি মো. নূর নবীর বাড়িতে গিয়ে নিজেদের পল্লী বিদ্যুতের লোক দাবি করে দরজা খুলতে বলেন হেলমেট পরা দুই যুবক। তখন ভেতর থেকে শিশুরা দরজা খুলে দিলে তারা (দুই যুবক) ঘরের ভেতরে ঢুকে শিশু লামিয়াকে (৭) স্কচটেপ দিয়ে হাত-পা ও মুখ বেঁধে হত্যা করে। এ সময় বড় বোন পালিয়ে গিয়ে পাশের একটি বাড়িতে আশ্রয় নেয়। গত কয়েক দিন আগে এ ঘটনার একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী নিহাকে কে বা কারা বাড়ির বাইরে ডেকে নিয়ে যায়। পরবর্তী বিষয়টি নিয়ে নিহার কাছে তার বাবা জানতে চাইলে তাদের মধ্যে তর্কবিতর্ক হয়। সর্বশেষ শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বিছানায় শুয়ে থাকা অবস্থায় তার বাবাকে গরম তেলে ঝলসে দেয় নিহা।