চারপাশে বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ। মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে একটি খাল। বর্ষাকালে ভরাট থাকা খালে চলে নৌকা, শুষ্ক মৌসুমে হয় চাষাবাদ। কিন্তু খাল পারাপারে রাস্তা না থাকলেও একটি ব্রিজ নির্মিত হয়েছে সরকারি অর্থায়নে। প্রায় দেড় বছর আগে নির্মিত এই ব্রিজে সংযোগ সড়কের অভাবে এখনও কোন পথচারী পা রাখেনি, ব্রিজ দিয়ে পাড় হয়নি কোন যান।
বলছি জামালপুরের ইসলামপুর পৌরসভার কাচীহারা এলাকার কথা। এই এলাকার আলাই খালের মধ্যে প্রায় দেড় বছর ধরে পড়ে আছে একটি ব্রিজ। ব্রিজটি নির্মাণের পর এখনও সেখানে নির্মাণ করা হয়নি কোনো সংযোগ সড়ক। ব্রিজটির আশপাশে এখনো মানুষের বসতবাড়ি গড়ে ওঠেনি। নেই চলাচলের সড়কও এতে করে ব্রিজটি কারও কোনো কাজেই আসছে না স্থানীয়দের।
এরপরও ৩৭ লাখ টাকা ব্যয়ে সেতু নির্মাণ করেছে ইসলামপুর পৌরসভা। অর্থ লোপাট করতেই এ সেতু নির্মাণ করা হয়েছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। তবে, ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান বলছে তাদের লাইসেন্স ব্যবহার করে কাজ করেছে পৌর মেয়র। এই কাজটি তদন্ত করে দেখাসহ সেতুটি সচল করার কথা জানিয়েছেন পৌর প্রশাসক।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় পৌরসভার কাচিহারা এলাকায় ধানক্ষেতের মাঝে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে একটি ব্রিজ। তার দু’পাশে নেই কোনো সংযোগ সড়ক। ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে শহর সেতু-কালভার্ট প্রকল্পের আওতায় ইসলামপুর পৌরসভার কাচিহারা এলাকায় ১০ ফুট দীর্ঘ ও ৫ ফুট প্রশস্ত এই ব্রিজটি নির্মিত হয়। ব্রিজটি নির্মাণে ব্যয় হয় ৩৭ লাখ ২১ হাজার ১৭০ টাকা। ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে ব্রিজটির নির্মাণকাজ শেষ হয়।
এ ব্রিজটি থাকার পড়েও কৃষকের ফসল ঘরে তুলতে পোহাতে হয় বিড়ম্বনা, বর্ষাকালে শিক্ষার্থীদেরও পোহাতে হয় দুর্ভোগে। সেতু থাকলেও দুই পাশে সংযোগ সড়ক না থাকায় ভোগান্তির সীমা নেই এলাকাবাসীর। সংযোগ সড়ক নির্মাণ করে সেতুটি ব্যবহার উপযোগী করার দাবি জানান স্থানীয়রা।
মো. ইব্রাহিম নামে ওই এলাকার এক কৃষক বলেন, 'এ ব্রিজ যে কার জন্যে যে বানাইছে, এডা যে লোকেরা বানাইছে, তারাই ভালো কইতে পারব। দুই পাশে মাটি দিলেও না হয় ওই পাশের বাড়ির মানুষ যাওয়া আসা করতে পারত।'
আব্দুল বাছেত নামে এক বাসিন্দা বলেন, ‘এখানে যে ব্রিজটি দিয়েছে এর কোনো দরকারই ছিলো না। এটা কোনো উপকারে আসছেই না, বরং বর্ষাকালে সেতুটি পানি প্রবাহে বাঁধা সৃষ্টি করবে। নামমাত্র ব্রিজ করে টাকাগুলো হাতিয়ে নিতেই পৌরসভার সাবেক মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল কাদের শেখ অপ্রয়োজনীয় এই সেতুটি নির্মাণ করেছেন।’
ইসলামপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদের শেখ সম্প্রতি বিএনপির করা নাশকতার মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে রয়েছেন। ফলে তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
খাতা কলমে সেতুটি নির্মাণ করে কথা এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। অথচ ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের মালিক মো. আলাল উদ্দিন জানেন না কিছুই।
এদিকে সেতুটির বিষয়ে মনগড়া কথা সাজিয়েছেন ইসলামপুর পৌর সভার সচিব মো. আবু সাইদ। তিনি বলেন, সে মাটি ভরাট ছিল হয়ত বা ধুয়ে বা চলে গেছে। গভীর হওয়া জায়গাটুকু আমরা মাটি ভরাট করে সচল করবো।
এ প্রসঙ্গে ইসলামপুর পৌরসভার প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তৌহিদুর রহমান বলেন, ‘পৌরসভার ব্রিজটার কথা জেনেছি। সেটা তদন্ত করে দেখতেছি আমরা ব্যবস্থা গ্রহন করবো। পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় অর্থ যাতে অপচয় না হয় যেভাবে এটিকে কাজে লাগানো যায় সে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
এসব বিষয়ে জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও মানবাধিকার কর্মী মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর সেলিম বলেন, সাবেক সরকারের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা অর্থ হাতিয়ে নিতে নানান অপ্রয়োজনীয় নির্মাণকাজ ও প্রকল্প করেছেন। এর পেছনে একটাই কারণ প্রকল্প এবং নির্মাণকাজ করলেও তাঁদের ঘনিষ্ঠজনেরা সেই কাজ বাগিয়ে নিতেন। অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে কাজের বেশির ভাগ টাকা হাতিয়ে নিতেন। এদের বিরুদ্ধে আমাদের সকলের কঠোর হওয়া দরকার।