মেজবান বা মেজ্জান চট্টগ্রামের ঐতিহ্য। চট্টগ্রামের মানুষ অতিথিপরায়ণ। নানা উপলক্ষে অতিথি আপ্যায়নে মেজবানির আয়োজন এখন চট্টগ্রামের একটি সংস্কৃতির অংশ। দেশব্যাপী এ মেজবানের খ্যাতি রয়েছে। মেজবান এখন দেশের গন্ডি ছাড়িয়ে বিদেশেও বেশ জনপ্রিয়।
জাঁকজমক চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী মেজবান ও মিলন মেলা হয়ে গেলো লন্ডনে । পরবাসে সাদা ভাত, ৭ গরুর মাংস আর ডালের এই ভোজ আয়োজন যে কতটা উৎসবমুখর হয়ে উঠতে পারে তারও প্রমাণ মিলল চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী মেজবান আয়োজনে।
স্থানীয় সময় রোববার পূর্ব লন্ডনের মেফেয়ার হলে অনুষ্ঠিত এই আয়োজনে মেজবানি খাবারের পাশাপাশি ছিল মন মাতানো সাংস্কৃতিক আয়োজন। যুক্তরাজ্যে বসবাসরত বৃহত্তর চট্টগ্রামবাসীর প্রতিনিধিত্বকারী ও বাংলাদেশীদের অন্যতম শীর্ষ সংগঠন ‘গ্রেটার চট্টগ্রাম অ্যাসোসিয়েশন ইউকে’ (জিসিএ) পঞ্চমবারের মতো বিশাল এই আয়োজন করে। এই সংগঠনটি প্রথম বিলাতে তথা প্রবাসে মেজবানকে বিশাল আংগিকে ও ভিন্ন আমেজে পরিচিত করেছে।
বাংলাদেশের সাহিত্য, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের অনেক কিছুই ঠাঁই করে নিয়েছে সুদূর যুক্তরাজ্যে। পিঠা উৎসব, বৈশাখী মেলা কিংবা বাঙালির বিয়ের মতো জমজমাট আয়োজন এখন নিয়মিত দেখা যায় সেখানে। তিন হাজার মানুষ মেজবানে অংশ নেয় এবারের মেজবানে। এদিন দুপুর ১২টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত চলে এই মিলন মেলা।
সংগঠনের ট্রেজারার মাসুদুর রহমানের উপস্হাপনায় অনুষ্ঠান শুরু হয় কোরান তেলাওয়াত, গীতা ও ত্রিপিটক পাঠের মাধ্যমে। অনুষ্ঠানের আলোচনা পর্বটি সঞ্চালনা করেন সংগঠনের বর্তমান কার্যকরী কমিচির প্রেসিডেন্ট আখতারুল আলম এবং সেক্রেটারি ওসমান মাহমুদ ফয়সাল। বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশে সাবেক ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরী, ১০৪ বছর বয়স্ক চ্যারিটি ফান্ড রেইজার দবিরুল ইসলাম চৌধুরী, সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও ট্রাষ্টি চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার মনোয়ার হোসেন, চ্যানেল এস'র ফাউন্ডার মাহি জলিল, বাংলাদেশ হাইকমিশনের পক্ষে ইসমাঈল হোসেন, সাবেক সভাপতি ইসহাক চৌধুরী, ব্যবসায়ী নাজিম উদ্দিন, সিপ্লাসটিভির আলমগীর অপু, কাউন্সিলর সৈয়দ ফিরোজ গনী, আই অন টিভির পরিচালক আতাউল্লাহ ফারুক, সাবেক সাধারণ সম্পাদক শওকত মাহমুদ টিপু, সলিসিটর জাগির আলম প্রমুখ।
এ সময় মঞ্চে নানা পর্বের সঞ্চালনায় ছিলেন মোহাম্মদ কায়সার, মাসুদুর রহমান, শহিদুল ইসলাম সাগর, নূরুন্নবী আলী, শহিদুল ইসলাম সাগর, ডা. মিফতাহুল জান্নাত। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে সার্বিক ব্যবস্হাপনায় ছিলেন মীর রাশেদ আহমেদ, শওকত মাহমুদ টিপু, আরশাদ মালেক, আলী রেজা, রাজ্জাকুল হায়দার বাপ্পী, হাসান আনোয়ার, ব্যারিস্টার শওকত আলী, টিংকু চৌধুরী, অনুপম সাহা, আবু রায়হান শাকিল, লুতফুন নাহার লীনা, আসমা আলম, ফয়সাল আনোয়ার, শেখ নাছের, ইব্রাহিম জাহান, মোরশেদ, মোহাম্মদ ইসলাম, ফসি উদ্দিন প্রমুখ।
আয়োজনটি চট্টগ্রামবাসীর হলেও যুক্তরাজ্যে বসবাসরত অন্য অঞ্চলের বাংলাদেশিরাও এতে অংশ নেয়। লন্ডনের আশপাশের শহরসহ স্কটল্যান্ড, ম্যানচেস্টার, বার্মিংহামের মতো দূরের শহরগুলো থেকেও চট্টগ্রামবাসী অনেকে ছুটে আসেন ঐতিহ্যবাহী এ আয়োজনে যোগ দিতে। আয়োজকরা বলেন, এবারের মেজবানে কয়েক হাজার লোকের জন্য খাবারের আয়োজন করা হয়। মেফেয়ার হলে খাবার পরিবেশনের কক্ষের পেছনের দরজায় ভোজনপ্রেমীদের দীর্ঘ লাইন। এক ব্যাচ খেয়ে সামনের দরজা দিয়ে বের হচ্ছেন। আর পেছন দরজা দিয়ে ঢুকছেন আরেক ব্যাচ। মেজবানের চিরাচরিত টেবিল দখলের দৃশ্যও এখানে বাদ যায়নি। পরিবার-পরিজন নিয়ে একসঙ্গে বসতে টেবিল দখলের প্রচেষ্টাও ছিল লক্ষণীয়।
দিনব্যাপী মেজবানি খাবারের পাশাপাশি চলে চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাসী আঞ্চলিক গান, নাচ ও নানা ধরনের সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করেন জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী ফকির শাহাবুদ্দিন , হিমাংশু গোস্বামী , পাঞ্জাবিওয়ালা খ্যাত শিরিন জাওয়াত , আতিক হাসান , লাবণী বড়ুয়া , এম এ মোস্তফা , তাহমিনা শিপু , আই অন বাংলা স্কুল , পার্পল নাইট ব্যান্ডের জাওয়াদ, রুবেল, জয়, নাবিল , আয়ুস সাহাসহ স্থানীয় শিল্পীবরা। কৌতুক পরিবেশন করেন মিরাকাল কমেডিয়ান আরমন ।
বাংলাদেশে নিযুক্ত সাবেক ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরী বলেন, মেজবানের খাবার বিশ্বের সেরা খাবার। তিনি চট্টগ্রামের গুরুত্ব তুলে ধরেন।
সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার মনোয়ার হোসেন বলেন, যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন শহরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা চট্টগ্রামবাসীকে ঐক্যবদ্ধ করে নিজেদের মধ্যে পারস্পরিক যোগযোগ বৃদ্ধির জন্যই এই মেজবানের আয়োজন। চট্টগ্রামবাসীসহ অন্যান্য জেলার লোকদের মধ্যে এবারের মেজবান যে সাড়া ফেলেছে, তাতে ভিড় সামলাতে হয়তো ভবিষ্যতে খোলা কোনো মাঠে এই আয়োজন করতে হবে।