নির্বাচনী ইশতেহারে কে এগিয়ে, কাঞ্চন-নিপুণ নাকি মিশা-জায়েদ
-
-
|

ছবি: বার্তা২৪.কম
চলচ্চিত্র তারকারা সাধারণ মানুষের কাছে বরাবরই স্বপ্নের ব্যাপার-স্যাপার। তাই চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংগঠনের তুলনায় শিল্পী সমিতি নিয়ে কৌতূহলের মাত্রা থাকে ওপরের দিকে। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচন নিয়েও স্বাভাবিকভাবেই সবার আগ্রহ বেশি। বিভিন্ন কারণে অন্য যেকোনও বারের চেয়ে এবারের নির্বাচন ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এর মধ্যে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য, লাঞ্ছনাসহ কিছু বিতর্কও জন্ম নিয়েছে। আগামীকাল (২৮ জানুয়ারি) সেই বহুল আলোচিত ভোটগ্রহণ।
২০২২-২৪ মেয়াদে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির দেখভাল করতে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছে দুটি প্যানেল। গত দুই মেয়াদের সভাপতি মিশা সওদাগর ও সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান এবারও একই পদে লড়ছেন। সভাপতি পদে নতুন প্রার্থী হয়েছেন ইলিয়াস কাঞ্চন। তার প্যানেলে সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী চিত্রনায়িকা নিপুণ।
কাঞ্চন-নিপুণ প্যানেল নাকি মিশা-জায়েদ প্যানেল জিতবে সেই উত্তর জানা যাবে আগামীকাল। দুই প্যানেলই ভোটারদের মন কাড়তে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। নির্বাচনী ইশতেহারের দিক দিয়ে একটি পক্ষ এগিয়ে আছে বলা যায়। কাঞ্চন-নিপুণ পরিষদ ২২ দফা নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছে। অন্যদিকে মিশা-জায়েদ প্যানেল কেবল শিল্পীদের থাকার ব্যবস্থা ও তহবিল আরও সমৃদ্ধ করার কথা জোর দিয়ে বলেছে।
কাঞ্চন-নিপুণ পরিষদ ২২ দফা ইশতেহারের প্রথমেই উল্লেখ করেছে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রতিষ্ঠিত এফডিসিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে আসার ইচ্ছা। প্রধানমন্ত্রীর কাছে চলচ্চিত্রের সার্বিক অবস্থা তুলে ধরে চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য সহজ শর্তে বড় অঙ্কের তহবিলের ব্যবস্থা করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে এই পরিষদ। প্রধানমন্ত্রীর রাষ্ট্রীয় সফর ও বিদেশে সাংস্কৃতিক সফরে চলচ্চিত্র শিল্পীদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করাও তাদের একটি দফা।
শিল্পী সমিতির সভাপতিকে পদাধিকারবলে চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের সদস্যসহ তথ্য মন্ত্রণালয় ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের চলচ্চিত্র ও সংস্কৃতি সংক্রান্ত বিভিন্ন কমিটিতে সমিতির নেতাদের প্রতিনিধিত্বের জন্য অন্তর্ভুক্তকরণের ব্যবস্থা করতে চায় কাঞ্চন-নিপুণ পরিষদ।
কাঞ্চন-নিপুণ পরিষদ প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, শিল্পী সমিতির মর্যাদা রক্ষা ও সদস্যদের অধিকার সংরক্ষণে সচেষ্ট থাকবেন তারা। অন্যায়ভাবে যেসব সদস্যের সদস্যপদ বাতিল, স্থগিত ও ভোটাধিকার হরণ করা হয়েছে, তাদের অধিকার ফেরত দিয়ে সদস্যপদ পুনর্বহাল করা হবে। ইশতেহারে আরও বলা হয়েছে, কেউ একবার সদস্য হলে তার সদস্যপদ আজীবন সংরক্ষিত রাখা হবে। তবে সংগঠনের গঠনতন্ত্র ও রাষ্ট্রবিরোধী গুরুতর কর্মকাণ্ডে কারও সংশ্লিষ্ট থাকার অভিযোগ এলে এবং তদন্ত সাপেক্ষে অভিযোগ প্রমাণিত হলে সদস্যপদ স্থগিত হতে পারে, যা সাধারণ সভায় উত্থাপন করে চূড়ান্ত অনুমোদন নেওয়া হবে।
যেকোনো দুর্যোগ, সমস্যা ও প্রতিকূল পরিস্থিতিতে শিল্পী সমাজের পাশে দাঁড়ানো ও সহায়তা করা কাঞ্চন-নিপুণ পরিষদের লক্ষ্য। তাদের ইশতেহারে আরও আছে– শিল্পীদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা, চলচ্চিত্র শিল্পীদের কল্যাণ ট্রাস্টের সর্বোচ্চ ব্যবহার, সহায়তা গ্রহণকারীদের সম্মান ও আত্মমর্যাদা রক্ষায় কোনো সহায়তা কর্মকাণ্ডের ছবি বা ভিডিও জনসম্মুখে প্রকাশ না করা, সব ধরনের ধর্মীয় উৎসবে স্বল্প আয়ের সদস্যদের উৎসব ভাতা ও উপহার প্রদানের ব্যবস্থা করা, ঝুঁকিপূর্ণ দৃশ্যে অভিনয় করা শিল্পীদের জন্য বিশেষ বীমা ও সবার জন্য গ্রুপ বীমার ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ, শিল্পীদের চিকিৎসা কার্যক্রমের সুবিধার্থে কয়েকটি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক ল্যাবের সঙ্গে বিশেষ ছাড়ের জন্য চুক্তির উদ্যোগ ও বাস্তবায়ন এবং শিল্পীদের মেধাবী সন্তানদের শিক্ষাবৃত্তি প্রদান ও তাদের বাবা-মাকে সংবর্ধনা প্রদান।
কাঞ্চন-নিপুণ পরিষদের অন্যান্য প্রতিশ্রুতির মধ্যে রয়েছে– চলচ্চিত্র শিল্পকে আরও সমৃদ্ধ ও অচলাবস্থা কাটিয়ে তুলতে চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব ও অভিজ্ঞদের নিয়ে উপদেষ্টা কমিটি গঠন ও নতুন প্রযোজকদের চলচ্চিত্রের পাণ্ডুলিপি থেকে শুরু করে ছবি মুক্তি পর্যন্ত যাবতীয় সহায়তা প্রদান, চলচ্চিত্র সংক্রান্ত সব সংগঠনের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা এবং পারস্পরিক স্বার্থে মতবিনিময়, শিল্পী সমিতির ওয়েবসাইট সমৃদ্ধ করতে প্রযুক্তিগত আরো উন্নয়ন, সব শিল্পীর প্রোফাইল তৈরি করা, নৃত্য ও অ্যাকশন দৃশ্যে শিল্পীদের প্রোফাইল তৈরি করে আন্তর্জাতিক কাস্টিং ডিরেক্টরদের কাছে পাঠানো, বিশ্বের যেকোনো দেশের চলচ্চিত্রে নৃত্য ও অ্যাকশন দৃশ্যে শিল্পীদের জন্য কাজের ব্যবস্থা করা।
পার্শ্ববর্তী দেশ ও বিভিন্ন দেশের শিল্পী সংগঠনের সঙ্গে পারস্পরিক মতবিনিময় ও শিল্পী বিনিময় চুক্তি সই, শিল্পীদের পেশার মান বৃদ্ধিতে দেশ-বিদেশের কিংবদন্তি শিল্পীদের নিয়ে বিশেষ সেমিনার ও কর্মশালা ব্যবস্থা করা, সব ধরনের শিল্পী তৈরির পাঠ্যসূচি ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাসহ শিল্পী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া, নৃত্যশিল্পীদের জন্য ড্যান্স স্টুডিও ও ফাইট অ্যান্ড স্টান্ট স্টুডিও এবং অত্যাধুনিক ইকুইপমেন্ট সমৃদ্ধ জিমনেসিয়াম স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া, সব শিল্পী উপযোগী মেকআপ সেলুন ও পার্লার স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া।
কাঞ্চন-নিপুণ পরিষদের মতো মিশা-জায়েদ প্যানেল লিখিত কোনও ইশতেহার ঘোষণা করেনি। সভাপতি পদপ্রার্থী মিশা সওদাগর শুধু উল্লেখ করেছেন, শিল্পীদের যাদের বাড়ি নেই তাদের থাকার ব্যবস্থা করতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানানো হবে যেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ১০-২০ বিঘা জায়গা পাওয়া যায়। এছাড়া শিল্পী সমিতির কোষাগারের ১২ লাখ টাকাকে ৫০ লাখ টাকায় নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য তাদের।
চলচ্চিত্র শিল্পী ভোটারদের কাছ থেকে কোন প্যানেল বেশি সমর্থন পায় এখন সেটাই দেখার বিষয়। সমিতির কার্যালয়ে কাঞ্চন-নিপুণ বসতে পারবেন নাকি মিশা-জায়েদ বহাল থাকবেন পুরনো দায়িত্বে তা নিয়ে এখন সরগরম এফডিসি।