এসএসসি পরীক্ষায় মাসব্যাপী বন্ধ কলেজ, বিপাকে শিক্ষার্থীরা
-
-
|

ছবি: সংগৃহীত
মাধ্যমিক ও সমমান পরীক্ষার জন্য ফেনীর সরকারি কলেজ কেন্দ্রে পরীক্ষা দিবে বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীরা। এর জন্য মাসব্যাপী শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ থাকে কলেজের শিক্ষার্থীদের। এসএসসি পরীক্ষা ছাড়াও অন্যান্য পাবলিক পরীক্ষাসহ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পরীক্ষা ও সরকারি ছুটির কারনে বছরের অর্ধেক সময় কলেজ বন্ধ থাকে।
দীর্ঘসময় বন্ধ থাকার কারণে বিপাকে পড়েছে কলেজের শিক্ষার্থীরা।
কলেজের শিক্ষার্থীরা জানান, বছরের বেশিরভাগ সময় কলেজের অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা, এসএসসি, এইচএসসি ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষাসহ সরকারি বিভিন্ন ছুটির কারনে শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ থাকে। এরমধ্যে এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র পড়লে আরও ১ মাস বাড়তি সময় ক্লাস হয়না। এই কারণে কলেজ থেকে এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র অন্যত্র সরানোর দাবি জানিয়েছেন তারা।
নুপুর নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, এসএসসি পরীক্ষার জন্য কলেজ বন্ধ রাখা কোন ভাবেই মানানসই না। এখানে পাইলট হাই স্কুল কেন্দ্র কিন্তু পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় কলেজে। এমনিতেই কলেজে ঠিকভাবে ক্লাস হয়না এরমধ্যে এসব পরীক্ষা। এরপর রোজা ও ঈদের বন্ধের পর আবার কলেজ বন্ধ। এতে ক্লাস হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
ইমতিয়াজ আলম নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, কলেজ জানুয়ারি মাসের পর থেকে সারাবছর বন্ধ লেগেই থাকে। এত বন্ধ থাকাতে শিক্ষার্থীরা ক্লাস করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। ফলে খোলা থাকার সময়ে অনেকে ক্লাসে যায়না।
এমন অবস্থার পরিত্রাণ চান কলেজের বিভিন্ন শিক্ষার্থীর অভিভাবকরা। আহসান মাহবুব নামে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, ছেলের ক্লাস সারাবছর বন্ধ থাকে। ২য় বর্ষে ওঠার পর আর ক্লাস হয়না। এতে সে সিলেবাস শেষ করতে পারেনা৷ সরকার প্রাইভেট ও কোচিং ভিত্তিক পড়া বাদ দিতে চাইলেও শ্রেণি কার্যক্রম ঠিকভাবে না হওয়াতে প্রাইভেট ও কোচিং ভিত্তিক পড়াশোনাতেই মনোযোগী হতে হয়।
অন্যদিকে শিক্ষকরা বলছেন, অভ্যন্তরীণ পরীক্ষাগুলো নেয়া সম্ভব হলেও পাবলিক পরীক্ষা হলে শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায় ফলে ক্লাস নেয়ার সুযোগ থাকেনা।
কলেজের গণিত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো: জহির উদ্দিন বলেন, সরকারি ছুটি ৭৬ দিন সাথে শুক্র- শনি বন্ধের ফলে ৫২ দিন বন্ধ। এরমধ্যে এসএসসি পরীক্ষার বাড়তি ১ মাস বন্ধ পাশাপাশি এইচএসসি পরীক্ষা আছে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা আছে সবকিছু মিলিয়ে বছরের অর্ধেক সময় বন্ধের মধ্যেই কেটে যায়। আমরাও চাই এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র অন্যত্র সরানো হোক। ফেনী কলেজের কেন্দ্র বাদ দিয়ে অন্যান্য জায়গায় বিকল্প তৈরি করা গেলে কলেজের শিক্ষার্থীরাই উপকৃত হবে কারন এসএসসি পরীক্ষার জন্য ইন্টারমিডিয়েট পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা ক্লাস, পরীক্ষাসহ অন্যান্য কার্যক্রম থেকে বঞ্চিত হয়। সরকার যদি অন্য বিকল্প বের করতে পারে শিক্ষার্থীদের জন্য ভালো।
কলেজের শিক্ষক পরিষদ সম্পাদক ফরিদ আলম ভুঞা বলেন, প্রশাসনের সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়ার সুযোগ আমাদের নেই। পাবলিক পরীক্ষা হলে সকাল ৯ টা থেকে ১ টা পর্যন্ত সময় লাগে। পাশাপাশি অত্র এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি থাকে। ফলে পরিবেশগত কারনে ক্লাস নেয়া সম্ভব হয়না। তবে কলেজ কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত হয়েছে যেদিন পরীক্ষা থাকবেনা সেদিন ক্লাস নেয়া এবং বিকালবেলা অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা গুলো নেয়া।
এ বিষয়ে ফেনী সরকারি কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর এনামুল হক খোন্দকার বলেন, এসএসসি পরীক্ষা হলে ২৫ থেকে ৩০ দিন শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ রাখতে হয়। যা শিক্ষার্থীদের জন্য ক্ষতি। তবে কিছু করার নেই তাদেরও জায়গা নেই অবকাঠামোগত সমস্যা রয়েছে। এটিও পাবলিক পরীক্ষা, নিতে হবে প্রশাসনকে বলেও লাভ হবেনা তবে কলেজ কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে আলোচনা করেছে, রুটিন দেখে যেদিন পরীক্ষা থাকবেনা সেদিন ক্লাস নেয়ার ব্যবস্থা করা হবে।
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শফী উল্লাহ বলেন, ফেনী কলেজে সবসময় পরীক্ষা নেওয়া হয়। একটি সেন্ট্রাল পরীক্ষার কেন্দ্র স্থাপন করতে অনেকবার বলেছি কিন্তু তা এখনও বাস্তবায়িত হয়নি। পরীক্ষা কেন্দ্র হিসেবে ফেনী কলেজ ব্যবহার করার কারণে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তাই আলাদা পরীক্ষার কেন্দ্রের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এতে করে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার্থীরা তাদের শ্রেণি কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে পারবেন।
এ বিষয়ে জেলাপ্রশাসক সাইফুল ইসলাম বলেন, কেন্দ্র পরিবর্তন করার সুযোগ অবশ্যই আছে। তবে তার জন্য নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষ রয়েছে। কলেজ প্রশাসন থেকে ওমন কোন প্রস্তাব আসলে বোর্ডের সাথে আলোচনা করে সুযোগ থাকলে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।