প্রতি ৩ মাস পর জেট ফুয়েলের দাম সমন্বয়

, অর্থনীতি

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা |

প্রতি ৩ মাস পর জেট ফুয়েলের (উড়োজাহাজের জ্বালানি) দাম সমন্বয় করতে চায় বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। অন্যান্য কমিশন অপরিবর্তিত থাকবে, এলপি গ্যাসের মতো শুধু আমদানি মূল্য সমন্বয়ের কথা ভাবছে প্রতিষ্ঠানটি।

গণশুনানির পর ২০২১ সালের ১২ এপ্রিল থেকে প্রতিমাসে এলপি গ্যাসের দাম ঘোষণা করে আসছে বিইআরসি। আমদানি নির্ভর এলপি গ্যাসের আন্তর্জাতিক বাজারদর কমবেশি হলে সেই অংশটুকু সমন্বয় করে প্রতিমাসে দর ঘোষণা করে আসছে বিইআরসি। একই ফর্মুলার কথা বিইআরসি চিন্তা করছে বলে জানিয়েছেন চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ।

তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, প্রাথমিকভাবে প্রতি ৩ মাস পর দর সমন্বয় করার বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা চলছে। আগামী ২৩ মার্চ গণশুনানি গ্রহণ করা হবে। সেখানে সকল পক্ষের মতামত নিয়ে তারপর চুড়ান্ত করা হবে।

এলপি গ্যাসের মতো প্রতিমাসে নয় কেনো! এমন প্রশ্নের জবাবে বিইআরসি চেয়ারম্যান বলেন, জেট ফুয়েলের ব্যবহারকারি খুবই সীমিত। সে কারণে প্রাথমিকভাবে ৩ মাস পরপর সমন্বয় করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। পরবর্তীতে পরিস্থিতি বিবেচায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) নিজেরাই এই পণ্যটির আমদানিকারক আবার তারাই দাম নির্ধারণ করে এসেছে। এবারই প্রথম জেট ফুয়েলের দাম নির্ধারণ করতে যাচ্ছে বিইআরসি। অন্তবর্তীকালীন সরকার জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ থেকে গত ১৮ সেপ্টেম্বর জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে জেট ফুয়েলের দাম নির্ধারণের এখতিয়ার বিইআরসির উপর ন্যাস্ত করা হয়। এরপর বিপিসির পক্ষ থেকে দাম সমন্বয়ের আবেদন দেওয়া হয়েছে।

অন্যদিকে জেট ফুয়েল বাজারজাতকারি কোম্পানি পদ্মা অয়েল কোম্পানি তাদের বিতরণ চার্জ বাড়িয়ে দেওয়ার আবেদন করেছে। কোম্পানিটি তার প্রস্তাবে বলেছে, সরবরাহ ও বিপণনে ২.১১ টাকা খরচ হয়। সেখানে বিদ্যমান কাঠানো অনুযায়ী মাত্র ৯৫ পয়সা আদায় হয়।

প্রথমবারের মতো ২৩ মার্চ অুনষ্ঠিত হতে যাওয়া জেট ফুয়েলের গণশুনানিতে অংশ নিতে হলে ১৮ মার্চ তারিখের মধ্যে নাম তালিকাভুক্ত করেতে হবে। এ জন্য বিইআরসির কাছে লিখিতভাবে নাম জমা দিতে হবে।

বিইআরসি চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, যেহেতু আগে থেকে কোন ফর্মূলা নেই, সে কারণে আমরা বিপিসির সঙ্গেও বসেছি, তাদের ফর্মূলা সম্পর্কে ধারণা নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, সিঙ্গাপুর, কুয়ালালামপুর, দুবাই, জেদ্দা ও প্রবাসী অধ্যুষিত দেশগুলোর জেট ফুয়েলের দর যাচাই করা হচ্ছে। বিপিসি কলকাতা, করাচি, দিল্লীর উদাহরণ টেনেছে, প্রবাসী অধ্যুষিত রুটের বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। শুনানির মাধ্যমে বিষয়টি নিস্পত্তি করা হবে।

বিপিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৭৩ লাখ ৪৬ হাজার মে. টন জ্বালানি তেল ব্যবহৃত হয়েছে। এরমধ্যে ডিজেল ৬৭.১৯ শতাংশ, ফার্নেস অয়েল ১১.৯৯ শতাংশ, এরপরেই রয়েছে জেট-এ ওয়ান ৬.৪২ শতাংশ। পেট্রোল ৬.১৯, অকটেন ৫.৩৬, কেরোসিন ১.০৫ অন্যান্য ১.৮০ শতাংশ।

২০০৩ সালে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন আইন পাশের মাধ্যমে নিরপেক্ষ ও আধাবিচারিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিইআরসি গঠিত হয়। গ্যাস ও বিদ্যুতের বিতরণ কোম্পানিগুলোর জবাবদিহিতা এবং ভোক্তার অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গঠিত বিইআরসি মূলত ২০০৮ সালে যাত্রা শুরু করে। আইনে সকল ধরণের জ্বালানির দাম নির্ধারণের এখতিয়ার দেওয়া প্রবিধানমালা ঝুলে থাকায় শুধুমাত্র গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম নির্ধারণ করে আসছিল বিইআরসি। এ পর‌্যন্ত ১৩টি প্রবিধানমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। আর ১২টি প্রবিধানমালা এক যুগেরও বেশি সময় ধরে অনুমোদনের অপেক্ষায় ঝুলে রাখা হয়েছে। অন্তবর্তীকালীন সরকারের আমলারাও বিষয়টি ঝুলে রাখার পথেই হাটছে।

হঠাৎ করেই আইন সংশোধন করে ২০২৩ সালে নির্বাহী আদেশে দাম সমন্বয় (কম/বেশি) করার বিধান যুক্ত করা হয়। তারপর থেকে কার‌্যত বেকার হয়ে পড়েছিল আধাবিচারিক প্রতিষ্ঠানটি। বিইআরসি গণশুনানির মাধ্যমে দাম চুড়ান্ত করায় ইউটিলিটিগুলোর নানা রকম অসঙ্গতি সামনে আসতো। এতে করে তাদের উপর এক ধরণের চাপ তৈরি হয়, দিনে দিনে একটি কালচারে পরিণত হতে যাচ্ছিল। সেই প্রক্রিয়াকে গলাটিপে হত্যা করেছিল আওয়ামী লীগ সরকার। অন্তবর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর নির্বাহী আদেশে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম নির্ধারণের ধারা বাতিল করে দিয়েছে।

নির্বাহী আদেশে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম নির্ধারণের আইন বাতিল করে ২৭ আগস্ট গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। গ্রাহক পর‌্যায়ে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম নির্ধারণের একক ক্ষমতা ফিরে পেয়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। এরপর প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে জেট ফুয়েলের বিষয়টি বিইআরসির উপর ন্যাস্ত করা হয়েছে।

তবে ডিজেল, কেরোসিন, পেট্রোল ও অকটেনের দাম এখনও নির্বাহী আদেশে সমন্বয় অব্যহত রাখায় অনেকেই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর