বাংলাদেশের ২২ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল ১০ দিনের চীন সফরে রয়েছে। গত সোমবার রাতে দলটি চীনের উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করে। প্রতিনিধিদলে রয়েছেন রাজনৈতিক নেতা, নাগরিক সমাজের অধিকারকর্মী, শিক্ষাবিদ ও সাংবাদিক।
চীনের সরকারি কর্মকর্তা এবং ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে তাদের আলোচনা হবে বলে জানা গেছে। প্রতিনিধিদলের নেতারা বিষয়টি ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে নিশ্চিত করেছেন। প্রতিনিধিদলের অনেকেই বিএনপি ও তার মিত্র দলের সদস্য। ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া বেশ কয়েকজন প্রতিনিধিও দলটিতে রয়েছেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে নানা ইস্যুতে কূটনৈতিক উত্তেজনা বেড়ে যাওয়ায় চীন সম্পর্ক আরও জোরালো করতে আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।
চীন সফরে যাওয়া প্রতিনিধিদলটির নেতৃত্ব দেওয়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেছেন, ‘এটি মূলত বেইজিংয়ের উদ্যোগে একটি শুভেচ্ছা সফর। এটা নতুন, কারণ এবার বাংলাদেশের বিভিন্ন দলের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত একটি দলকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে চীন।’
বিবিসি’র প্রতিবেদনে বলা হয়, সমালোচকদের মতে শেখ হাসিনা ভারতঘেঁষা থাকলেও বেইজিংয়ের সঙ্গেও সম্পর্কের ভারসাম্য রক্ষা করতেন। তার পতনের পর থেকেই বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতা, অধিকারকর্মী ও প্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়েছে বেইজিং। ইসলামপন্থি দলগুলোর সঙ্গেও যোগাযোগ বাড়ানো হয়েছে দেশটির পক্ষ থেকে।
এর আগে জানুয়ারি মাসে বেইজিংয়ে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন এবং চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়্যাং ই বৈঠক করেন। এদিকে সাম্প্রতিক সময়ে এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো চীন সফরে গেলেন বিএনপি নেতারা। গত বছরের শেষ দিকে বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল বেইজিং সফরে গিয়েছিল।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে শূন্যতা ও ভারতের প্রভাবের অনুপস্থিতিতে বেইজিং প্রভাব বাড়াতে চাইছে। চীন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার। দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য প্রায় ২ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের। এর মধ্যে বেশির ভাগই চীন থেকে বাংলাদেশে আমদানিনির্ভর।
বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীও ব্যাপকভাবে চীনের ওপর নির্ভর করে। তাদের সামগ্রী ও অস্ত্রের প্রায় ৭০ শতাংশেরও বেশি আসে চীন থেকে। গত ছয় মাসে বেইজিংয়ের তুলনায় বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার ও অন্য রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে খুব কম যোগাযোগ হচ্ছে ভারতের। বর্তমানে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারে থাকা কয়েকজন উপদেষ্টাকেও দিল্লির সমালোচনা করতে দেখা গেছে।
বিবিসির খবর বলছে, এই সমালোচনার ফলে দিল্লিতে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর গত সপ্তাহে বলেছেন, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক কেমন হবে তা বাংলাদেশকেই ঠিক করতে হবে। বাংলাদেশি কর্মকর্তা ও রাজনীতিবিদদের সমালোচনাকে ‘পুরোপুরি হাস্যকর’ হিসেবেও অভিহিত করেন তিনি।