চাঁদপুরে চারমাস ধরে পৈশাচিক নির্যাতনের শিকার ভাগ্নি রোজিনা আক্তার (১৩)। নির্যাতন সইতে না পেরে বাঁচার আকুতি নিয়ে পাশের বাসায় গিয়ে আর্তনাদ কিশোরীর। তার ক্ষত-বিক্ষত শরীর দেখে চমকে ওঠে এলাকাবাসী। পরে জনতা কর্তৃক মামা-মামিকে আটক করে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) বিকেলে পার্শ্ববর্তী রিয়াদের বাসায় গিয়ে বাঁচার আকুতি জানান গৃহকর্মী রোজিনা।
এদিকে ভুক্তভোগী কিশোরীর বাবা শ্যালক ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন। সেই অনুযায়ী অভিযুক্ত স্বামী ও স্ত্রীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ভুক্তভোগী কিশোরীকে চাঁদপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
ঢাকায় বড় বোনের কাছ থেকে চাঁদপুরে মামার বাসায় মামাতো বোন শিশু রাজিয়া ও মামাত ভাই প্রতিবন্ধী রিফাতকে দেখাশোনার জন্য গৃহকর্মী হিসেবে কাজ নেয় কিশোরী রোজিনা আক্তার। শহরের মাদ্রাসা রোডে মামা রুবেল মোল্লার ভাড়া বাসায় ঠাঁই হয় তার।
গেলো চারমাস ধরে কারণে অকারণে ভুল ধরে রোজিনার ওপর মামি রোকেয়া বেগম শুরু করেন অমানবিক ও পৈশাচিক নির্যাতন। তার সারা শরীরে জখমের চিহ্ন। থেঁতলে ফেলা হয়েছে সামনের দুই পায়ের আঙুল। হাত-পা পিঠে কাটাদাগ ও আগুনের ছেঁকা। রোজিনার শরীরের ক্ষতচিহ্ন দেখে যে কারো গা শিউরে উঠবে।
স্থানীয় যুবক রিয়াদ হোসেন, জানান, মাদ্রাসা রোডে ৪-৫ মাস ধরে ভাড়া থাকছেন রোকেয়া-রুবেল দম্পতি। তাদের দুই সন্তান। একজন প্রতিবন্ধী। মূলত তাদের দেখাশোনা ও বাড়ির কাজ করার জন্য আপন ভাগ্নিকে নিয়ে আসে। কিন্তু তারা এতটাই অমানুষ মেয়েটাকে দিনের পর দিন অমানবিক নির্যাতন করে গেছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে নির্যাতন থেকে বাঁচতে দরজা খুলে পালিয়ে যায় ওই কিশোরী। পরে স্থানীয় এক খালা তাকে দেখতে পেয়ে বাসায় নিয়ে যায়। পরবর্তীতে এলাকার লোকজন ওই ভবনে ঢুকে তালাবদ্ধ করে দেয়। ওই সময় বাসায় শুধু রুবেল ছিল। তার স্ত্রী বাইরে ছিল। আমরা পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ তাকে আটক করে নিয়ে যায়। পরে তার স্ত্রী থানায় আসলে তাকেও আটক করা হয়।
গৃহকর্মী রোজিনা আক্তার বলেন, মামা-মামি এক বছর ধরে বাবা-মায়ের সঙ্গে যোগাযোগও করতে দেয় না। চার মাস ধরে প্রতিদিন মারে। পুতা, দা, ছুরিসহ বিভিন্ন কিছুদিয়ে শরীরে আঘাত করে। পিঠে ব্লেড ও দা দিয়ে কেটে ফেলে। আর গরম খুনতি দিয়ে ছেঁকা দেয়। পায়ের আঙুলগুলো পুতাদিয়ে থাতলে দেয়। দুইহাতে পিটানোর কারণে ফুলে গেছে। আমাকে ঠিকমতো খাবার দিত না। দিনে একবার ভাত দেয়। কিছু হলেই নির্যাতন করতো। আমি মামির শাস্তি চাই।
গৃহকর্মী হিসেবে যোগ দেয়ার পর আর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে দেয়নি পাষন্ড মামা-মামি। খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে যান মা-বাবা। এক বছর পর মেয়ে রোজিনার শরীরের আঘাতের চিহ্ন দেখে থানার ফ্লোরে লুটিয়ে পড়েন বাবা আহমদ ভূঁইয়া। পাশাপাশি মেয়েও কান্নায় ভেঙে পড়েন। থানায় এমন দৃশ্য সকলে আবেগ আপ্লূত হয়ে পড়েন। রোকেয়া বেগমের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবি জানান এলাকাবাসী ও পরিবার।
কিশোরীর বাবা আহমদ ভূঁইয়া বলেন, মেয়েকে আমার আপন শ্যালক এক বছর আগে নিয়ে এসেছে। এক বছর ধরে আমার মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে দেয়নি। আমার মেয়েকে বাড়িতে আনার কথা বললে রুবেল আজকাল বলে এক বছর পার করে দেয়। আমার মেয়েকে এই ভাবে দেখতে হবে জীবনে কল্পনা করিনি। তারা আমার মেয়েকে শেষ করে ফেলেছে। মেয়ের পুরো শরীরে আঘাতের চিহ্ন। আমি এর বিচার চাই। প্রশাসন যাতে এটার সর্বোচ্চ বিচার করে।
ঘটনাটি গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে বলে জানান চাঁদপুর সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মো. বাহার মিয়া।
তিনি বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে উপ-পরিদর্শক নাজমুল ছুটে যান। কিশোরীর বাবার মামলার প্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
নির্যাতনের শিকার রোজিনা চাঁদপুর সদর উপজেলার চান্দ্রা ইউনিয়নের বাখরপুর গ্রামের আলী আহম্মদ ভুঁইয়ার মেয়ে। তার দুই মেয়ে ও তিন ছেলে। মামা রুবেল মোল্লা একই গ্রামের মোল্লা বাড়ীর আবুল মোল্লার ছেলে। রোজিনা তার আপন ভাগ্নি। রুবেল মোল্লা একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন।