চার বছরের বেশি সময় ধরে আড়ালে আছেন তিনবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত ঢাকাই সিনেমার অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেত্রী সাদিকা পারভীন পপি। একসময় শোনা যায়, বিয়ে করে সংসারী হয়েছেন এই চিত্রনায়িকা। সম্প্রতি একটি জিডিকে ইস্যু করে আবার আলোচনায় পপি। তখনই জানিয়েছিলেন, বিয়ে-স্বামী-সন্তান নিয়ে আপাতত কিছুই বলবেন না। অবশেষে মুখ খুললেন এই তারকা।
তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বিয়ের খবর মোটেও গোপন করিনি। মা-বাবা, ভাইবোন, পরিবার, আত্মীয়স্বজন, ফিল্মের বন্ধুবান্ধব ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা সবাই আমার বিয়ের খবর জানত। ফিল্মের পপির ব্যাপারে সবার আগ্রহ থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আমারও তো একটা ব্যক্তিগত জীবন আছে। সে জীবনের কতটুকু কী আমি পাবলিকলি জানাব, কতটুকু জানাব না, সেটা একান্তই আমার বিষয়। এ খবর জানাতে আমার কোনো বাধ্যবাধকতাও নেই। তাই আমার কাছে মনে হয়েছে, আমার বিয়ের খবরটা পরিবার ও ফিল্মের কাছের মানুষেরা জানলেই চলবে। রিয়াজ, নিপুণ, ফেরদৌসসহ সিনেমার বন্ধুরা জানত।’
বর আদনান কামালকে নিয়ে পপি বলেন, ‘আমাদের সাত বছরের পরিচয়। পরিচয়ের তিন বছর পর আমাদের বিয়ে হয়। সেই অর্থে আমাদের প্রেমের বিষয়টা ছিল না। আদনানের সঙ্গে আমার মা-বাবাসহ পরিবারের সবার চমৎকার সম্পর্ক ছিল। দুই পরিবারে যাওয়া-আসা ছিল। আমরা সবাই মিলে ঘুরতেও গেছি। পারিবারিক বন্ধু, আমার অসাধারণ একজন শুভাকাঙ্ক্ষী। আমার যেকোনো বিপদে সে ছায়ার মতো পাশে ছিল। আমাকে সুরক্ষিত রেখেছে। আমি ও আদনান কিন্তু কখনো বিয়ের কথা ভাবিনি। তবে চারপাশের বিভীষিকাময় পরিস্থিতি আমাদের বিয়ের সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করেছে।’
কী সেই পরিস্থিতি? তাও জানালেন পপি, ‘‘২০১৯ সালে আমার বাসায় অনেক বড় অঙ্কের টাকা চুরি যায়। থানায় জিডি করলাম। আমাদের রমনা থানায় ডাকা হয়। সেদিন আদনানকেও ডাকি। থানায় গিয়ে দেখলাম, আমার ভাইবোনেরা। সেদিন থানায় গিয়ে জানলাম, আমাকে মেরে ফেলার জন্য খুনি ভাড়া করা হয়েছে। আমাকে থানা থেকে বলা হলো, ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেছি। এরপর জীবন নিয়ে আমি আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। মনে হলো, আমি কারও কাছে নিরাপদ নই। বরাবরই আমি পরিবার অন্তঃপ্রাণ মানুষ। অথচ এই আমার কাছে পরিবারের সবাই অচেনা হয়ে গেল। সম্পত্তি ও টাকাপয়সা নিয়ে জটিলতা শুরু হয়। জটিলতার এই পুরো সময়ে আদনান আমাকে ছায়ার মতো আগলে রেখেছে। কোনো জটিলতাই আমাকে স্পর্শ করতে দেয়নি। আমার হাতটা শক্ত করে ধরে বলেছিল, ‘আমি আছি, নো টেনশন।’
ওই সময়ে এমন একজন বন্ধুকে যদি না পেতাম, আমার জীবনটাই বিপন্ন হয়ে যেত। ২০২০ সালের দিকে আবার জটিলতা শুরু হয়। বাসা থেকে বের হয়ে পড়ি। আদনানের সঙ্গে যোগাযোগ করি। এরপর আমার জায়গাজমির দলিল, ব্যাংকের কাগজপত্র ও প্রয়োজনীয় সব ডকুমেন্ট পুলিশের সহযোগিতায় উদ্ধার করি। আদনানই তখন আমাকে বাঁচিয়েছে। পরিস্থিতির কারণে আমরা বিয়ে করতে বাধ্য হই। ২০২০ সালের নভেম্বরে বাসায় কাজি ডেকে বিয়ে করি। আমার আত্মীয়স্বজন ছিলেন। আত্মীয়দের অনেকের নাম এখন বলব না; কারণ, নাম প্রকাশ পেলে তারা আমার মায়েরও শত্রু হয়ে যাবে। এটা সত্য, বিয়েতে আমার মাকে ডাকিনি। হয়তো এটা বিশ্বাস করবে না কেউ, কিন্তু এটাই সত্য, আমার মা চাইতেন না আমি বিয়ে করে সংসারী হই।’’
পপি আরও বলেন, ‘বিয়ের পর আমি আমার মতো সংসার শুরু করি। আলাদা থাকি, স্বামীর সঙ্গে ধানমন্ডিতে। আমার সংসার বাঁচানোর জন্য আমি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এরপর আমার স্বামী যেভাবে চেয়েছে, সেভাবেই জীবনটাকে গুছিয়ে নিয়েছি। আমি কিন্তু অনেকবার বলেছিও, বিয়ের পর আমি সিনেমা ছেড়ে দেব। আমার স্বামী না চাইলেও সিনেমায় কাজ করব না। ২০২১ সালের ২৯ অক্টোবরে মা হয়েছি। তবে আমি উধাও হইনি। আমার জীবনটা বাঁচাতে কিছুদিন আড়ালে ছিলাম। সামাজিকতা রক্ষার জন্য যা যা করার, সবই করেছি। আমার আত্মীয়স্বজন আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। তাদের নিয়মিত আসা-যাওয়া ছিল আমার বাসায়। আমার আব্বুও দীর্ঘদিন আমার সঙ্গে ছিলেন। তার চিকিৎসার জন্য হাসপাতালেও গিয়েছি। আমার ছোট ভাই দীপুও বেশ কিছুদিন আমার বাসায় ছিল। দীপুর আমার বাসায় থাকার ব্যাপারে আব্বু না করেছিলেন, পরে আব্বুর ভবিষ্যদ্বাণী সত্যি হয়।’
পপির কয়েকটি ছবির কাজ অসম্পূর্ণ ছিল। এসব ছবির ভবিষ্যৎ কী? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটার জন্য আমার পরিচালক ও প্রযোজকদের কাছে আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি। ওই মুহূর্তে আমার কাছে জীবন বাঁচানোটা জরুরি ছিল। আমি আমার কষ্টের কথা তখন কাউকে বলতে পারছিলাম না। কাউকে বলার মতোও পরিস্থিতি ছিল না। মানসম্মানের ভয়ে চুপ ছিলাম। তাই ওই সময় আড়ালে করে বাঁচতে চেয়েছি। একটু নিশ্বাস নেওয়ার চেষ্টা করেছি। এখন যদি ওই পরিচালক ও প্রযোজকেরা ছবির কাজ শেষ করতে চায় তাহলে আমরা আলোচনার ভিত্তিতে একটা সমাধানের পথে আসব। আমার একটা প্রোডাকশন হাউস আছে, ক্যামেরার সামনে আসব কি না, জানি না। তবে নির্মাণের সঙ্গে জড়িত হব।’