উত্তেজনা সত্ত্বেও সম্পৃক্ততা অপরিহার্য: উপলব্ধি করছে চীন-ভারত
-
-
|

উত্তেজনা সত্ত্বেও সম্পৃক্ততা অপরিহার্য: উপলিব্ধ করছে চীন-ভারত, ছবি: বার্তা২৪
জোহানেসবার্গে জি-২০-তে পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলনে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর এবং চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইয়ের মধ্যে বৈঠক দু'দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের জটিল এবং ক্রমবর্ধমান বাস্তবতার ওপর জোর দিয়েছে। যদিও এই আলোচনার বৃহত্তর বিষয় ছিল বহুপাক্ষিকতার গুরুত্ব, বৈঠকটি এমন এক সময়ে হয়েছিল যখন উভয় দেশ বছরের পর বছর ধরে চলা বিরোধের পর সতর্কতার সঙ্গে তাদের সম্পর্ক পুনর্নির্মাণ করছে।
আলোচনাটি মূলত ক্রমবর্ধমান মেরুকৃত বিশ্বে জি-২০-কে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম হিসাবে বজায় রাখার জন্য তাদের যৌথ প্রতিশ্রুতির ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছিল। এটি উভয় পক্ষের একটি বাস্তববাদী দৃষ্টিভঙ্গির ইঙ্গিত নির্দেশ করে, বৈশ্বিক স্থিতিশীলতাকে অগ্রাধিকার দেয় এবং তাদের পার্থক্যগুলিকে একটি পৃথক পথে চালিত করে।
বলার অপেক্ষা রাখে না যে, বহুপাক্ষিকতা সর্বদা একটি সূক্ষ্ম ভারসাম্যমূলক কাজ, বিশেষ করে যখন প্রধান শক্তিগুলি আঞ্চলিক এবং বৈশ্বিক বিষয়গুলিতে নিজেদের মধ্যে মতবিরোধের সম্মুখীন হয়। বিশ্বের দুটি বৃহত্তম অর্থনীতি এবং উদীয়মান ভূ-রাজনৈতিক শক্তি হিসাবে ভারত এবং চীন প্রায়শই কৌশলগত স্বার্থের বিপরীত দিকে নিজেদের চালিত করে। তা সত্ত্বেও জি-২০'কে একটি কার্যকরী প্ল্যাটফর্ম হিসেবে সংরক্ষণের জন্য তাদের যৌথ প্রতিশ্রুতি এই স্বীকৃতিরই ইঙ্গিত দেয় যে উত্তেজনা সত্ত্বেও, সম্পৃক্ততা অপরিহার্য। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক দৃশ্যপট পরিবর্তিত হচ্ছে, ঐতিহ্যবাহী শক্তি কেন্দ্রগুলি রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
ভারতের জন্য এটি যে অর্থ বহন করছে তাহলো জি-২০-এর মতো প্ল্যাটফর্মগুলিকে অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং গ্লোবাল সাউথের স্বার্থের প্রতি প্রতিক্রিয়াশীল রাখা নিশ্চিত করা, যা এই গ্রুপের সাম্প্রতিক সভাপতিত্বের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। যদিও বৈঠকের দৃষ্টিভঙ্গি ইতিবাচক ছিল, তবুও পটভূমি অমীমাংসিত সমস্যায় আবর্তিত। দীর্ঘস্থায়ী সীমান্ত উত্তেজনা, অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতা এবং ভিন্ন বৈশ্বিক বাস্তবতা ভারত-চীন সম্পর্কের স্বরূপ নির্মাণ করছে। তবে, সরাসরি বিমান চলাচল পুনরায় শুরু করা, সীমান্তবর্তী নদীগুলির ওপর তথ্য ভাগাভাগি চুক্তি এবং কৈলাস মানস সরোবর তীর্থযাত্রা নিয়ে আলোচনার মতো সাম্প্রতিক পদক্ষেপগুলি স্বাভাবিকতার কিছুটা স্তর পুনর্নির্মাণের জন্য সতর্ক ইচ্ছারো ইঙ্গিত দেয়।
এসব ঘটনাবলী থেকে স্পষ্টতই বোঝা যায় যে, মৌলিক পার্থক্য থাকলেও উভয় দেশই পারস্পরিক স্বার্থের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নির্বাচনী সম্পৃক্ততার জন্য উন্মুক্ত। বৈঠকের ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট সমানভাবে তাৎপর্যপূর্ণ ছিল। জি-২০ আলোচনায় পশ্চিমা শক্তির একজন শীর্ষ কূটনীতিকের অনুপস্থিতি বিশ্বব্যাপী কূটনীতির পরিবর্তনশীল প্রকৃতি তুলে ধরে। এক যুগে যেখানে একতরফাবাদ আবার ফিরে আসছে, সেখানে বহুপাক্ষিক কাঠামো শক্তিশালী করার ওপর ভারতের জোর কৌশলগত এবং প্রয়োজনীয় উভয়ই।
জি-২০-এর মধ্যে চীনের সঙ্গে জড়িত থাকার মাধ্যমে, ভারত বিভিন্ন শক্তিশালী ব্লকের মধ্যে সেতুবন্ধন হিসেবে তার অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করেছে। নিশ্চিত ভাবেই তার কণ্ঠস্বর এবং উন্নয়নশীল বিশ্বের কণ্ঠস্বর যেন বৃহত্তর শক্তি প্রতিযোগিতায় নিমজ্জিত না হয় তা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে। ভারতের জন্য চীনের সঙ্গে তার সম্পর্ক পরিচালনায় বাস্তবতা এবং সতর্কতার মিশ্রণ প্রয়োজন। যদিও এই ধরনের কূটনৈতিক সম্পৃক্ততা -অন্তর্নিহিত চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও সম্পর্ক স্থিতিশীল করার সুযোগ সৃষ্টি করে। এই বৈঠক থেকে বৃহত্তর যে বার্তা এল তা হচ্ছে, বহুপাক্ষিক প্ল্যাটফর্মগুলি দ্বিপাক্ষিক উত্তেজনা বজায় থাকলেও সংলাপের গুরুত্বকে মূল্য দিতে হবে। বিশ্ব যতই খণ্ডিত হয়ে উঠুক না কেন এই জটিলতাগুলি অতিক্রম করতে ভারতকে আগামীতে বিশ্বব্যাপী অবস্থান গঠনে প্রচেষ্টা চালিয়ে নিতেই হবে।
দ্য স্টেটসম্যান'র সম্পাদকীয় নিবন্ধ থেকে ভাষান্তর