জামালপুরে সন্ধ্যা হলেই হাতি আতঙ্কে সীমান্তের মানুষ
-
-
|
![রাত হলেই পাহাড় থেকে হাতিরা নেমে আসে, ছবি: সংগৃহীত](https://imaginary.barta24.com/resize?width=1280&quality=75&type=webp&path=uploads/news/2019/Dec/01/1575192657295.jpg)
রাত হলেই পাহাড় থেকে হাতিরা নেমে আসে, ছবি: সংগৃহীত
জামালপুরের বকশীগঞ্জে সীমান্ত এলাকায় সন্ধ্যা হলেই নেমে আসে বন্য হাতি। বিচরণ করে পুরো সীমান্তে। বিশেষ করে নভেম্বর ও ডিসেম্বরের এই বন্য হাতির বিচরণ অন্যান্য মাসের তুলনায় সবচেয়ে বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
গত ১ সপ্তাহ ধরে ভারতীয় কাঁটাতারের বেড়া পাড়ি দিয়ে শতাধিক বন্যহাতির একটি পাল বাংলাদেশের সীমান্তে অবস্থান করছে। বন্যহাতির প্রবেশের কারণে বকশীগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী কামালপুর ইউনিয়নের সোমনাথপাড়া, গাঢ়োপাড়া, টিলাপাড়া, যদুরচর, সাতানীপাড়া ও মীর্ধাপাড়াসহ ৬ গ্রামের প্রায় ১৫ হাজার মানুষ নির্ঘুম রাত যাপন করছেন।
বর্তমানে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে পাহাড়ে অবস্থান নিলেও সন্ধ্যা হলেই লোকালয়ে নেমে আসছে হাতির পালটি। নষ্ট করছে আমন ধান। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষকরা। হাতির প্রবেশ ও ফসল নষ্ট করা নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ অনেক আগে থেকেই ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) সন্ধ্যা হওয়ার সাথে সাথে তাদের গেট খুলে দেয়। এতে সহজেই হাতির পালগুলো বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। পরে তারা সেই গেটটি বন্ধ করে দেয়। সারারাত হাতির দল বাংলাদেশের জনবসতিতে তাণ্ডব চালায়। ভোরের দিকে আবারও গেটটি খুলে দেয় বিএসএফ।
কিন্তু এবার ব্যতিক্রম। গত ৭দিন যাবত ভারতীয় কাঁটাতারের বেড়ার পাশের গেটগুলো বন্ধ করে রেখেছে বিএসএফ। ফলে হাতিগুলো আর ভারতে প্রবেশ করতে পারছে না। ফলে দিনরাত সমানতালে তাণ্ডব চালাচ্ছে বন্যহাতির দলটি। এর মধ্যে ভারতের অভ্যন্তরে হাতির প্রবেশে বাধা দেওয়ার জন্য সীমান্তে ফ্ল্যাড লাইটের ব্যবহারের পাশাপাশি উচ্চ ক্ষমতা ও আলো সম্বলিত বাতি ব্যবহার করছে ভারতীয় অংশের সাধারণ মানুষ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, প্রায় ৭দিন যাবত ভারতীয় বন্য হাতির দলটি সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশের লোকালয়ে রয়েছে। এদিকে হাতির তাণ্ডব ঠেকাতে স্থানীয় লোকজন জেনারেটর ব্যবহার করে উচ্চ আলো সম্বলিত বাতি ব্যবহার করলেও সেটা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম।
স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য নজরুল ইসলাম জানান, হাতির দল তাড়ানোর বিষয়ে আমাদের কোনো প্রশিক্ষণ নেই। কিছু বৈদ্যুতিক তার ছড়ানো হয়েছে কিন্তু বিদ্যুতের অভাবেই সেগুলো ব্যবহার করা যাচ্ছে না। এছাড়া একটি জেনারেটর থাকলেও জ্বালানির অভাবে সেটিও অকার্যকর অবস্থায় রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর গেট খোলার কারণেই এইসব হাতি বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। কিন্তু হাতি ফেরত যাবার সময় আর গেটগুলো খুলে না দেওয়ায় হাতি বাংলাদেশের অভ্যন্তরেই অবস্থান করছে।
অলিতা সাংমা নামের এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, ‘স্থানীয়ভাবে কেরাসিন তেলের মাধ্যমে গোলক, টিন দিয়ে শব্দ তৈরি করে হাতি তাড়ানো হয়ে থাকলেও বর্তমানে এই পদ্ধতি অকার্যকর হয়েছে। এখন হাতিগুলো আগুন দেখলেই আরও হিংস্র হয়ে তেড়ে আসে। স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকেই হাতি তাড়ানোর কোনো পদক্ষেপও দেখা যায়নি।’
এ বিষয়ে স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আ.স.ম জমশেদ খন্দকার হাতির অবস্থানের এলাকা পরিদর্শন করে সাংবাদিকদের জানান, সীমান্ত এলাকায় মানুষ অত্যন্ত আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। আমরা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ডিজেল সরবরাহ করেছি। এছাড়া উচ্চ শব্দের কিছু পটকা ও গোলক বিতরণ করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল হক বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘হাতি এখন লোকালয়ে এসে গেছে। আমরা প্রশাসন এই বিষয়ে অবগত। আমরা সর্বোচ্চ মহলকে জানিয়েছি। গত দু দিন আগে একজন হাতির তাড়া খেয়ে বৈদ্যুতিক তারে জড়িয়ে মারা গেছেন। আমরা দ্রুত সীমান্ত বৈঠকের মাধ্যমে সমাধানের ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’