সৎকাজ বলতে কী বোঝায়

কোরআন, ইসলাম

ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম | 2025-02-20 19:55:35

কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা আল্লাহর পথে ব্যয় করো এবং নিজেদের হাতে নিজেদের ধ্বংসের মধ্যে নিক্ষেপ করো না। তোমরা সৎকাজ করো, আল্লাহ সৎকর্মপরায়ণ লোকদের ভালোবাসেন।’ -সুরা বাকারা: ১৯৫

ইসলামি স্কলারদের মতে, সর্বপ্রকার ভালো কাজ এই নির্দেশের অন্তর্ভুক্ত। ব্যক্তি নিজের জন্য বা অন্যের কল্যাণকর এমন কোনো কাজ এই নির্দেশের বাইরে নয়। আল্লাহর এই সাধারণ নির্দেশের ভেতর অন্তর্ভুক্ত হবে- সম্মান ও সুপারিশের মাধ্যমে উপকার করা, ভালো কাজের আদেশ ও মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করা, উপকারী জ্ঞান বিতরণ করা, মানুষের প্রয়োজন পূরণ করা, দুঃখ-দুর্দশা দূর করা, প্রতিবন্ধকতা অপসারণ করা, অসুস্থ ব্যক্তির শুশ্রূষা করা, কাফন-দাফনের ব্যবস্থা ও তাতে অংশগ্রহণ করা, পথ হারিয়ে ফেলা ব্যক্তিকে পথপ্রদর্শন করা, শ্রমিক ও কাজের লোকের কাজে সহযোগিতা করা, যে ব্যক্তি কাজ ঠিক করতে পারছে না, তার কাজটি করে দেওয়া, ইত্যাদি।

এই নির্দেশের অন্তর্ভুক্ত হবে এমন সব কাজ যা করার নির্দেশ আল্লাহ দিয়েছেন। বিশেষত মুমিন নিজের প্রতিও দয়া ও অনুগ্রহ করবে। তা হলো, যথাযথভাবে আল্লাহর ইবাদত ও আনুগত্য করা। যেমনটি নবী কারিম (সা.) বলেছেন, তুমি এমনভাবে আল্লাহর ইবাদত করো, যেন তুমি তাকে দেখছ। যদি তুমি তাকে না দেখো, তবে বিশ্বাস রাখো তিনি অবশ্যই তোমাকে দেখছেন।

মনে রাখতে হবে, সৎকাজ শুধু একটি কাজ নয়, এটা কল্যাণমূলক ইবাদতও। কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘কেউ কোনো সৎকাজ করলে সে তার দশ গুণ পাবে। আর কেউ কোনো অসৎ কাজ করলে তাকে শুধু তার অনুরূপ প্রতিফলই দেওয়া হবে এবং তাদের প্রতি জুলুম করা হবে না।’ -সুরা আনআম: ১৬০

এ আয়াতে আখেরাতের প্রতিদান ও শাস্তির একটি সহৃদয় বিধি বর্ণিত হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি একটি সৎকাজ করবে, তাকে দশগুণ প্রতিদান দেওয়া হবে। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি একটি গোনাহ করবে, তাকে শুধু একটি গোনাহর সমান বদলা দেওয়া হবে।

হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তোমাদের প্রতিপালক অত্যন্ত দয়ালু। যে ব্যক্তি কোনো সৎকাজের শুধু ইচ্ছা করে, তার জন্য একটি নেকি লেখা হয়- ইচ্ছাকে কাজে পরিণত করুক বা না করুক। অতঃপর যখন সে সৎকাজটি সম্পাদন করে, তখন তার আমলনামায় দশটি নেকি লেখা হয়। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি কোনো পাপ কাজের ইচ্ছা করে, অতঃপর তা কাজে পরিণত না করে, তার আমলনামায়ও একটি নেকি লেখা হয়। অতঃপর যদি সে ইচ্ছাকে কাজে পরিণত করে, তবে একটি গোনাহ লেখা হয়। কিংবা একেও মিটিয়ে দেওয়া হয়। এমন দয়া ও অনুকম্পা সত্বেও আল্লাহর দরবারে ওই ব্যক্তিই ধ্বংস হতে পারে, যে ধ্বংস হতেই দৃঢসংকল্প। -সহিহ বোখারি: ৬৪৯১

অন্য হাদিসে এসেছে, যে ব্যক্তি একটি সৎকাজ করে, সে দশটি সৎকাজের সওয়াব পায় বরং আরো বেশি পায়। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি একটি গোনাহ করে সে তার শাস্তি এক গোনাহর সমপরিমাণ পায় কিংবা তাও আমি মাফ করে দেব। যে ব্যক্তি পৃথিবী ভর্তি গোনাহ করার পর আমার কাছে এসে ক্ষমা প্রার্থনা করে, আমি তার সঙ্গে ততটুকুই ক্ষমার ব্যবহার করব। যে ব্যক্তি আমার দিকে অর্ধহাত অগ্রসর হয়, আমি তার দিকে এক হাত অগ্রসর হই এবং যে ব্যক্তি আমার দিকে একহাত অগ্রসর হয়, আমি তার দিকে বা (দুই বাহু প্রসারিত) পরিমাণ অগ্রসর হই। যে ব্যক্তি আমার দিকে লাফিয়ে আসে, আমি তার দিকে দৌড়ে যাই। -মুসনাদে আহমাদ: ৫/১৫৩

এসব হাদিস থেকে জানা যায়, আয়াতে যে সৎকাজের প্রতিদান দশগুণ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে, তা সর্বনিম পরিমাণ। আল্লাহতায়ালা স্বীয় কৃপায় তা আরো বেশি দিতে পারেন এবং দিবেন। অন্যান্য হাদিস দ্বারা সত্তর গুণ বা সাতশ গুণ পর্যন্ত প্রমাণিত রয়েছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর