একুশের জন্য শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি
-
-
|

ছবি: বার্তা২৪.কম
একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণের জন্য জমায়েত হবেন হাজার হাজার মানুষ। আর তাদের এই নিরাপদ নিশ্চিত করতেই শেষ মুহূর্তে ব্যস্ত হয়ে উঠেছে প্রশাসন।
ঢাকা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রতিবছরের ন্যায় এবারও একই ধরণের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আয়োজন করা হয়েছে। কয়েক স্তরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে, কোন ধরনের আশঙ্কা জনক কিছু ঘটেনি বলে মনে করেন ডিএমপি কমিশনার।
বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে এগারোটায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিদর্শন করে এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী এসব কথা বলেন।
একুশে ফেব্রুয়ারি বাঙালি জাতির জীবনে এক অনুপ্রেরণার অধ্যায়। এই অনুপ্রেরণাকেই ধারণ করে বাঙালি জাতি পরবর্তী সকল সংগ্ৰামে এগিয়ে গেছে। তাইতো ভাষা আন্দোলনের শহীদদের কেউ ভুলে যায় নি। ফেব্রুয়ারি মাস আসলে তাদের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভক্তির বহিঃপ্রকাশ দেখতে পাই। তাই তো ২১ ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহর থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ মুখরিত থাকবে মানুষের ভিড়ে।
১২টা ১ মিনিটে ভিভিআইপি তারপর ভিওআইপি ও পরবর্তীতে সাধারণ মানুষ পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। সকাল বেলা খালি পায়ে ছোট বাচ্চা থেকে শুরু করে বৃদ্ধ সবাই মিলিত হবেন প্রভাব ফেরিতে। কেউবা আসবেন দলবদ্ধ হয়ে আবার কেউবা আসবেন একাই। তবে সকলেরই উদ্দেশ্য একই । ভাষায় জন্য জীবন দানকারীদের শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করা ।
সেসব নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে:
একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে শান্তিপূর্ণভাবে পালন করার জন্য পুলিশ, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), স্পেশাল ফোর্সরসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা বিভিন্ন নিরাপত্তা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকার বিভিন্ন স্থানে বসানো হয়েছে সিসি ক্যামেরা।
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় র্যাব-৩ এর সার্বিক ব্যবস্থাপনায় থাকবে অবজারভেশন পোস্ট এবং চেকপোস্ট। সেই সঙ্গে র্যাবের বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট ও ডগ স্কোয়াড নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে সব সময় প্রস্তুত আছে।
আগত ব্যক্তিদের মধ্যে সন্দেহভাজন কাউকে মনে হলে তাকে তল্লাশি করা হবে । তাছাড়া শহীদ মিনারের চারদিকে এক কিলোমিটার রেডিয়াসের ভেতরে মোবাইল টিম নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে।
এ সময় জঙ্গি হামলার কোন আশঙ্কা নাকচ করে দেন তিনি। এছাড়াও যেসব শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিনে রয়েছে তাদের নিয়েও কোন থ্রেট দেখছেন না তিনি। নিরাপত্তা ব্যবস্থা তিন চার স্তরে রাখা হয়েছে। প্রথমে সন্ধ্যা পাঁচটায় এবং পরবর্তীতে রাত আটটা থেকে ডিএমপি পুলিশ অফিসার ও কর্মকর্তা নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে।
শুক্লরবার দুপুর দুইটা পর্যন্ত তারা পুরো এলাকা নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে।
ভিড়ের মধ্যে যেন কোন দুর্ঘটনা না ঘটে সে ব্যাপারে আমরা কাজ করব । সেই সঙ্গে প্রত্যেককেই নিজের প্রয়োজনীয় জিনিস যেমন মোবাইল, মানিব্যাগ ইত্যাদি নিজ দায়িত্বে রাখে। কোন ধরনের ধাতব পদার্থের কোন জিনিস নিয়ে কেউ যেন প্রবেশ করতে না পারে সেই ব্যাপারে বিশেষ নজর রাখা হবে।
শহীদ মিনারের চারদিকে এক কিলোমিটার রেডিয়াসের ভেতরে মোবাইল টিম নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে।
এর সঙ্গে ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বুধবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ বৃহস্পতিবার বিকাল ৫.০০ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রিত থাকবে। ২০ ফেব্রুয়ারি রাত ৮.০০টার পর ক্যাম্পাসে প্রবেশে কড়াকড়ি নিয়ন্ত্রণ থাকবে।
ক্যাম্পাসের বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় বসবাসকারীদের রাত ৮.০০টার মধ্যে আবাসস্থলে ফেরার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানানো হয়েছে। বিশেষ জরুরি প্রয়োজনে নিরাপত্তা পাশ ও পরিচয়পত্র ব্যবহার করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
এছাড়াও সার্বিক নিরাপত্তা ও সহযোগিতা জন্য বিএনসিসি, রেড ক্রিসেন্ট, রোভার স্কাউটস, রেঞ্জার ও স্বেচ্ছাসেবকরা বিভিন্ন দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবেন।
প্রথম প্রহরে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন যারা:
প্রতিবারের ন্যায় এবারও প্রথমে ভিভিআইপি তারপর ভিওআইপি ও তারপর জনসাধারণ পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন ।
মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টাসহ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টামন্ডলী শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন ১২টা ১ মিনিটে।
পর্যায়ক্রমে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন তিন বাহিনীর প্রধান, বিভিন্ন ভিআইপি, ভাষা সৈনিক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, সিনেট ও সিন্ডিকেট সদস্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, অনুষদের ডিনবৃন্দ ও হলের প্রাধ্যক্ষবৃন্দ।
রাত ১২:৪০ মিনিটের পর থেকে পলাশি প্রান্ত অর্থাৎ পশ্চিম দিক থেকে জনসাধারণের প্রবেশের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।
মানতে হবে যেসব পথ নির্দেশনা:
ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার মো. সরওয়ার জানান, বিভিন্ন মানুষের সমাগমকে মাথায় রেখে সাতটি ক্রসিং এ যানচলাচল নিয়ন্ত্রিত থাকবে। এগুলো হলো শাহবাগ ক্রসিং, নীলক্ষেত ক্রসিং, শহীদুল্লাহ হল ক্রসিং, হাইকোর্ট ক্রসিং, চানখারপুল ক্রসিং, পলাশী ক্রসিং, বকশিবাজার ক্রসিং।
শুধু মাত্র পলাশী ক্রসিং থেকে ভাস্কর্য ক্রসিং, জগন্নাথ হল ক্রসিং হয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রবেশ করা যাবে। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে রোমানা ক্রসিং-দোয়েল চত্বর হয়ে বের হয়ে যাবে। অন্য কোন পথ দিয়ে বের হওয়া যাবে না।
ঢাকার ট্রাফিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে আমরা এ বছর রাত নয়টায় রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ করে দিবে। আটটাও বন্ধ হয়ে যেতে পারে সেই নির্ভর করবে শাহবাগে কোন আন্দোলন চলে কিনা তার ওপর।