মক্কার জাবালে সাওরে আটকে পড়া এক নাগরিককে উদ্ধার করা হয়েছে। তবে তার পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি।
শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারী) ২০২৫ আরব নিউজ সৌদি আরবের বেসামরিক প্রতিরক্ষা বিভাগের সূত্রে জানিয়েছে, তারা জাবালে সাওরে আটকে পড়া এক নাগরিকের কাছ থেকে সাহায্যের জন্য একটি ফোন পান। লোকটি অপেশাদার পর্বতারোহী। অনেকটা শখ করে পাহাড়ে আরোহণ করেছিল এবং ২০ মিটার উচ্চতায় পৌঁছানোর পর আটকে যায়।
পাথুরে এবং কঠিন পথের কারণে তিনি পাহাড় থেকে নামতে পারেননি এবং পিছলে যাওয়ার ঝুঁকিও ছিল।
বিভাগটি জানিয়েছে যে, তাৎক্ষণিকভাবে একটি বিশেষ দল পাঠানো হয়। তারা দক্ষতার সঙ্গে তাকে নিরাপদে নামিয়ে আনে।
পবিত্র কাবা থেকে ১২ কিলোমিটার দক্ষিণে জাবালে সাওরের অবস্থান। যার উচ্চতা প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার ফুট। মক্কা থেকে মদিনায় হিজরতের সময় নবী কারিম (সা.) এই পাহাড়ের একটি গুহায় আশ্রয় নিয়েছিলেন। তার সঙ্গে ছিলেন হজরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.)।
ঐতিহাসিকরা লেখেন, ২৭ সফর মোতাবেক সেপ্টেম্বর ৬২২ খ্রিস্টাব্দে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) হিজরতে উদ্দেশ্যে ঘর ত্যাগ করেন।
ঘর থেকে বের হয়ে নবী কারিম (সা.) সতর্কতাস্বরূপ মদিনার বিপরীত দিক তথা ইয়ামেনের দিকে পাঁচ মাইল এগিয়ে যান। তারা মক্কা থেকে দক্ষিণে অবস্থিত ‘সাওর’ পাহাড়ের একটি গুহায় আশ্রয় নেন। এটা ছিল অত্যন্ত উঁচু পাহাড়।
পাহাড়ে উঠতে গিয়ে নবী কারিম (সা.)-এর পা কেটে যায়। সতর্কতাস্বরূপ হজরত আবু বকর (রা.) আগে গুহায় প্রবেশ করেন এবং তা পরিষ্কার করেন। নিজের ‘তহবন্ধ’ ছিঁড়ে গুহার ছিদ্রগুলো বন্ধ করেন। দুটি ছিদ্র অবশিষ্ট থাকলে নিজের পা দিয়ে তা বন্ধ করে রাখেন।
রাতের বেলা তার পায়ে বিষাক্ত কিছু দংশন করে। নবী কারিম (সা.) বিষয়টি জানতে পেরে ক্ষতস্থানে নিজের থুথু মোবারক লাগিয়ে দেন।
হিজরতের বিষয়টি অত্যন্ত গোপন রাখা হয়। শুধু হজরত আবু বকর (রা.)-এর পরিবারের কয়েকজন সদস্য বিষয়টি জানতেন। হজরত আসমা বিনতে আবু বকর (রা.) প্রতিদিন সন্ধ্যায় তাদের জন্য খাবার নিয়ে যেতেন।
আর হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আবু বকর (রা.) সারা দিন ঘুরে ঘুরে মক্কা নগরীর সংবাদ সংগ্রহ করতেন এবং রাতের বেলা তা নবী কারিম (সা.)-এর কাছে পৌঁছে দিতেন। হজরত আবু বকর (রা.)-এর আজাদ করা গোলাম আমের ইবনে ফুহাইরা আবদুল্লাহ (রা.)-এর চলার পথে বকরির পাল নিয়ে যেতেন যেন পায়ের চিহ্ন না থাকে। তিনি সন্ধ্যার সময় গুহার কাছে গিয়ে বকরি দুধ খাইয়ে আসতেন।
কোরাইশ নেতারা ঘোষণা করে কেউ মুহাম্মদ (সা.)-কে জীবিত বা মৃত উপস্থিত করতে পারলে তাকে এক শ উট উপহার দেওয়া হবে। ফলে বহু মানুষ তার সন্ধানে বের হয়। এমনকি একটি অনুসন্ধানী দল ‘সাওর’ পর্বতের গুহার সামনে উপস্থিত। হজরত আবু বকর (রা.) তাদের দেখে ভয় পেয়ে গেলে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) তাকে সান্ত্বনা দেন। অন্যদিকে আল্লাহর ইশারায় গুহার মুখে মাকড়সা ও বন্য কবুতর বাসা বেঁধে ছিল। তাই অনুসন্ধানকারী কোনো প্রকার সন্দেহ না করেই চলে যায়। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ও হজরত আবু বকর (রা.) সাওর পর্বতের গুহায় তিন দিন অবস্থান করেন।
পবিত্র কোরআনে সে মুহূর্তের বিবরণ এভাবে এসেছে, ‘যখন অবিশ্বাসীরা তাকে বহিষ্কার করেছিল এবং সে ছিল দুজনের দ্বিতীয়জন, যখন তারা উভয়ে গুহার মধ্যে ছিল; সে তখন তার সঙ্গীকে বলেছিল, বিষণ্ন হয়ো না, আল্লাহ তো আমাদের সঙ্গে আছেন।’ -সুরা তাওবা : ৪০